‘ন্যূনতম আদর্শ থাকবে না?’, রাজনৈতিক টানাপড়েনেও মতাদর্শে অনড় মহারাষ্ট্রের একমাত্র বাম বিধায়ক

‘ন্যূনতম আদর্শ থাকবে না?’, রাজনৈতিক টানাপড়েনেও মতাদর্শে অনড় মহারাষ্ট্রের একমাত্র বাম বিধায়ক

c04f11d01571b7f7f9b32e396c9599f4

নয়াদিল্লি: গত কয়েকদিন ধরেই রাজনৈতিক ঝড়ে বিধ্বস্ত বাণিজ্য নগরী। শিবসেনার বিদ্রোহে কৌশল খুঁজেছে বিজেপি। ‘অপারেশন কমল’ নিয়ে রাজনীতির রণাঙ্গনে নেমে পড়েছেন দেবেন্দ্র ফড়ণবিশরা৷ সরকার ফেলার লড়াইয়ে নেমে গত কয়েক দিন ধরে বিদ্রোহী নেতারা ঘুরে বেরিয়েছেন পশ্চিমের সুরাট থেকে পূর্বের গুয়াহাটি পর্যন্ত৷ চলেছে ঘোড়া বেচা দর কষাকষি৷ এই গোটা পর্বে রাজনীতি রয়েছে, কিন্তু নেই জনাদেশকে সম্মানের সদিচ্ছা৷ যেন শুধুই বদলা নেওয়ার নেশায় বিভোর বিজেপি৷ 

আরও পড়ুন- ‘উদ্ধবের পদত্যাগে আমরা খুশি নই’, খবর শুনেই মন্তব্য শিন্ডে শিবিরের মুখপাত্রের

এরই মধ্যে রয়েছে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ৷ একপক্ষের বক্তব্য, এই খেলার সূচনা করেছিল শিব সেনা। ২০১৯-এর শেষে মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে লড়াই করেছিল বালাসাহেবের দল৷ সর্বাধিক আসনে জয়ী হয়েছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু, গোল বাধে সরকার গঠনের সময়৷ এই জোট সরকারের রাশ কার হাতে থাকবে, কোন সমীকরণে সরকার চলবে তা নিয়ে তৈরি বয় মতবিভেদ৷ জোটের জট না খোলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসনে জেতা শিব সেনা হাত মেলায় এনসিপি ও কংগ্রেসের সঙ্গে। গঠিত হয় ‘মহা বিকাশ আগাড়ী’ জোট৷ তখন থেকেই তক্কে তক্কে ছিল গেরুয়া দল। গায়ের জ্বালা মেটাতে যে রণনীতি বিজেপি নিল, তাতে আরব সাগরের তীরে যে ঝড় উঠল তাতে ধ্বংস ‘মতাদর্শ’৷ এরই মাঝে স্বতন্ত্র বিনোদ নিকোলে। মহারাষ্ট্রের বাইরে রাজনীতির দুনিয়ায় প্রায় অচেনা একটি নাম। তবে তাঁর দল বেশ ভালো মতেই পরিচিত বঙ্গবাসীর কাছে। সবুজ ঝড়ে এ রাজ্যে তারা শূন্য৷ কিন্তু, মহারাষ্ট্র বিধানসভায় বামেদের অস্তিত্ব জিইয়ে রেখেছেন তাদের একজন সদস্য বিনোদ। তিনি চাইলে সহজেই ঘোড়া কেনাবেচার বাজারে নিজের পটেক ভরাতে পারতেন৷ কিন্তু তিনি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার মানুষ৷ আদর্শের কাছে অর্থ তাঁর কাছে তুচ্ছ৷ 

মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলার দাহানু কেন্দ্রের বিধায়ক বিনোদ বরাবরই ছিমছাম। স্ত্রী ববিতা, দুই সন্তান ও মা-বাবার সঙ্গে গ্রামের একফালি জমিতে ছোট্ট পৈতৃক বাড়িতে থাকেন। ছোট থেকেই তাঁর সঙ্গী দারিদ্র্যতা৷ অর্থের অভাবে পড়াশোনাটাও শেষ করতে পারননি৷ দ্বাদশ পাশ করার পর কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন৷ কিন্তু পাঠ শেষ করতে পারেনি৷ অগত্যা পেট বাঁচাতে ঠেলা গাড়িতে খোলেন বড়া পাও আর চায়ের দোকান। কাজ করতে করতেই একদিন যোগ দেন বাম শিবিরে৷ প্রথমে ডিওয়াইএফআই, পরে সিটুতে কাজ করার পর ২০০৫ সাল থেকে পার্টি হোলটাইমার হন। মাস গেলে হাতে আসত ৫০০ টাকা। যা এখন বেড়ে হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। ২০১৮ সালের মার্চে নাসিক থেকে মুম্বই-কৃষকদের যে জাঠা উঠে এসেছিল তাতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে হেঁটেছিলেন বিনোদ।

তাঁর লড়াই দেখে খুশি হয়েছিল দল৷ পুরস্কার হিসাবে পান বিধানসভার টিকিট৷ ভোটের আগে পেশ করা হলফনামা অনুযায়ী, ২০১৯-এর নির্বাচনে তিনিই ছিলেন মহারাষ্ট্রের দরিদ্রতম প্রার্থী। তাঁর ও স্ত্রী ববিতার স্থাবর, অস্থাবর মিলিয়ে সম্পদের পরিমাণ ছিল ৫১ হাজার ৮২ টাকা। স্ত্রীর ছ’হাজার টাকা নিয়ে পরিবারের মাসিক আয় ১১ হাজার টাকা। সেখান থেকেই লড়াই৷ বিধানসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থীকে প্রায় পৌঁনে পাঁচ হাজার ভোটে হারিয়ে সেই বিনোদই পা রাখেন মহারাষ্ট্রের বিধানসভায়। 

বিনোদ সর্বচাই এগিয়ে চলেছেন নিজের আদর্শে৷ তাঁর সাফ কথা, “লাল ঝান্ডা হাতে নিয়ে প্রাপ্তি শুধুই আদর্শই। এলাম আবার চলেও গেলাম, এমন রাজনীতি করতে পারব না। যে মানুষগুলো আমায় ভোট দিয়েছিল, তাঁদের সঙ্গে বেইমানি করতে পারব না৷’’ দলবদলের খেলায় মত্ত নেতাদের উদ্দেশে তাঁর বক্তব্য, ‘ন্যূনতম আদর্শ নীতি বলে কিছু থাকা উচিত৷ এখনও করোনার সঙ্কট মেটেনি৷ শিশুরা স্কুলে যেতে পারেনি৷ অথচ ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে মত্ত হয়ে রয়েছে বিজেপি৷ আর তাতে মদত জোগাচ্ছে বিদ্রোহীরা৷’’