নয়াদিল্লি: প্রকৃত সীমান্তরেখায় বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে ভারত ও চিনের টানাপোড়েন। সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে ৪০ সেনা জওয়ানের। একের পর এক চিনা অ্যাপ বন্ধ করা শুরু করেছে ভারত সরকার। সাধারণ মানুষের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি হয়ে যেতে পারে, এই মর্মে টিকটক থেকে পাবজির মতো অত্যন্ত জনপ্রিয় অ্যাপ এখন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট বলছেন, আম আদমি, দেশের গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের গতিবিধির ওপর ২৪ ঘণ্টা কড়া নজর রেখে চলেছে এক চিনা সংস্থা।
শেনজেন এলাকায় অবস্থিত এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার রাডারে রয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে খেলোয়াড়, শিল্পপতি মিলিয়ে প্রায় ১০০০০ জন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে যেমন আছেন, তেমনি নরেন্দ্র মোদী থেকে সোনিয়া গান্ধীর ওপরেও নজর রাখছে ঝেনহুয়া ডেটা ইনফর্মেশন কোম্পানি। শুধু প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই নন, তাঁদের কাছের মানুষ যেমন স্ত্রী, স্বামী, সন্তান, এদের ওপরেও আছে নজর। একদিকে যেমন সমাজের ওপর মহলের মানুষ আছেন, তেমনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপরাধীরাও এদের ডেটাবেসের তালিকায় আছে। এছাড়াও আছেন দেশের প্রতিরক্ষা বিভাগের ওপরতলার মানুষ, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানীরাও।
জানা গেছে, এই ঝেনহুয়া সংস্থার ‘ক্লায়েন্ট’ হিসেবে নাম আছে চিনের শাসকদল, চিনের মিলিটারি বিভাগ, চাইনিজ গোয়েন্দা দফতরের। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমটি তদন্ত করে জানতে পেরেছে ওই সংস্থার অন্তর্গত ওভারসিজ কি ইনফর্মেশন ডেটাবেস (ওকেআইডিবি) নামক এক বিভাগে ভারতীয়দের তথ্য সম্বলিত কোটি কোটি লগ ফাইল জমা রাখা আছে। শুধু ভারত নয়, আমেরিকা, ব্রিটেন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি এবং আরব আমিরশাহিরও বহু তথ্য ওকেআইডিবি-তে জমা রয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, ঝেনহুয়া সংস্থার এক শক্তিশালী নেটওয়ার্ক শেনজেন প্রদেশের হেডকোয়ার্টারে সমস্ত তথ্য জমা দেয়। এই বিস্ফোরক তথ্য ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমটি ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, ইটালি এবং ইংল্যান্ডের নামী সংবাদপত্রের কাছে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তথ্যের সূত্র বিপদের ভয় দেখিয়ে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে বলে জানা যাচ্ছে।
রেকর্ড বলছে ঝেনহুয়া সংস্থাটি ২০১৮ সালে ১ এপ্রিল সরকারিভাবে নথিভুক্ত হয়ে আত্মপ্রকাশ করে। পৃথিবীজুড়ে তাদের ২০টি প্রসেসিং সেন্টার আছে বলেও জানা গেছে। একাধিক প্রশ্ন সম্বলিত একটি ই-মেল সংস্থাটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে পাঠানো হইয়েছিল ১ সেপ্টেম্বর কিন্তু এখনও তার কোনও জবাব মেলেনি। উলটে ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ওয়েবসাইটটি আর খোলাই যাচ্ছে না। ফলে সন্দেহ আরও দানা বাঁধছে।
এখানেই শেষ নয়, সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা সশরীরে শেনজেনের সদর দফতরে গিয়ে প্রশ্ন করলে জানানো হয়, এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাবে না, কারণ এতে তাদের ‘ট্রেড সিক্রেট’ জানাজানি হয়ে যাবে। দিল্লির চিনা দূতাবাসে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা জানিয়ে দেয়’, আমরা কোনও সংস্থা বা ব্যক্তিকে চিনের হয়ে অন্য দেশের তথ্য অসদুপায়ে সংগ্রহ করার নির্দেশ দিই না।’ দেশের ১০ হাজার প্রভাবশালী ব্যক্তির তথ্য এদিকে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, গবেষণা পত্র, নিবন্ধ, পেটেন্ট প্রভৃতি থেকে সমস্ত তথ্য ওকেআইডিবি-র মনিটারিং ম্যাপে জমা হয়ে চলেছে।