বাম বিপর্যয়ে বঙ্গে ধারাবাহিক ভোট বাড়িয়েছে বিজেপি

বাম বিপর্যয়ে বঙ্গে ধারাবাহিক ভোট বাড়িয়েছে বিজেপি

ad6ecb58b0a83538a156736ecbe30d51

দেবময় ঘোষ:  পশ্চিমবঙ্গে বাম বিচ্যুতির ধারাবাহিক সংখ্যাতত্ব পর্যালোচনা করলে সমান্তরাল ভাবেই একটি বিকল্প চিত্র উঠে আসবে। আজব এ সংখ্যা। কখনও মঙ্গলধ্বনি, কখনও বিপদঘন্টা। বাম বিপর্যয়ে কিভাবে ভোট বাড়িয়েছে বিজেপি, তা-ই উঠে এসেছে এই সংখ্যাতত্ত্বে।

বাংলার বাম শাসনের ইতিহাসকে অনেকে ৩৪ বছর হলেই দাড়ি দিতে চান। কিন্তু, আমার কাছে তা সাতটি মজবুত বামফ্রন্ট সরকার। পাঁচটির মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। শেষ দুটির মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মনে পড়ে, ২০১১ সালে একটি বিকেলে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু আলিমুদ্দিন প্রেস কনফারেন্স করছেন। সবে বিধানসভা নির্বাচনে শেষ হয়েছে। তবে, সর্বভারতীয় 'মিডিয়া'য় ইতিমধ্যেই 'বাম বিদায়' হয়ে গিয়েছে। ঐতিসাহিক মুহূর্তের দিকে তাকিয়ে আছে কলকাতার সংবাদমাধ্যমগুলিও। চারিদিকে যেন এক আশ্চর্য নিস্তব্ধতা। ভোটযন্ত্র খুললেই ঝড় উঠবে, সহজ অনুমেয়। বিমানবাবু বললেন, “অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার হচ্ছেই …। ” ২০১১ সালের ২০ ভোটযন্ত্র ঝড় তুলেছিল। অষ্ঠম বামফ্রন্ট সরকারের জন্ম হয়নি। কিন্তু সেই সময় থেকেই যে ধারাবাহিক সংখ্যাতত্ত্বের জন্ম হল, তা যেন এই বঙ্গে ক্ষয়িষ্ণু বাম শক্তির 'ইলেক্ট্রিট্র কার্ডিয়াগ্রাম রিপোর্ট' হয়ে থেকে গিয়েছে।

সংখ্যাতত্ব বলছে, ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি রাজ্যে ৬.১৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। ২০০৯ একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। বামদুর্গের মহাপতনের বিপদ ঘন্টা শোনা গিয়েছে। ঠিক এক বছর আগেই (২০০৮) সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে একাধিক জেলা পরিষদ দখল করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১১ তে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে মমতার রাজকীয় পদার্পনের মাঝেও অনেকে একটি তথ্য ভুলে যান – ওই পালাবদলের নির্বাচনেও ১০.০২ শতাংশ ভোটে পেয়েছিল বিজেপি। সেই সময় বিজেপির ভোট বৃদ্ধির কারণ হিসাবে তৃণমূলের বৃদ্ধিকেই দায়ী করে বামেরা।২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ১৭.০২ শতাংশ ভোট পায় বিজেপি।

২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে দুটি আসন রাজ্য থেকে পায় বিজেপি। অন্যদিকে, সারা দেশে প্রবল 'মোদী হওয়ায়' রাজ্যে বিজেপির ভোট বাড়লেও তৃণমূল ৩৪ আসন রাজ্যে দখল করে নিয়েছিল। কংগ্রেসের ৪টি এবং বামফ্রন্ট ২ টি আসন পায়। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় একটি বিকল্প শক্তি হিসাবে উঠে আসে বিজেপি। এই প্রথম রাজ্যের বিধানসভায় বিজেপি ৩ বিধায়ক পাঠাতে সক্ষম হয়। কিন্তু সংখ্যাতত্ব বলছে, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকে শতাংশের বিচারে ভোট কমে গিয়েছে বিজেপির। বিজেপি পায় ১২.২৫ শতাংশ।

২০১৬ সালে বিজেপির ভোট বাড়েনি কারণ পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট-কংগ্রেস আসন সমঝোতা করতে পেরেছিল। এই সমঝোতায় রাজনৈতিক লাভ হয়নি বামফ্রন্টের। কিন্তু, মানুষ তৃণমূলের বিরুধ্যে ভোট দেওয়ার একটি বিকল্প পথ পেয়েছিল। এই তথ্য অস্বীকার করার জায়গা নেই।

সংখ্যাতত্ত্ব বলছে, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট ২৫.৬৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। ফ্রন্টের প্রধান শরিক সিপিএম পেয়েছিল ১৯.৭৫ শতাংশ ভোট। সেই ভোট ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে নেমে প্রায় ১৪-১৫ শতাংশে এসে দাঁড়ায়। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা গিয়েছে বামফ্রন্ট ৭.২৫ শতাংশ ভোটে দৌড় শেষ করেছে। জোটেনি একটিও লোকসভা আসন। অন্যদিকে, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছে ১৮টি আসন দখল করেছে বিজেপি। বামপন্থী, মমতা বিরোধী মানুষ যে বিজেপিকে পছন্দ কপড়ছে, তা বোঝার জন্য ভাল ছাত্র হওয়ার প্রয়োজন নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *