কলকাতা: ১৭ তারিখ উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ার বাম বিধায়ক আলি ইমরান রামজ ওরফে ভিক্টর দাবি করেছিলেন, তৃণমূলের তরফে আই-প্যাকের কর্ণধার প্রশান্ত কিশোর তাঁকে দল বদলের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ইমরান জানিয়েছিলেন, এদিন তিনি ও তাঁর স্ত্রী এক অভিজাত রেস্তোরাঁয় নৈশভোজের জন্য গিয়েছিলেন, সেখানেই প্রশান্ত কিশোর খোদ তাঁর সঙ্গে দেখা করে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেন। ইমরান দাবি করেছিলেন, তিনি সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। এরপর তৃণমূলের তরফে বলা হয়, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। এবার এর উল্টো গল্প প্রকাশ্যে এল।
ইমরান দাবি করেছিলেন, তাঁর কথা বিশ্বাস যোগ্য না মনে হলে হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে নিতে। ১০টা থেকে ১১টা নাগাদ ওই হোটেলে প্রশান্ত কিশোর তাঁর সঙ্গে চা খেয়েছিলেন এই কথাও জানিয়েছিলেন ইমরান। কিন্তু ইমরানের দাবি পুরোপুরি 'মিথ্যা' বলে দাবি করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আই-প্যাকের এক আধিকারিক। তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গে এসে যখন থেকে কাজ করা শুরু করে আই-প্যাক তখন থেকেই প্রশান্ত বাবু ওই হোটেলেই থাকতেন, একথা জানতেন ইমরানও। ইমরান আগেও বারবার প্রশান্ত বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানিয়েছিলেন, তাঁর স্ত্রী প্রশান্ত বাবুর ভক্ত, তিনি দেখা করতে চান প্রশান্ত বাবুর সঙ্গে। সচারচর প্রশান্ত বাবু সাধারণ বিধায়কদের সঙ্গে দেখা করেন না। কিন্তু ইমরান বাবু স্ত্রী'কে নিয়ে এসে দেখা করতে চাইলে প্রশান্ত বাবু সৌজন্যের খাতিরেই দেখা করতে রাজি হন।
আই-প্যাকের ওই আধিকারিক আরও জানান, সেখানে কথা বলতে শুরু করলে ইমরান পিকে'র কথা মন দিয়ে শোনেন। তারপর ইমরান নিজেই বলেন, ফরওয়ার্ড ব্লকে তাঁর ভবিষ্যত নেই। পাশপাশি ইমরানের নৈশভোজের গল্পও ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন ওই আধিকারিক। তিনি বলেন, ১৭ তারিখ সন্ধ্যায় সৌজন্যের খাতিরে প্রশান্ত বাবুই তাঁদের খাবার খেতে বলেন, কিন্তু দম্পতি জানান তাঁরা বিয়ে বাড়ি থেকে এসেছেন, তাই তাঁদের চা খেতে অনুরোধ করেন পিকে। সেই চায়ের বিল পিকেই মিটিয়েছেন, এমনকি তার রসিদও আছে তাঁর কাছে। এ ব্যাপারে ইমরান'কে প্রশ্ন করায় তিনি বেশিরভাগ সময়টাই নিশ্চুপ ছিলেন। এরপর তিনি স্বীকার করেন, ওই সন্ধ্যায় চায়ের বিল প্রশান্ত বাবুই দিয়েছিলেন। কিন্তু ইমরান জানিয়েছেন, তিনি স্ব-ইচ্ছায় পিকে'র সঙ্গে দেখা করতে চাননি। এ ঘটনায় তৃণমূল নেতা ও রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি কটাক্ষ করে বলেন, “ভোটে হারার পর ওদের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।”
সংগঠনকে আরও মজবুত করার লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশান্ত কিশোর ও তাঁর কোম্পানি আই-প্যাক'কে বঙ্গ-রাজনীতিতে জায়গা দেন। কিন্তু তারপর থেকেই এই রাজনৈতিক জনসংযোগরক্ষা করা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একাধিকবার প্রলোভন দেখানোর অভিযোগ উঠতে থাকে। আই-প্যাকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, রাজ্য রাজনীতিতে বর্তমানে দুটি দলের প্রাধান্যই বেশি। তৃণমূল ও তার প্রধান বিরোধী বিজেপি। সেখানে বামেদের অবস্থা সঙ্গীন। তাই বাম মন্ত্রীদের মধ্যে মানুষের পাশে যাঁরা থাকতে চান, তাঁদের তৃণমূলে যোগদান করার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে সংস্থার তরফে ঠিকই কিন্তু সেক্ষেত্রে জোর করার মতো কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যোগদান করা বা না করা একান্ত তাঁদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।