বিশেষ প্রতিবেদন: উমপুন বাংলার জনজীবনে যে জোরাল ধাক্কা দিয়েছে, তার প্রভাব পথেঘাটে দেখা যাচ্ছে। বিপর্যস্থ জনজীবন, নষ্ট চাষবাস, বন্ধ উৎপাদন। আশ্রয়হীন মানুষের বিবর্ণ ছবি, শোকের আবহ সঙ্গীত টিভি স্ক্রিনে নিরন্তর যাতায়ত করছে। শুধু জনজীবনেই নয়, এই ঘূর্ণীঝড় রাজ্যের প্রশাসনকেও সজোরে ধাক্কা দিয়েছে। বিভ্রান্ত করেছে। উচ্চ মধ্যবিত্তরা পাকা বাড়ি, উঁচু ফ্ল্যাট থেকে নেমে জল ও বিদ্যুতের দাবিতে কলকাতায় রাস্তা অবরোধ করেছে। শহরের দিকে দিকে এই দৃশ্য শেষ কবে দেখেছি মনে পড়ছে না। মহামারী পরিস্থিতিতে কলকাতা পুরসভার (কে এম সি) নির্বাচনের পাশে প্রশ্ন চিহ্ন। তবে আমার বিশ্বাস – নির্বাচনের আঁচ টের পেয়েছে শাসকদল। কলকাতার পুর কমিশনার বদল হয়েছেন। সাদা চোখে দেখতে গেলে, প্রশাসনের সব বদলিই নির্ধারিত সময়ে হয়ে থাকে। তবে দূর্যোগের আবহে 'বড় অফিসারে'র বদল কোনও নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া হয় না।
উমপুনের যাত্রাপথ ভাল করে দেখলেই বুঝতে পারবেন দীঘা থেকে রাজ্যে প্রবেশ করে বাংলাদেশে যাওয়ার আগে কলকাতার উপর দিয়েই সে গতিপথ বানিয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বিশেষ করে সুন্দরবন, সাগরে ভয়ানক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করেছিল রাজ্য সরকার। বাস্তবে তা-ই হয়েছে। কিন্তু শহর কলকাতাতেও যে এই কাণ্ড ঘটতে পারে তা অনুমান করতে পারেনি রাজ্য প্রশাসন। কারণ পূর্ব অভিজ্ঞতা এতটা ভয়াবহ ছিল না। আয়লা, ফণী, বুলবুলের সময়েও এই রকম বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়নি কলকাতাকে। এক্ষেত্রে পুরনো 'সাজেসন' মেলেনি। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর ভাষায় বলছি, কমোন প্রশ্নপত্র ছিল, কিন্তু এসেছে একটু ঘুরিয়ে।
উমপুনে এভাবে তছনছ হয়ে যাবে কলকাতা – তা আন্দাজ করতেই পারেনি রাজ্য প্রশাসন, পুলিশ, কেএমসি। শুক্রবার বিকেলেই রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম (কে এম সি-র প্রশাসকও) জানিয়ে দেন, কলকাতায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরতে এক সপ্তাহ সময় লেগে যেতে পারে। কলকাতাকে তিনি যতটা চেনেন, সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বলেছেন। শহর জুড়ে অন্তত সাড়ে পাঁচ হাজার গাছ পড়ে যাবে, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বিদ্যুৎ সংযোগ ও টেলিযোগাযোগ, ভেঙে পড়বে ইন্টারনেট পরিষেবা – মহানগর একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে যাবে – এমন আন্দাজ করতে পারেনি প্রশাসন। ঝড়ের পাঁচদিন পরেও স্বাভাবিক হতে পারেনি কলকাতা। ববি হাকিম বিন্দুমাত্র ভুল বলেননি।
ইলেক্ট্রিক তার আর বিলবোর্ডের শহর কলকাতা। ভেবে দেখুনতো, মাথা তুললে কাল ধুলোমাখা তারের জাল, ইলেক্ট্রিক পোস্ট, বিলবোর্ড আর দু-একটা উঁচু বাড়ি ছাড়া আপনি আর কী দেখতে পান …? ঝড়ে গাছ পড়লে তার থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হবে, তা কি বলার অপেক্ষা রাখে। টেলিফোন আর লাম্প পোস্টও উপড়ে গিয়েছে। এরকম কিছু প্রতিটি ঝড়েই অল্পবিস্তর হয়। উমপুন যে ব্যাপকতায় সারা কলকাতাজুড়ে নজিরবিহীন তাণ্ডব চালিয়েছে, তা ভালো ছাত্রছাত্রীর মত অনুমান করতে পারেনি প্রশাসন। প্রশ্নপত্রে উমপুন ঝড় যদি 'কমন' হয়, তার 'নজিরবিহীন তাণ্ডব' ছিল এক চমক। প্রশাসন তৈরি ছিল না।