কলকাতা: রাজ্য বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীত্বের মুখ খুঁজছে, এমন কথা আকাশে-বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে। কখনও তা সুমধুর ধ্বনি, আবার কখনও উৎকণ্ঠার বার্তা বয়ে আনছে। বিভিন্ন নাম আলোচনায় – অভিজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে সর্বত্যাগী সাধু। একদিকে নতুন নতুন নামে আন্দোলিত হচ্ছেন অনেকেই। অন্যদিকে, রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের ঘনিষ্ট মহল এই নিয়ে যে চিন্তিত, তা বলাই বাহুল্য।
রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন নেতা তথা রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথাগত রায় বাংলায় আবার প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে ফিরতে চান। সেরকম ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তথাগত বর্তমানে মেঘালয়ের রাজ্যপাল। তবে তার কার্যকালের মেয়াদ ফুরিয়েছে। শুধু করোনা কালের জন্যই তার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সেই মেয়াদও ফুরানোর মুখে। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ফিরতে চেয়ে বিজেপিতে অনেককে অস্বস্তিতে ফেলেছেন তথাগত। কারণ, তথাগত নিজেই বলেছেন, দলকে তিনি জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অনুমোদন দিলে তিনি পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ফিরছেন।
প্রশ্ন উঠতে পারে, এতে রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের অস্বস্তির কারণ কী? হ্যা। কারণ আছে। তথাগত নিজেই বলেছেন, ‘‘গোমূত্র, গোবর, উটমূত্র ইত্যাদি পানের পরামর্শ, গরুর দুধে সোনা খুঁজে পাওয়া— এ সব অবৈজ্ঞানিক কথা বাঙালিরা পছন্দ করে না। এ সব আমিও বলি না। কিন্তু এ সবের জন্য আমাকে অনেক কু-বাক্য সহ্য করতে হয়। সামাজিক মাধ্যমে যখনই আমি কমিউনিস্টদের সম্পর্কে যুক্তিসঙ্গত এবং তথ্যনিষ্ঠ সমালোচনা করি, তখনই আমাকে গোমূত্র খান, গরুর দুধে সোনা খুঁজুন ইত্যাদি বলে আক্রমণ করা হয়।’’ ইঙ্গিত স্পষ্ট দিলীপ ঘোষের দিকে।
দিলীপ ঘোষের শব্দ চয়ন নিয়ে বাঙালি সমাজে যে আলোচনা কম হয় তা নয়। বুদ্ধিজীবী বাঙালির একাংশ দিলীপের কথাবার্তা পছন্দ করেন না। তাকে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে 'প্রজেক্ট' করলে বাঙালি সমাজের একাংশের ভোট বিজেপি পাবে না এমন কথা উঠেছে। তথাগত রায়, স্বপন দাশগুপ্তের মত উচ্চশিক্ষত বাঙালি বিজেপি নেতা যে দিলীপকে দেখতে চান, এমন কথা বলা যায়না। উচ্চ শিক্ষিত হিন্দু বাঙালিদের মধ্যে বিজেপির জনপ্রিয়তা বাড়াতে বাড়াতে দিলীপ সফল নন। কিন্তু, একথাও অস্বীকার করা যায়না যে সংঘের কাছের এবং পছন্দের দিলীপ। সংগঠনকে মজবুত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। তবে, দিলীপের আচরণে যে intellectual value নেই, তা জানেন দিল্লির বিজেপি নেতারা।
এদিকে এক জনপ্রিয় ধর্মীয়-সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাধু, স্বামী কৃপাকরানন্দের নাম শোনা গিয়েছে। শোনা গিয়েছে, বিজেপির তরফ থেকে তাকে দলে যোগ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। রটে যায়, তিনিই মুখ্যমন্ত্রীর পদের জন্য আসছেন। তবে, সেই রটনা আপাতত স্তিমিত। তথাগত রায়ের মন্তব্য বুঝিয়ে দিয়েছে উচ্চ শিক্ষিত বাঙালির একাংশ চায়না দিলীপ ঘোষকে।