করোনার নয়া গতিপ্রকৃতি কি চিকিৎসা গবেষণায় বাধা হয়ে উঠবে? আশঙ্কায় গবেষকরা

করোনার নয়া গতিপ্রকৃতি কি চিকিৎসা গবেষণায় বাধা হয়ে উঠবে? আশঙ্কায় গবেষকরা

ওয়াশিংটন: চীনের উহান শহর থেকে শুরু হওয়ার পর বিগত চার মাসে বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই থাবা বসিয়েছে নোভেল করোনা। এপর্যন্ত গবেষণালব্ধ ভাইরাসের গতিপ্রকৃতি প্রতক্ষ্য করে বহু দেশেই এই রোগের সফল চিকিৎসাও শুরু হয়েছে। তবে সমস্যা দেখা দিয়েছে এপর্ন্ত কোভিড-১৯কে নির্মূল করতে নির্দিষ্ট কোনো একটি ওষুধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে পারেনি বিশ্বের কোনো দেশ। চলছে জোরদার গবেষণা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত গবেষণালব্ধ কোনও সিদ্ধান্তই যে সঠিকভাবে ভাবে নেওয়া সম্ভব হয়নি তার প্রমাণ মিলেছে নতুন এক গবেষণায়। যা নতুন করে গবেষকদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।  ১৪ এপ্রিল নিউইয়র্ক পোস্টের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, এই প্রথম সারস কোভ ২- এর “উল্লেখযোগ্য” রূপান্তরিত হওয়ার প্রমাণ মিলেছে একটি গবেষণা থেকে। গত জানুয়ারিতে  করোনা আক্রান্ত এক ভারতের কেরলের এক ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করে সেই প্রমাণ মিলেছে। – ফলে এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট একটি ওষুধ বা ভ্যাকসিন নিয়ে পদক্ষেপ করা “অর্থহীন” হতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রতিবেদন অনুসারে, ওয়েই-লুং ওয়াংয়ের নেতৃত্বে তাইওয়ানের চাংগুয়া ন্যশনাল ইউনিভার্সিটি অফ এডুকেশন এবং অস্ট্রেলিয়ার মারডোক ইউনিভার্সিটির গবেষকরা দেখেছেন সারস কোভ-২ এর ডিএনএর  কার্যকর অংশটি শরীরের কোষে ঢুকে ফুসফুসে অবস্থিত এসিই২ প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত হতে সেই অর্থে সক্ষম নয়। যার অর্থ এভাবে সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই রূপান্তরটির আবিষ্কার “আশঙ্কা তৈরি করছে যে, এতদিন ধরে যেসমস্ত তথ্যের ভিত্তিতে ভ্যাকসিনের আবিষ্কার নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, ভবিষ্যতে এমন আরও পরিবর্তন দেখা দিলে সবটাই বৃথা হয়ে যেতে পারেছ।”

এর আগে মনে করা হয়েছিল যে সারস কোভ-২ তার স্পাইক প্রোটিনের মাধ্যমে মানুষের কোষের উপরিভাগে ১০ থেকে ২০ ভাগ বেশি পরিমাণে ফুসফুসে অবস্থিত এসিই২ প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। অর্থাৎ এই ভাইরাসের জিন বা ডিএনএর একটি কার্যকর অংশ শরীরের কোষে ঢুকে তার নিজের সংখ্যা বাড়াতে শুরু করে। সম্ভবত এই কারণে কোভিড-১৯–এর সংক্রমণের মাত্রা বেশি। গবেষক দলের সদস্যদের মতে বৈচিত্র্যময় ভাইরাস সারস কোভ-২ এর এবং প্রতিরোধ ক্ষমতার অভিনব রূপান্তর ইতিমধ্যে লক্ষ্য করা গেছে। কারণ এই পরিবর্তন নিয়ে আগেই  পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছিল। শনিবার বাইয়ারেক্সিভ.আর.জে প্রকাশিত এই সমীক্ষাটি এখনও যৌথভাবে আলোচিত না হলেও, গতমাসেই কয়কটি আন্তর্জাতিক গবেষকমন্ডলীর জন্য এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছিল। তবে যেকোনো কারণে এই বিষয়টি গবেষকদের কাছে সেই অর্থে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়নি।

তবে সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিউনোলজির লেকচারার জেনা ম্যাকসিওচি, যিনি এই গবেষণাটি নিয়ে কাজ করেননি, নিউজউইককে বলেছেন যে যদিও অনুসন্ধানটি পর্যবেক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ, তবুও তিনি বিশ্বাস করেন না যে এই নতুন গবেষণালব্ধ তথ্য ভ্যাকসিন তৈরীর প্রচেষ্টাকে অর্থহীন করতে পারে। টেক্সাস এএন্ডএম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজিকাল সায়েন্সের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান বেনজামিন নিউমানও দক্ষিণ চীন মর্নিং পোস্টকে বলেছেন যে করোনাভাইরাসটির ধ্রুবক পরিবর্তনের অর্থ এই যে ভ্যাকসিনটির পর্যায়ক্রমিক পরীক্ষা এবং আপডেটের প্রয়োজন হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen + 13 =