কলকাতা: বিজেপির নতুন রাজ্য কমিটিতে 'তৃণমূল থেকে আসা 'নেতাদের চেয়ার টেনে নিলেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। উদ্দেশ্য, সাধারণ সম্পাদকের পদগুলি হতে হবে 'তৃণমূল-অতীত' মুক্ত। বিশুদ্ধ বিজেপি। এই কাজে অনেকটাই সফল দিলীপ-সুব্রত।
সোমবার রাজ্য পার্টির পদাধিকারী এবং বিভিন্ন মোর্চার সভাপতিদের নামের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। পার্টি সূত্রে খবর, এই তালিকায় কিছুটা হতাশ মুকুল রায় শিবির। কারণ, রাজ্য পার্টির শক্তিশালী সাধারণ সম্পাদক পদগুলির কেউই ওই শিবিরের বলে পরিচিত নন। রাজ্যের পাঁচ সাধারণ সম্পাদকের কেউ অতীতে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এমন হোক চাননি দিলীপ। বলতে গেলে, দিলীপের প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদকের তালিকাই হুবহু মেনে নিয়েছে কেন্দ্রীয় পার্টি। ব্যাতিক্রম শুধু একটি ক্ষেত্রে। দিলীপ চাননি সাধারণ সম্পাদকের তালিকা থেকে অনিন্দ্য (রাজু) বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বাদ পড়ুক। দিলীপের অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাদ পড়ে রাজুর নাম। সাধারণ সম্পাদকের নতুন তালিকায় লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নাম দেখে অনেকে অবাক হয়েছেন। লকেট মহিলা মোর্চার সভানেত্রীর পদ ছাড়তে চাননি। সেক্ষেত্রে, একমাত্র মহিলা সাধারণ সম্পাদক হলেন লকেট, আগে যেমন ছিলেন দেবশ্রী চৌধুরী। দেবশ্রী মন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর জায়গা খালিই ছিল।
পার্টির নতুন দুই সাধারণ সম্পাদক হিসাবে সোমবার পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো এবং হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নাম প্রকাশিত হওয়ার পাশাপাশি এটাও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে পাঁচ সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে মুখ্য ভূমিকায় দেখা যাবে সায়ন্তন বসুকে। সায়ন্তন টিভিতে পরিচিত মুখ এবং দিলীপ ঘোষ অনুগামী। সঞ্জয় সিং এবং রথীন্দ্রনাথ বসু আগে থেকেই এই তালিকায় রয়েছেন। বিগত তালিকায় ছিলেন রাজ্য বিজেপির অন্যতম সিনিয়ার নেতা প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়। বলা যায় তিনিই ছিলেন, পাঁচ সাধারণ সম্পাদকের প্রধান মুখ। তাঁকে এই তালিকায় না দেখে অনেকেই আশ্চর্য হয়েছেন। পার্টি আপাতত তাকে সহ সভাপতি করেছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, বিজেপির সংবিধান অনুযায়ী রাজ্য সভাপতি সর্বময় কর্তা। সহ সভাপতির পদগুলি অনেক ক্ষেত্রেই অলংকারিক। অনেকেই বলছেন, জঙ্গলমহলকে বাড়তি গুরুত্ব দিতেই জ্যোতির্ময়কে সাধারণ সম্পাদক পদে টানা হল। সেক্ষেত্রে সিনিয়ার নেতা হিসেবে জায়গা ছেড়েছেন প্রতাপ।
সম্পাদকের পদে মুকুল শিবিরের সব্যসাচী দত্ত'র নাম দেখে অনেকেই অবাক। যেমন অনেকেই অবাক হয়েছেন অর্জুন সিং'এর নাম সহ সভাপতির তালিকায় দেখে। পার্টির একটি বড় অংশ আশা করেছিলেন, এদের দুজনের মধ্যে অন্তত একজন কেউ সাধারণ সম্পাদকের তালিকায় থাকবেন। পার্টির অন্দরের খবর, এই দুজনের সঙ্গে দিলীপ ঘোষের সম্পর্ক ভাল হলেও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে কেউ উন্নীত হন, তা চায়নি দিলীপ-সুব্রত শিবির। দিলীপ নিজেই জানুয়ারিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় পার্টি দিলীপ-সুব্রত'র মতামতকেই গুরুত্ব দিয়েছে।
কিন্তু, মুকুলের জন্য কী কিছুই নেই এই তালিকায়। বিতর্ক সেখানেও বেঁধেছে। পার্টির অন্য এক অংশের মতে, যুব মোর্চার সভাপতি সৌমিত্র খাঁ, মহিলা মোর্চার সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল, তফসিলি জাতি (এস সি) মোর্চার সভাপতি করা হয়েছে দুলাল বর'কে। অগ্নিমিত্রা ছাড়া বাকি সকলেরই রাজনৈতিক-অতীত রয়েছে। এক সময়ে তৃণমূলের সাংসদ (এখন বিজেপির) সৌমিত্র এবং কংগ্রেসের বিধায়ক দুলাল – সকলেই মুকুল রায়ের প্রস্তাবিত। তফসিলি উপজাতি (এস টি) মোর্চার সভাপতি করা হয়েছে খগেন মুর্মুকে। খগেন বর্তমানে মালদা উত্তরের সাংসদ। এক সময় মালদার হবিবপুরের সিপিএম বিধায়ক খগেনকে বিজেপিতে আনেন মুকুলই। আবার, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা ঘনিষ্ট রিতেশ তিওয়ারিও সহ সভাপতির তালিকায় রয়েছেন।
সবকিছু ছাপিয়ে ৬ নম্বর মুরলিধর সেন লেনের জোর বিতর্ক, কিন্তু, কয়েকজন মাত্র বাদ দিয়ে ২০২১ এর যে টিম তৈরি হয়েছে, তাতে দিলীপ ঘোষ-সুব্রত চট্টোপাধ্যায়দেরই প্রাধান্য রয়েছে। সম্পাদকের তালিকায় তুষার মুখোপাধ্যায়, তুষার ঘোষ, দীপাঞ্জন গুহ দিলীপ-সুব্রত শিবিরের জয়গান গাইছেন। সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি আলী হোসেনও দিলীপ ঘনিষ্ঠ। মহা গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ সম্পাদকরা তো 'বিশুদ্ধ বিজেপি'।