কলকাতা: এন আর সি ভোলেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়ে দিলেন ২১ শে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে শেষবারের মত ২১ শে জুলাইয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতার 'এন আর সি স্মৃতিচারণ' বিজেপিকে একপ্রকার স্পষ্ট রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। মেরুকরণের রাজনৈতিক লড়াই লড়তে তিনিও তৈরি। একথা মনে রাখা প্রয়োজন, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ভোট যে ধর্মীয় মেরুকরণ বিভক্ত হয়েছে তা নতুন কথা নয়।
প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক সেই কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। এন আর সি – সেই মেরুকরণের মূল ফ্যাক্টর – তা রাজনৈতিক মহলের অজানা নয়। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং এবং বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (সেই সময় বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি) এই বাংলায় ব্যক্তিগত ভাবে ১৬-১৭ টি করে সভা করেছিলেন। উত্তর থেকে দক্ষিণ বঙ্গ – প্রতিটি সভায় তাঁরা এন আর সি এবং নাগরিকত্ব বিলের (তখনও তা আইন হিসাবে পাশ হয়নি) কথা বলেছেন। আগামী দিনে এই দুই-ই যে বাংলার প্রধান রাজনৈতিক ইস্যু তা বারবার স্পষ্ট করেছেন। সেক্ষেত্রে,এন আর সি – নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে এবং বিপক্ষে – পশ্চিমবঙ্গে এইদুই স্পষ্ট রাজনৈতিক মতামত ২০১৯ সালেই দেখা গিয়েছিল। সেই অঙ্ক বলছে মমতা ১৮টি আসনে হেরে গিয়েছেন তবে ভোটে হারেননি – ৪৩ শতাংশ ভোট তাঁর দিকে ছিল। বিজেপি ৪০ শতাংশ ভোট তাঁকে অবশ্য চিন্তায় রেখেছিল।
কিন্তু, তা ছিল কোভিড এবং আমফান পূর্ববর্তী সময়। বাঙলার রাজনীতিতে কোভিড এবং আমফান বড় ভূমিকা গ্রহণ করেছে। শাসক দলের বিরুদ্ধে বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। যদিও অতীতে নারদা বা সারদা কেলেঙ্কারির মত দূর্নীতি রাজনৈতিক ভাবে তৃণমূলকে কোণঠাসা করলেও ভোটযন্ত্রে তার শূন্য প্রভাব পড়েছে। তা নিয়ে মমতা চিন্তিত নয়। কিন্তু, মেরুকরণের চাল মমতা ২০১৯ সালে বুঝে উঠতে পারেনি। সেক্ষেত্রে, মেরুকরণকেই অস্বীকার করার কথা ভাবতে পারবেন না মমতা। কারণ তাতে আখেরে তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষতি।
লোকসভা নির্বাচনের মুখেই রাজ্যের ভোটারদের জাতীয় নাগরিকপঞ্জীকরণ বা ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস (NRC) নিয়ে বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস বিভিন্ন রাজনৈতিক বার্তা দিয়েছে৷ লোকসভা নির্বাচন শেষ হয়ে গিয়েছে। রাজ্যে ১৮টি আসন পেয়ে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে বিজেপি৷ লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ বলে এসেছেন – পশ্চিমবঙ্গে সব থেকে বড় রাজনৈতিক ইস্যু NRC৷ কারণ, ২০২১ সালে বিজেপি ক্ষমতায় এলে অসমের মতো এরাজ্যেও NRC জারি করা হবে৷ বিজেপি কিছু নেতা-মন্ত্রীরাও পশ্চিমবঙ্গে NRC এর কথা জানিয়েছেন। অন্য দিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়েছেন, “NRC হতে দেব না।” বিষয়টি বিজেপি এবং তৃনমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক তরজার দিকেই এগোচ্ছে।