২৪ বছর পর কাটল জট! নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে ভিক্ষুক থেকে শিক্ষক হলেন কেদারেশ্বর

২৪ বছর পর কাটল জট! নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে ভিক্ষুক থেকে শিক্ষক হলেন কেদারেশ্বর

শ্রীকাকুলাম: ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস! যে অধিকারের জন্য লড়তে লড়তে প্রতি নিয়ত ছিন্নভিন্ন হয়েছেন, সমাজের লাঞ্ছনা সহ্য করেছেন, সেই অধিকার মিলল প্রায় আড়াই দশক পর৷ লাল ফিতের ফাঁস কাটতে লেগে গেল ২৪টি বছর। অপেক্ষা আর অনিশ্চয়তার প্রহর গুণতে গুণতে ভাগ্যের শিকে ছিঁড়ল প্রৌ‌‌ঢ়ত্বে এসে৷ 

আরও পড়ুন- বিজেপিও ভোট দেবে! রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী যশবন্ত

৩৩ বছর বয়সে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের পাথাপত্তনমের পেড্ডা সিধি এলাকার বাসিন্দা কেদারেশ্বর রাও। কিন্তু নিয়োগপত্র হাতে পাননি। সরকারি জটিলতায় আটকে গিয়েছিল ভাগ্যের চাকা। পেট চালাতে ভিক্ষার বাটি হাতে নিয়ে দাঁড়াতে হয় তাঁকে৷ কখনও মিলেছে পথচলতি মানুষের সহানুভূতি, কখনও অবজ্ঞা-ঘৃণা৷ অসহ্য মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে করতেই কেটে গিয়েছে বছরের পর বছর। তিন তিল করে সাজানো স্বপ্ন তখন ভেঙে চুরমার৷ মাথা উঁচু করে বাঁচার অধিকারটাও হারিয়ে গিয়েছিল জীবন থেকে। জীবনে যখন শুধুই শূন্যতা, তখন আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের মতো তাঁর হাতে এল সরকারি দফতরের খাম। সেই খাম খুলতেই হতবম্ভ বছর ৫৭-র কেদারেশ্বর।

৩৩ বছর বয়সে যে চাকরির পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন এযে সেই চাকরির নিয়োগপত্র৷ একহাতে ভিক্ষার পাত্র, অন্য হাতে চাকরির নিয়োগপত্র নিয়ে তখন দিশেহারা কেদারেশ্বর৷ বারবার পড়তে থাকেন চিঠিটা। সত্যি দেখছেন তো! নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না তাঁর৷ দু’চোখ বেয়ে তখন অঝোরে ঝরছে আনন্দাশ্রু। আকাশের দিকে তাকিয়ে বারবার চিৎকার করে তাঁর বলতে ইচ্ছা হচ্ছিল ‘ফিরিয়ে দাও আমার হারানো দিন৷ ফিরিয়ে দাও আমার ২৪টা বছর’! 

গ্রামের সাদামাটা জীবন ছিল তাঁর৷ পেট চালাতে ছোটখাটো একটা কাজ করতেন৷ তাতে ঠিক মতো সংসাদ চলত না৷ এর পর মাকে নিয়ে হায়দরাবাদে পাড়ি দেন কেদারেশ্বর। হন্যে হয়ে ঘুরতে থাকেন একটি ভালো কাজের জন্য৷ কিন্তু মনের মতো চাকরি পাওয়াটাও সহজ ছিল না৷ এরই মধ্যে মৃত্যু হয় তাঁর মায়ের৷ একদিকে বেকারত্ব, অন্যদিকে মায়ের মৃত্যু তাঁকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল৷ ঠিক করেন, বিয়ে করবেন না। এভাবে একাই কাটিয়ে দেবেন বাকি জীবনটা। 

দীর্ঘদিন হায়দরাবাদে কাটিয়েছেন তিনি৷ তবে গ্রামের প্রতি টান ছিল বরাবরই প্রখর৷ সেই টানেই আট বছর আগে ফিরে যান পৈতৃক ভিটেতে। কিন্তু ততদিনে বাড়িঘর বলে আর কিছুই নেই। সবটাই দখল হয়ে গিয়েছে। মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়টুকু হারিয় ভবঘুরের মতো দিন কাটছিল কেদারেশ্বরের৷ অভাবের ছাপ তাঁর শরীর জুড়ে। জীর্ণ শীর্ণ কেদারেশ্বরকে দেখার পর আত্মীয়রাও তাঁকে ঠিক মতো চিনতে পারেননি। তাই তাঁদের বাড়িতে ঠাঁইও জোটেনি। 

১৯৮১ সালে পেড্ডা সিধি জেডপি স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছিলেন কেদারেশ্বর৷ ১৯৯২ সালে আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড করেন। ১৯৯৪ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দু’বার শিক্ষক নিয়োগের চাকরির পরীক্ষায় বসেন। কিন্তু সাফল্য পাননি। তবে তিনিও হাল ছাড়ার পাত্র ছিলেন না৷ ১৯৯৮ সালে ফের ওই শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বসেন এবং উত্তীর্ণ হন৷ ইন্টারভিউয়ের বেড়াও টপকে যান অনায়াসে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসেই আইনি জটিলতায় আটকে যায় প্যানেল। সেই জট কাটল ২৪ বছর পর৷ 

কেদারেশ্বরের দু’চোখ জুড়ে ফের ভর করেছে স্বপ্ন৷ ছাত্রছাত্রীজের মাঝে দাঁড়িয়ে শিক্ষক হয়ে ওঠার অপেক্ষায় দিন কাটছে তাঁর৷