নগদ টাকা হাতে দিন, অর্থনীতি প্রাণবায়ু পাবে! অমিতকে প্রেসক্রিপশন অমিতের

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ'র একটি বক্তব্য দিয়েই শুরু করা যাক। সেই বক্তব্য, যেখানে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলছেন, “হিসাব কারনা হায় তো বিকাশ কে হিসাব লে কার আইয়ে মমতাদি। ম্যায় কেহ্যাতা হু … কাল আপ হিসাব লে কার আইয়ে (হিসাব যদি করতেই হয় তবে উন্নয়নের হিসাব নিয়ে আসুন মমতাদি। আমি বলছি … কাল আপনি হিসাব নিয়ে আসুন)।”

কলকাতা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ'র একটি বক্তব্য দিয়েই শুরু করা যাক। সেই বক্তব্য, যেখানে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলছেন, “হিসাব কারনা হায় তো বিকাশ কে হিসাব লে কার আইয়ে মমতাদি। ম্যায় কেহ্যাতা হু … কাল আপ হিসাব লে কার আইয়ে (হিসাব যদি করতেই হয় তবে উন্নয়নের হিসাব নিয়ে আসুন মমতাদি। আমি বলছি … কাল আপনি হিসাব নিয়ে আসুন)।”

কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়ন, দীনেশ ত্রিবেদী এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। ওই সাংবাদিক সম্মেলনে অমিত মিত্রের একটি মন্তব্য লক্ষ্য করার মত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে তিনি 'নকলি মহারাজ' বলেছেন। অমিত বনাম অমিত। কে কী হিসাব দিলেন, কতটা পরিষ্কার হিসাব দিতে পারলেন – দেখে নেওয়া যাক।

ইস্যু যখন পরিযায়ী শ্রমিক :

অমিত শাহ : প্রতি রাজ্য নিজেদের এলাকার পরিযায়ী শ্রমিকদের রক্ষা করেছে। খাদ্য-পানীয় জলের ব্যবস্থা করেছে। ক্যাম্প করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার এই খাতে ১১ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। ৪৩০০ ট্রেন এবং বাসের মাধ্যমে তাঁদের নিজের রাজ্যে পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করেছি। বিহার, উত্তরপ্রদেশ যথাক্রমে ১৫০০ এবং ১৭০০ ট্রেন চালিয়েছে। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গ সব থেকে কম ট্রেন সার্ভিস নিয়েছে, এখন পর্যন্ত ২৩৬টি ট্রেনের মাধ্যমে ৩ লক্ষ শ্রমিককে আমরা পৌঁছে দিতে পেরেছি। আমি সব থেকে আশ্চর্য হয়েছি, মমতা দিদি ওই ট্রেনের নাম দিয়েছেন করোনা এক্সপ্রেস। আমরা বলেছি শ্রমিক ট্রেন বলেছিলাম। ওই শ্রমিকরা নিজেদের মা, বাবা, স্ত্রী, পুত্র কন্যার কাছে ফিরতে চেয়েছেন। ওরা এই অপমান ভুলবে না। তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের 'এক্সিট' হয়ে যাবে।

অমিত মিত্র: পরিযায়ী শ্রমিক থেকে অসংগঠিত শ্রমিক – ভারতের শ্রমজীবি মানুষের কোমর ভেঙে দিয়েছে মোদি সরকার। একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে উনি কীভাবে মিথ্যা ভাষণ দিতে পারলেন? পরিযায়ী শ্রমিক থেকে অসংগঠিত শ্রমিক – নগদ টাকা হাতে দেওয়ার কথা ছিল। আমেরিকা সহ উন্নত দেশগুলি তা-ই করেছে। ওরা কত টাকা হাতে দিয়েছেন? ওদের ২০ লক্ষ কোটি টাকাটা প্যাকেজ কে বাস্তবেই 'বিগ জিরো' বলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোজাসুজি বলুন এত বড় প্যাকেজ, যা আপনার বলেছেন জিডিপির ১০ শতাংশ, সেখানে Fiscal Stimulation কত দিয়েছেন। মাত্র ১ শতাংশ। বাকি ৯ শতাংশ তো আরবিএই থেকে বিভিন্ন ভাবে লোন বা ধার নেওয়ার কথা বলেছেন। যার অর্থ আপনারা পরিযায়ী শ্রমিকদের নগদ হাতে দিতে চাননা। আমাদের দেশে ৫৩ কোটি কর্মীর মধ্যে ৯৩ শতাংশ অসংগঠিত ক্ষেত্রে রয়েছেন। অনেকেই কাজ হারিয়েছেন। তাঁদের ব্যাংক খাতায় তিন মাসের জন্য সাড়ে সাত হাজার টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রধানমন্ত্রীকে শ্রমিকদের ব্যাংক খাতায় ১০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। এতে ২০ লক্ষ কোটি টাকার দরকার ছিল না। দরকার ছিল মাত্র ২ থেকে ৩ লক্ষ কোটি টাকার। এর ফলে মানুষের কেনার চাহিদা বাড়বে, জোগান বাড়বে, বেহাল অর্থনীতি প্রাণবায়ু পাবে। অনেকেই এখন মজা করে বলছেন, মোদি সরকারের ওই প্যাকেজ জিডিপির ০.৯ শতাংশ নাকি ১.১ শতাংশ। এদিকে ব্যাংকগুলি আরবিআইয়ের উপর থেকে ভরসা তুলে নিচ্ছে। তারা যা টাকা নিচ্ছিল, তা ফিরিয়ে দিচ্ছে। এই কেন্দ্রীয় সরকারের উপর তাদের ভরসা নেই। নীতি আয়োগের বৈঠকে দেখলাম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে দেখিনি। ওরা নিশ্চয়ই অর্থনীতি নিয়র কিছু না কিছু বোঝেন। কী বোঝেন জানি না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 − three =