অন্যায়-আলয়ে ঈশ্বর থাকেন না, মসজিদেও ছিলেন না, মন্দিরের থাকবেন না

অন্যায়-আলয়ে ঈশ্বর থাকেন না, মসজিদেও ছিলেন না, মন্দিরের থাকবেন না

দেবময় ঘোষ: রাম কী করতেন? এই প্রশ্ন হয়ত অপ্রসঙ্গিক। ৫ অগাস্ট তাঁর জন্মভূমির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। আপন ঘরে প্রবেশ করেছেন  মর্যাদা পুরুষোত্তোম শ্রীরাম। সমুল্লাস, আনন্দস্রোত যেন মহাপ্লাবন হয়ে বাহিত। মাথা উঁচু করে যে গৃহ ত্যাগ করেছিলেন তিনি, আজ শত শত বছর পরে অযোধ্যায় সেই গৃহে তাঁর প্রবেশ সম্পন্ন। আনন্দস্রোতের মহাপ্লাবন স্বাভাবিক। তবে, স্রোতে ভাসমান প্রশ্ন কী কাঁটার মত বিঁধছে না? পিতার সম্মান রক্ষার্থে ভ্রাতা লক্ষ্মণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপ্রাসাদ ছেড়ে যিনি সস্ত্রীক পাড়ি দিয়েছিলেন বনবাসের পথে, সে ভগবানই তো মর্যাদা পুরুষোত্তোম শ্রীরাম।

যাঁর কাছে বৈভবের কোনও মোহ নেই তিনিই তো পিতার মুখ নিশৃত বাণীকে মর্যাদা দিতে বনবাসের পথে যেতে দ্বিধা বোধ করেননি। সে রাজার মন কী সায় দিত এক গৃহ ভেঙে তাঁর নিজ গৃহ নির্মাণ কার্যে? হ্যা, মেনে নিতেই হবে মহামান্য আদালতের রায়। শত শত বছর আগে, এ জমি তো তাঁরই ছিল। কোনও এক অনুপ্রবেশকারী, হিংস্র সম্রাট তাঁর আলয় ভেঙে মসজিদ বানিয়েছিলেন। অন্যায়। ঘোরতর অন্যায়। কিন্তু মসজিদ কী শুধু একটি ফাঁকার বাড়ি? তা কী ঈশ্বরের ঘর নয়?

বিরানব্বই সালে সে ঈশ্বরের ঘর ভাঙা হয়েছিল, চোখের সামনে দেখেছে সারা দেশ, দুনিয়া। যারা চোখের সামনে দেখেননি, তারা দেখেছিলেন টিভির বাক্সে।  দেখেননি? তা অন্যায় ছিল না? পাপ কাজ শুধু একা ওই 'মুঘল-বিধর্মী' সম্রাট করে গিয়েছিলেন? যারা ওইদিন (৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২) অযোধ্যায় ঈশ্বরের ঘর ভেঙেছিলেন, তারা দোষী নন? সময়ের সঙ্গে মানুষের চারিত্রিক পরিবর্তন হয়। মানবজাতি কয়েকশো বছর পর উন্নয়নের পথেই গিয়েছে বলে মনে করি। ত্যাগের আদর্শ শিখিয়েছিলেন শ্রীরাম। যারা ভাঙলেন, ওই জায়গায় ফের গড়লেন, তারা কোনও এক হিংস্র মুঘলের বানানো মসজিদ ভেঙে প্রতিহিংসার পরিচয় দিলেন।

যাঁরা দাবি করছেন, ৫ অগাস্ট শ্রীরাম জন্মভূমির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে ইতিহাস রচনা করেছেন, তারা ভুলে গিয়েছেন যে বিরানব্বই সালে নিজেদের অজান্তেই কোনও এক ইতিহাসকে তারা প্রায় মুছে দিয়েছিলেন। যা এখন প্রায় অবলুপ্ত। তা হল, মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরির  ইতিহাস। মুঘল সম্রাট বাবরের হাতে ভারতীয় সৌধ ধ্বসের ঘৃণিত ইতিহাস। মন্দির ওখানেই তৈরি হবে। বাবরের পাপও মুছে যাবে।  অন্যায়-আলয়ে  ঈশ্বর থাকেন কি না জানি না। সে মসজিদে  ঈশ্বর ছিলেন কি না তা-ও জানা নেই, এ মন্দিরেও ঈশ্বর থাকবেন, তা আত্নবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারছি না। মন্দিরে থাকুন বা না থাকুন, মর্যাদা পুরুষোত্তোম শ্রীরাম সর্বদা থাকেন ভক্তের হৃদয়ে। ডান-বাম-মধ্য, যারা রাজনীতি করেন, তাঁদের হৃদয়ে থাকে ই-ভি-এম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × two =