তপন মল্লিক চৌধুরী: আগামী ১৪ অগাস্ট থেকে রাজস্থান বিধানসভা অধিবেশন শুরু হবে। সেখানে অশোক গহলৌত সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে আস্থা ভোট হওয়ার কথা। তার আগে কংগ্রেসে ফিরলেন সচিন পাইলট। তাঁর ‘ঘর ওয়াপসি’-তে রাজস্থানের রাজনৈতিক সংকট মিটবে বলেই মনে করা যায়।
রাজস্থানে জুলাই মাসের শুরুতে সচিন অশোক গেহলটকে চ্যালেঞ্জ করে বিদ্রোহ শুরু করেন। তাঁর অভিযোগ ছিল রাহুল গান্ধি সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর থেকেই তাঁকে কোনঠাসা করা হচ্ছে। তিনি এও অভিযোগ করেছিলেন, উপমুখ্যমন্ত্রী হলেও তাঁর ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে। পাশাপাশি আত্মসম্মান নিয়েও টানাটানি চলছে। তবে গত একমাস ধরে তাঁর বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে জোর জল্পনা হলেও তাতে জল ঢেলে দেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সচিনের ‘ঘর ওয়াপসি’-তে রাজস্থানে গহলৌত সরকারের গদি আপাতত নিশ্চিন্ত হল। কিন্তু এ প্রশ্নও থাকে, গত এক মাসে গহলৌত ও সচিনের মধ্যে তৈরি হওয়া তিক্ততা কী ভাবে মিটবে? গহলৌত অন্তত এক মাসে আগেও সচিনকে ‘নিকম্মা’, ‘অপদার্থ’, ‘সুন্দর মুখ, মাথায় কুবুদ্ধি’— এমন অনেক কথাই বলে ফেলেছেন। আজ অবশ্য তিনি বলেন, পার্টি নেতৃত্ব বিদ্রোহীদের ক্ষমা করলে তিনিও তাঁদের মেনে নেবেন।
তবে রাজস্থানে এক মাস ধরে এই দড়িটানাটানির খেলা শেষ পর্যন্ত থামল রাহুল গান্ধীর হস্তক্ষেপেই। অবশ্য প্রিয়াঙ্কাও সঙ্গে ছিলেন। সোমবার টানা দু'ঘণ্টা সচিনের সঙ্গে রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধির সঙ্গে সচিনের কথা হয়। গত ক’দিন ধরেই সচিন ও তাঁর সঙ্গে থাকা ১৮ জন বিক্ষুব্ধ বিধায়কের শিবির কংগ্রেস শীর্ষনেতৃত্বের কাছে শান্তির বার্তা আসছিল। সচিন বুঝতে পারছিলেন, মাত্র ১৮ জন বিক্ষুব্ধ বিধায়ককে নিয়ে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার ফেলা সম্ভব নয়। তাছাড়া তাঁর শিবিরের সবাই বিজেপিতে যোগ দিতে রাজিও ছিলেন না। এদিকে কংগ্রেস হাইকমান্ড সচিনকে ফেরাতে রাজি হলেও আপত্তি ছিল গহলৌতের শিবিরের। রবিবার পর্যন্ত তাঁরা জানিয়ে এসেছেন, ‘বিশ্বাসঘাতকদের’ যেন ঘরে ফেরানো না হয়।
ফলে এই দুই শিবিরের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে রাহুল সঙ্গে সনিয়া গাঁধীকেও সক্রিয় হতে হয়েছে। রবিবার পর্যন্ত সচিনের মূল দাবি ছিল, গহলৌতকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরানো হোক। কিন্তু রাতেই কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতা সচিনকে জানিয়ে দেন, তার সম্ভাবনা নেই। এর পরেও সচিন জানান, তিনি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে কথা বলতে রাজি। সচিনের সঙ্গে বৈঠক সেরে রাহুল সনিয়ার কাছে যান। সেখানে হাজির হন প্রিয়ঙ্কা। ওদের কাছ থেকে সব কিছু শুনে সনিয়া ফোন করেন গহলৌতকে। সনিয়া তাঁকে জানান, সচিন তাঁর ক্ষোভের কথা রাহুলকে জানিয়েছেন। তা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি তৈরি করা হবে। কংগ্রেস সভানেত্রীর কথায় গহলৌত রাজি হন।
তবে সচিনের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ও প্রদেশ সভাপতির পদ ফেরত না পাওয়ার সম্ভবনাই বেশি। তাঁকে এআইসিসি-তে সাধারণ সম্পাদক করে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আনা হতে পারে। ওয়ার্কিং কমিটিতেও জায়গা পেতে পারেন। তবে আগামী বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করে ভোটে যাবে, এমন বার্তা তাঁকে দেওয়া হয়েছে। সচিন নিজে পদ না চাইলেও তাঁর অনুগামী দুই বিক্ষুব্ধ বিধায়ককে অবশ্য মন্ত্রিসভায় ফেরানোর দাবি তুলেছেন।
কংগ্রেস দলেরই অনেকের প্রশ্ন, সচিনের আগে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার বিজেপিতে যোগদান ঠেকাতে কংগ্রেসের হাইকমান্ডের তরফে এই সক্রিয়তা কোথায় ছিল। রাহুল নিজে উদ্যোগী হয়ে আবার প্রমাণ করলেন, সভাপতির পদে না-থাকলেও তিনিই দলের চালকের আসনে রয়েছেন। কিন্তু কংগ্রেস দলের কিছু নেতার ব্যাখ্যা, সচিনকে কাজে লাগিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজস্থানে সরকার ফেলতে চাইছিল। কিন্তু সচিনের বিজেপিতে আসার ব্যাপারে বসুন্ধরা রাজের তীব্র আপত্তি ছিল। সচিনও বুঝে যান ১৮ জনের বেশি বিক্ষুব্ধ বিধায়ক জোগাড় করতে না-পেরে তাঁর ঘরে ফেরা ছাড়া উপায় নেই।