নয়াদিল্লি: প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে চলে আসা এক অধিকারের মূলে সজোরে কুঠারাঘাত করেছে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট৷ ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে গর্ভপাতের অধিকার৷ মার্কিন শীর্ষ আদালতের এই সিদ্ধান্ত ‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও ভুল’ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন৷ শুধু তাই নয়, তিনি উদ্বিগ্ন মহিলাদের স্বাস্থ্য নিয়ে৷ সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্ত কট্টর চিন্তার প্রতিফলন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি৷
আরও পড়ুন- দুর্ঘটনার কবলে ONGC হেলিকপ্টার, আরব সাগরে হল জরুরি অবতরণ
গত পাঁচ বছরে চারটি দেশ- আয়ারল্যান্ড (২০১৮), আর্জেন্টিনা (২০২০), মেক্সিকো (২০২১) এবং কলম্বিয়া (২০২২) গর্ভপাত আইনকে অনেকটাই শিথিল করেছে। কিন্তু সেই স্রোতের বিপরীতে হেঁটে গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করল আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট৷ এই নির্দেশে নাগরিকদের অত্যন্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের অধিকারকে শুধু নির্বাসিত করা হয়৷ জরায়ু যাঁর, রইল না তাঁরই অধিকার৷ কিন্তু ভারতে গর্ভপাতের আইন ঠিক কেমন?
নির্দিষ্ট শর্তে ভারতে কিন্তু গর্ভপাতের অধিকার রয়েছে৷ মেডিকেল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি অ্যাক্ট, ১৯৭১ নির্দিষ্ট শর্তে আইনি গর্ভপাতের অনুমতি দেয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের মতে, এই আইনে ভারতে গর্ভপাত বৈধ, তবে যদি তা ২০ সপ্তাহের (প্রায় ৫ মাস) মধ্যে হয়ে থাকে৷ সেই সঙ্গে একজন চিকিৎসকের অনুমোদন এবং একজন মেডিক্যাল প্রফেশনাল দ্বারা সঞ্চালিত স্বীকৃত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান থেকে হতে হবে।
একজন মহিলা গর্ভাবস্থার ঠিক কোন পর্যায়ে রয়েছে, তার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয় গর্ভপাতের নিয়ম৷ যেমন- ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত একজন চিকিৎসকের পরামর্শের ভিত্তিতেই গর্ভপাত করা যেতে পারে। যদি অন্তঃসত্ত্বা মহিলার গর্ভধারণের সময় ১২ সপ্তাহের বেশি এবং ২০ সপ্তাহের কম হয়, তাহলে দু’জন চিকিৎসকের মতামত প্রয়োজন।
আবার ২৪ সপ্তাহ (প্রায় ছয় মাস)পর গর্ভপাত করানোর ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য নির্মিত মেডিকেল বোর্ড৷ তাঁরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেবে ভ্রূণের অস্বাভাবিকতার কারণে এই পর্যায়ে গর্ভপাত করানো উচিত কিনা।
২০২০ সালে ভারতে মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি (সংশোধন) বিল পাশ করা হয়৷ এই সংশোধনের মাধ্যমে গর্ভপাতের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়৷ সেখানে বলা হয়েছে, যদি কোনও ভ্রূণের অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে বা ধর্ষণের ফলে নির্যাতিতা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন তাহলে ২০ সপ্তাহের পরেও গর্ভপাত করানো যাবে৷ আইন সংশোধনের মাধ্যমে এই বিশেষ ক্ষেত্রে ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷
আমেরিকায় গর্ভপাত নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷ কারণ সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তে এক মহিলার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাঁর জরায়ুর অধিকার৷ গর্ভপাতের পক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ার শেয়ার করা হয়েছে একের পর এক পোস্ট৷ এরই মধ্যে নজর কেড়েছে অ্যামি মোরের একটি লেখা৷ যিনি নিজের একটোপিক প্র্যাগনেন্সির অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন সকলের সঙ্গে৷ বুঝিয়েছেন কিছু ক্ষেত্রে গর্ভপাত কতটা জরুরি৷ জানিয়েছেন গর্ভপাতের সুযোগ না থাকলে হয়তো তাঁর জীবনটাই ফুরিয়ে যেত৷
সোমবার শেয়ার করা ওই পোস্টে মোরে জানিয়েছেন, তাঁর শরীরে নিষিক্ত ডিম্বাণু বৃদ্ধি পাচ্ছিল জরায়ুর বাইরে৷ এই অবস্থায় সন্তান জন্ম দিতে গেলে মারাত্মকভাবে তাঁর জীবনের ঝুঁকি হয়ে যেত৷ দুটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টে মোরে জানিয়েছেন, তিনি তিনবার একটোপিক গর্ভধারণ করেন এবং এর মধ্যে একটি টুইন-টু-টুইন ট্রান্সফিউশন সিন্ড্রোম৷ এই পরিস্থিতি থেকে শুধুমাত্র গর্ভপাতের অধিকারই তাঁকে বাঁচাতে সাহায্য করেছিল৷ তাঁর এই পোস্টে বয়ে গিয়েছে কমেন্টের ঝড়৷ তাঁর লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছেন নেটিজেনরা৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>