শাম্মী হুদা: বিজ্ঞানচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জন্মদিন সবে পেরিয়েছে। বোসন কণার একদম শুরুর দিকের গবেষণায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন এই বঙ্গসন্তান। যে দেশ থেকে একদিন সত্যেন্দ্রনাথ বসু, জগদীশ চন্দ্র বসুর মতো বিজ্ঞানীরা বিশ্বকে চমকে দিয়েছেন, আজ সেই দেশই বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীদের আকাল দেখা দিয়েছে। এক সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে বর্তমানে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের তালিকায় ভারতের অবস্থান নগন্য। মোট চার হাজার বিজ্ঞানী এই শ্রেষ্ঠত্বের পদ অলঙ্করণ করছেন যেখানে মাত্র ১০জন ভারতীয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ভারতীয়দের কী বিজ্ঞানচর্চায় অনীহা দেখা দিয়েছে? নাকি বুদ্ধিবৃত্তি ও প্রাজ্ঞতায় তারা পিছিয়ে পড়ছে? এসব আলোচনা বিতর্কিত হলেও এই পরিসংখ্যান যে ভয়াবহ ইঙ্গিত দিচ্ছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
এবার আসি বিজ্ঞানচর্চার পরিসরে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রায় ছটি দশক পেরিয়েছে। বিবিধ দিকে উন্নয়নের নজির গড়েছে দেশ। বিজ্ঞানচর্চায় জোয়ার আনতে দেশেই নামী বিজ্ঞানশিক্ষার কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। সেসব জায়গায় যাঁরা শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হচ্ছেন তাঁরাও খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব, প্রতিবছর সেখান থেকে যাঁরা পাশ করে বেরোচ্ছেন তাঁরাও কিছু না কিছু দক্ষতার প্রমাণ রাখছেন।তবে বিজ্ঞানসাধনায় উল্লেখযোগ্য নজির গড়ার মতো দক্ষতা ভারতীয়দের মধ্যে সেভাবে নজরে পড়ছে না। এনিয়ে দেশের প্রথিতযশা বিজ্ঞানীদের মধ্যে কোনও ক্ষোভ নেই এমন কথা ভুলেও ভাববেন না। তবে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশে ভিন্নতা রয়েছে। আইআইএসসি, আইআইটিএস, টিআইএফআর, জেএনইউ এবং চিআইএসএস-এর মতো নামী দামি বিজ্ঞানচর্চার প্রতিষ্ঠান থেকে যাঁরা প্রতিবছর ডিগ্রি নিয়ে বেরোচ্ছেন তাঁরা কিন্তু বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের তালিকায় জায়গা করে নিতে পারছেন না।
বলা বাহুল্য, যে এক শতাংশ বিজ্ঞানী শেরার শিরোপা জিতে নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কেউই এই নামী প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষালাভ করেননি। এদিকে ওই চার হাজারির তালিকায় থাকা বিজ্ঞানীদের মধ্যে ৮০ শতাংশ মাত্র দশটি দেশের নাগরিক।যদিও তাঁরা ৬০টি দেশের বিষয় ভিত্তিক গবেষণায় উল্লেখযোগ্য নিদর্শন রেখেছেন।একইভাবে বাকি ৭০শতাংশ বিজ্ঞানী পাঁচটি দেশ থেকে এসেছেন। এই চার হাজার বিজ্ঞান তপস্বীর মধ্যে বেশিরভাগই হার্ভার্ডের ছাত্র।এঁরা সংখ্যায় ১৮৬ জন। সেখানে ভারতের অবস্থান নিতান্তই লজ্জা জনক।তবে বিজ্ঞানসাধনায় যথেষ্ট উন্নতি করেছে চিন। দেশের মোট ৪৮২ জন বিজ্ঞানীর কৃতিত্বে এই চার হাজারির তালিকায় তিন নম্বরে রয়েছে চিন। একদম শীর্ষে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এখানকার ২,৬৩৯ জন বিক্ষানী তালিকাভুক্ত হয়েছেন।দ্বিতীয়স্তানে ইউরোপ,সংখ্যাটি ৫৪৬।
এই প্রসঙ্গে জেএনইউ-র তরফে শিক্ষাবিদ দীনেশ মোহন জানিয়েছেন, গত বছর পর্যন্ত ভারতের পাঁচজন বিজ্ঞানী এই সেরার তালিকায় ছিলেন। এই বছর ওই সংস্থা সেরার একক নির্ধারণে নতুন বিভাগ যোগ করায় সংখ্যাটি বেড়ে দশ হয়েছে। পরিমাণ ভুলে ভারতীয়রা যদি বিজ্ঞানের গুণগতমানের দিকে নজর দেয় তাহলেই এই ছবি বদলাতে পারে, নচেৎ নয়। ১৫ বছর আগে এই সেরার তালিকায় চিনের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইতে ছিল ভারতও। তারপর দিন যত গিয়েছে চিন তত বিজ্ঞানচর্চায় উন্নতি সাধন করেছে। তাল মিলিয়ে ভারত নেমে এসেছে নিচের দিকে। এখন বিশ্বের বৈজ্ঞানিকগবেষণায় চিন যেখানে ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ কন্ট্রিবিউট করছে ভারত সেখানে তিন থেকে চার শতাংশ ছুঁতে পেরেছে।তাই ফারাকটা বিস্তর হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাত্র ৫০০০ বিজ্ঞানীর নেটওয়ার্ক রয়েছে এদেশে। এই নেটওয়ার্ককে আরও বাড়াতে হবে।
নতুন বিজ্ঞানীদের যুক্ত করার জন্যে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনায় বসা খুব জরুরি। এই দশজনের মধ্যে রয়েছেন আইআইটি কানপুরের অধ্যাপক অবিনাশ অবিনাশ আগরওয়াল। তিনি বলেছেন, ভারতের মতো দেশে অ্যাপলায়েড সায়েন্স গুরুত্ব পায় না। এখানকার গবেষণার পদ্ধতির বদল আনা প্রয়োজন। পাশাপাশি টাকা দিয়ে প্রচারও রুখতে হবে। এই তালিকায় থাকা দুই ভারতীয় আবার দম্পতি।এঁরা হলেন, ভোপাল এনআইটি-র অলোক ও জ্যোতি মিত্তল। জ্যোতি একমাত্র ভারতীয় মহিলা বিজ্ঞানী যিনি এই সেরার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। আইআইটি মাদ্রাজ থেকে রয়েছেন অধ্যাপক রজনীশ কুমার, ভুবনেশ্বর থেকে সঞ্জীব শাহু, হায়দরাবাদ থেকে রাজীব ভার্সনে ও কোয়েম্বাটোরের ভারতিহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শক্তিভেল রথিনাস্বামী।