বিহার ভোটের আগেই আসন রফা নিয়ে গৃহযুদ্ধের আগুন এনডিএ শিবিরে!

বিহার ভোটের আগেই আসন রফা নিয়ে গৃহযুদ্ধের আগুন এনডিএ শিবিরে!

তপন মল্লিক চৌধুরী :  বড় জোর আর দু’মাস। তার আগেই হয়ত বিহারে ভোটের বাদ্যি বেজে উঠবে। কিন্তু তার আগে গেরুয়া জোটের অন্দরে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আকচা-আকচি শুরু হয়েছে। মোদী থেকে নাড্ডা, আসন্ন বিহার বিধানসভা ভোটে এনডিএ শিবির ফের নীতীশ কুমারের নেতৃত্বেই লড়বে বলে ঘোষণা করেছেন। কিন্তু এনডিএ শরিক জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ), বিজেপি ও রামবিলাস পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টির (এলজেপি) মধ্যে দরকষাকষি অব্যাহত।

রামবিলাস পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি (এলজেপি) আগেই গত বারের চেয়ে বেশি আসনে লড়ার দাবি জানিয়েছে। অন্যদিকে জোটের নয়া শরিক জিতেন রাম মাঝির হিন্দুস্থান আওয়াম মোর্চাকে কটা আসন ছাড়া হবে তারও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। অর্থাৎ নিউ নর্মালে বিহার ভোটে শাসক শিবিরেরর আসন রফা এখনও বিষ বাঁও জলে।জানা গিয়েছে, ২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় লড়ার জন্য এবার ১১৫ আসনের দাবি করেছে নীতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড। ১২৮ আসন তারা ছাড়তে চায় বিজেপিকে। জেডিইউ চায় সেখান থেকেই এলজেপি-কে লড়ার জন্য আসন ছাড়ুক পদ্ম শিবির। রামবিসাল বা চিরাগ পাসোয়ান এই ফর্মুলা মেনে নেন কিনা এখন তার উপরই বিহারের শাসক শিবিরের মসৃণ জোটের ভবিষ্যৎ অনেকটা নির্ভর করছে।

ইতিমধ্যেই ভোটের জোট নিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কাছে নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন এলজেপি প্রধান চিরাগ পাসওয়ান। বর্তমানে বিজেপির জেডিইউ-র থেকে বেশি আসনে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামা উচিত বলে সাফ যুক্তি চিরাগের। এদিকে বিজেপিও কার্যত সেই বিষয়টিকে মান্যতা দিতে চাইছে বলে খবর। যদিও জেডিইউ-কেও চটাতে চাইছে না বিজেপি।

অন্যদিকে গত লোকসভায় বিজেপি ও জেডিইউ সমসংখ্যক আসনেই লড়াই করে। উল্টে দলের পাঁচ জয়ী আসন নীতীশ কুমারকে ছেড়ে দেয় পদ্ম শিবির। বিজেপি চাইছে এবার সেই প্রতিদান ফেরাক জেডিইউ। বর্তমানে ২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় লড়ার জন্য ১১৫টি আসনের দাবি করছে জেডিইউ। ১২৮টি আসন তারা বিজেপি ছাড়তে রাজি আছে। কিন্তু ওই ১২৮ আসনের মধ্যেই বিজেপি এলজেপিকে সঙ্গে বোঝাপড়া করুক,এমনটাই চাইছে নীতীশের দল। আর এখানেই তৈরি হচ্ছে সমস্যা।

জেডিইউ নেতৃত্বের বক্তব্য, ২০১০ সালের বিধানসভা ভোটে তারা ও বিজেপি এক সঙ্গে ভোটে লড়েছিল। সেখানে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি। ২০১৫ সালে মহা জোটের হয়ে জেডিইউ ১০১ আসনে লড়াই করেছিল। এবার জেডিইউ ফের এনডিএ-এর বড় শরিক হয়ে লড়ছে। তাই ১১৫ আসনের দাবি জানিয়েছি। এলজেপি-কে বিজেপি আসন ছাড়ুক, জিতেন রাম মাঝির হিন্দুস্থান আওয়াম মোর্চা-র বিষয়টি বুঝে নেবে।

অন্যদিকে বিহারের বিজেপি নেতার কথায়, আসন রফা নিয়ে দিল্লিতে দুই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে আলোচনা চলছে। এখনই কে কটা আসনে লড়বে তা বলা মুশকিল। তবে গত লোকসভায় তারা ও জেডিইউ সমসংখ্যক আসনে লড়াই করেছিল। দলের পাঁচ জয়ী প্রার্থীর আসন নীতীশের দলকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এবার সেই প্রতিদান ফেরানোর পালা জেডিউ-এর। বর্তমানে জেডিইউ-এর বিধায়ক সংখ্যা ৭১, বিজেপি-র দখলে ৫৩ আসন। রফা নিয়ে টানাপোড়েন থাকলেও লালু-তেজস্বী যাদবের আরজেডি প্রার্থীরা কটা আসনে লড়াই করে এখন তা দেখেই আসন সংখ্যা চূড়ান্ত করতে চাইছে জেডিইউ-বিজেপি নেতৃত্ব। অক্টোবরে বিহারের শাসক জোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ পেতে পারে।

এদিকে দিন যত গড়াচ্ছে শরিকি বিবাদ ততই বাড়ছে জেডিইউ ও এলজেপি-র মধ্যে। ইতিমধ্যেই একাধিকবার চিরাগ কাঁটায় বিদ্ধও হয়েছে নীতিশ শিবির। উল্টে বিজেপিতে আপত্তি না থাকলেও যে সমস্ত আসন গুলিতে নীতীশ শিবিরের প্রার্থী থাকবে সেখানেও সরসারি প্রতিদ্বন্দ্বীতার রাস্তায় হাঁটতে চাইছে এলজেপি। অন্যদিকে ইতিমধ্যেই জেডিইউ-র প্রবীণ নেতা কে সি ত্যাগীর এলজেপি বিরোধী মন্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে চিরাগের দলও।

এই সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে এলজেপি-র সাংসদরাও কোনোভাবেই নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে বিহার নির্বাচনে লড়তে রাজি নন। ইতিমধ্যেই বিহারের রাজনীতির ময়দানে গুজব ছড়িয়েছে একাকী লড়াইয়ের জন্য ইতিমধ্যেই ১৪৩টি আসনে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে ফেলেছে এলজেপি।সূত্রের খবর, এর পাশে ২০১৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেডিইউ-র খাতায় যাওয়া ২৯টি আসন ও বিজেপির খাতায় যাওয়া ২৪টি আসন নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে দুই শিবিরের মধ্যেই। সেই সময়েই জেডিইউ-র বিরোধী শিবিরেই অবস্থান করতো বিজেপি। অন্যদিকে বর্তমান শাসক শিবিরের নয়া শরিক জিতেন রাম মাঝির হিন্দুস্থান আওয়াম মোর্চাকে কটা আসন দেওয়া হবে হবে তাও এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলেই খবর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × two =