বিদ্রোহের আগুনে জ্বলছে কংগ্রেস, ফের ভাঙবে হাত? আজাদের বাড়িতে পৃথক বৈঠক!

বিদ্রোহের আগুনে জ্বলছে কংগ্রেস, ফের ভাঙবে হাত? আজাদের বাড়িতে পৃথক বৈঠক!

তপন মল্লিক চৌধুরী: দীর্ঘ সাত ঘন্টা  ধরে নাটক-ভুল বোঝাবুঝি-মান অভিমান-আরও যে কত রকম আঁকচা আঁকচি… কিন্তু বেলা ১১টা থেকে যে ম্যাডাম ম্যাডাম দিয়ে শুরু শেষেও সেই ম্যাডামই আরও ছ’মাসের জন্য কংগ্রেসের দায়িত্বে থাকলেন। যদিও তাতে সমস্যার সমাধান কিছুই হল না।  ম্যাডামকে চিঠি দিয়ে দলের ২৩ নেতা যে সব প্রশ্ন তুলেছিলেন সেগুলোর কী হবে,  তা স্পষ্ট হল না। বরং ম্যারাথন বৈঠক শেষ হওয়ার পর ন’জন নেতা গুলাম নবি আজাদের বাড়িতে বৈঠকে বসাতে জল্পনা যেন নতুন মাত্রা পেল।

কেন আজাদের বাড়িতে বৈঠকে বসলেন আনন্দ শর্মা, কপিল সিব্বল, শশী থারুর, মণীশ তিওয়ারির মতো নেতারা? ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে যদি খোলা মনেই সব আলোচনা হয়ে থাকে, শেষ পর্যন্ত সবই যদি মিটে গিয়ে থাকে, দলের অভ্যন্তরে যদি সত্যি কোনও লড়াই না থাকে তাহলে কেন ফের বৈঠক?

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে পরাজয়ের পর থেকেই কংগ্রেস দলের ভিতরের পরিস্থিতিটা টলোমলো। দলে নেতৃত্বের অভাব অভাব দেখা দেয় সেই সময় থেকেই। এরপর ২০১৯-এ বিজেপির কাছে পরাজয়ের ধাক্কায় হাতের শক্তি অনেকটাই আলগা হয়ে যায়। সোনিয়া গান্ধীকে ২৩ জন নেতার পাঠানো চিঠি এবং প্রাতিষ্ঠানিক রদবদলের যে ডাক সেখান থেকেই দানা বেঁধেছে একরাশ বিতর্ক। এটা ঘটনা দলের প্রবীণ নেতারা সোনিয়া-রাহুলের নেতৃত্বের ওপর থেকে আস্থা হারাচ্ছেন। 

২৩ নেতার লেখা চিঠিটি ১০ দিন পড়ে ছিল সোনিয়া হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বলে। হাসপাতাল থেকে ফেরার ৬ দিন পর সোনিয়ার কাছে ওই চিঠি পাঠানো হয়। এরও পাঁচ মাসে আগে তিরুবন্তপুরমের সাংসদ শশী থারুর একটি নৈশভোজের আসরে ওই চিঠির সলতে পাকানোর কাজটা শুরু হয়েছিল। সেই নৈশভোজে আমন্ত্রিত ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম ও তাঁর ছেলে কার্তি, সচিন পাইলট, অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি এবং মণিশংকর আইয়ার। তাঁরা দলের মধ্যে সংস্কার সংক্রান্ত গঠনমূলক বিষয়গুলি নিয়ে ঘরোয়াভাবে আলোচনা করেছিলেন। চিঠিতে সবাই সই না করলেও ওই নৈশভোজে দলকে ঘুরে দাঁড় করানো নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। চিঠি পাঠানোর প্রস্তাবও উঠেছিল এবং কেউ তার বিরোধিতা করেননি। আবার জরুরি ভিত্তিতে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে সংস্কারের প্রয়োজন আছে বলেও চিঠিতে সই করেছিলেন ২৩ জন।

ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে খোলা মনে আলোচনা যেমন হয়েছে, তেমনি অনেক ভুলবোঝাবুঝি ও ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে, অনেকের বিরুদ্ধে অপ্রোয়জনীয় কথাও বলা হয়েছে, এ কথা জানিয়েছেন আনন্দ শর্মা। তিনি এ কথাও বলেছেন, আলোচনার বিষয়বস্তু জনসমক্ষে তুলে ধরা উচিত। ওই চিঠিতে সোনিয়া গান্ধী হতাশ হয়েছেন, আবার মূল্যবান দলীয় কর্মী বলে মেনেও নিয়েছেন। বলা হয়েছে, মনোমালিন্য মিটে গিয়েছে। কিন্তু সত্যি কী মিটেছে? চিঠিতে সাক্ষরকারী এক নেতার কথা, ‘এখন অপেক্ষা করতে হবে ও দেখতে হবে যে আগামী কয়েকমাসের মধ্যে দল কোন পথে চলে, নেতৃত্ব ও সংগঠনের কী হয়’।

সোনিয়া গান্ধীকে দেওযা চিঠিতে নেহেরু-গান্ধী পরিবারের ভূমিকার কথা তুলে ধরা হয়েছে। আজাদ সভায় প্রশ্ন তুলে জানতে চেয়েছেন, কোনও বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা কি অপরাধ? আনন্দ শর্মা বলেছেন, ইন্দিরা গান্ধীর পাশে যখন কেউ নেই তখন আজাদ ছিলেন। অম্বিকা সোনি ২৩ নেতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার সুপারিশ করলে ওয়াসনিক জানতে চান, ‘চিঠি লেখা বা  প্রশ্ন তোলা কী অপরাধ?’
গুলাম নবী আজাদ বলেছেন, ‘আমাদের লড়াই সোনিয়া-রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে নয়। আমরা কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছি, যা নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। অনেক সময়ই নানা বিষয়ে আলোচনা হয় আবার কখনও চিঠি চালাচালিও হয়ে থাকে।’

ম্যারাথন বৈঠকে কোনও সুরাহা মেলেনি তাই ফের আজাদের বাড়িতে বসে বৈঠক এবং তা গোপনে। তার মানে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বিদ্রোহের আঁচ জবলতে শুরু করেছে। কংগ্রেস দলে এই মুহূর্তে হাজারো সমস্যা। শুধু নেতৃত্বের অভাব নয়।  ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে শেষ পর্যন্ত যার ফল সেই থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়। এই বিদ্রোহের আগুনের আঁচ মনে হচ্ছে সহজে নিভবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *