রাজ্যে শক্তি বাড়ছে বিজেপির, বিপদ বুঝে মমতা কি নতুন করে ভাবছেন?

রাজ্যে শক্তি বাড়ছে বিজেপির, বিপদ বুঝে মমতা কি নতুন করে ভাবছেন?

 

তপন মল্লিক চৌধুরী : এতদিন তিনি ভাবতেন এ রাজ্য থেকে তাঁরা সিপিএমকে দূর করে দিতে পেরেছেন; কংগ্রেসকেও মুছে ফেলেছেন, বিজেপিকে গ্রাহ্যের মধ্যেই আনেন নি। কিন্তু তাঁর এই ধ্যান ধারণা এবার বদলে যাচ্ছে, রাজ্যে ক্রমশই বিজেপির বাড়বাড়ন্ত যেন বাড়ছে, নেতৃত্বের গলার আওয়াজ ক্রমশই চড়ছে। আর এতেই চিন্তা বাড়ছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁদের দল হেসেখেলে জিতে যাবে এই মনোভাবটা যেন আর নেই দলের নেত্রীর চোখেমুখে।

সত্যিই কি পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, আর মমতার চিন্তা বাড়ছে। বেশ কিছুদিন আগে থেকেই মোদির সমর্থকদের সংখ্যা বাড়ছিল। হু হু করে কমছিল কংগ্রেস আর  সিপিএম। কিন্তু এখন কমতি দিকে তৃণমূলও। সেই ছবি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে গত বছরের লোকসভা নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে বিজেপি রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে ১৮টি জিতে শুধু রাজ্যবাসীকে অবাক করেনি, বিস্মিত করেছিল শাসকদলকেও। 

উল্লেখ্য; ওই ৪২ আসনের মধ্যেই রয়েছে রাজ্য বিধানসভার ২৯৪টি আসন। এর মধ্যে ১২১টি আসনে শীর্ষে থেকে বিজেপি চমক দিয়েছে। আর এসব ফলাফলের পর বিজেপি বুঝেছে যে সামনে সুদিন তাদের ধরা দিলেও দিতে পারে। তাই আগামী বছরের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে জেতার স্বপ্ন নিয়ে বিজেপি ভোটের ময়দানে নেমে পড়েছে। আর যত দিন যাচ্ছে আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে মমতার দলে। কারণ; দলের বহু কর্মী ও নেতা একে একে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, এ রাজ্যের জনসংখ্যার ২৭. ০১ শতাংশ মুসলিম ভোট। আর হিন্দু ভোটের সংখ্যা ৭০. ৫৪ শতাংশ। মুর্শিদাবাদ, মালদহ আর উত্তর দিনাজপুরে মুসলিম ভোটের সংখ্যাধিক্য। যদিও ভারতে মুসলিম জনসংখ্যায় দ্বিতীয় রাজ্য হলো এই পশ্চিমবঙ্গ। এখানে ২ কোটি ৪৬ লাখের বেশি মুসলিম। রাজ্য বিধানসভায় মুসলিম ভোট পেতে বরাবরই এগিয়ে ছিল কংগ্রেস ও বাম দল। এরপর আসে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে এখনো বেশির ভাগ সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূলের দিকে ঝুঁকে আছে। আর সামান্য কিছু বাম দল ও কংগ্রেসের দিকে। মমতা এ রাজ্যের রাজনীতিতে সংখ্যালঘু ভোটারদের গুরুত্ব দিয়ে আসছেন আগে থেকেই। কিন্তু সেই ভোটব্যাংকে এবার থাবা বসাতে পারে বিজেপি।

গত লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে সেটা ধরাও পড়ে। ওই লোকসভা নির্বাচনের পর এ রাজ্যের ভোটচিত্র অনেকটাই পাল্টে যায়। অনেক হিন্দু মমতার দিক থেকে সমর্থন তুলে নেন। মমতা নিজেও বুঝতে পারেন হিন্দুদের একাংশের ভোট হাতছাড়া হয়েছে। স্বভাবতই নতুন পথে মমতাকে ভাবতে হয়েছে, সেই ভাবনা অনুযায়ী তিনি মাঠে নেমেছেন। সংখ্যালঘু বা মুসলিম ভোট তাঁদের রয়েছে ঠিকই কিন্তু হিন্দু ভোট নতুন করে সুসংহত করতে হবে।

আসন্ন রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে হিন্দু ভোট পেতে মমতার ঘোষণা, রাজ্যের আট হাজার ব্রাহ্মণ ও পুরোহিত মাসে এক হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। বিজেপির হাত থেকে হিন্দু ভোট ফিরে পেতেই যে মমতার এই ছক তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। 

ক্ষমতায় আসার বছর এক পরেই মমতা রাজ্যের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের জন্য প্রথম ভাতা চালু করেছিলেন। আর সেটা চালু করা হয়েছিল রাজ্যের ওয়াকফ বোর্ডের মাধ্যমে। ওই সময় পুরোহিতদের দাবি ছিল তাঁদেরও ভাতা দেওয়া হোক। দেরি হলেও মমতা সাড়া দিলেন। রাজ্যের আট হাজার ব্রাহ্মণ ও গরিব পুরোহিতকে মাসে এক হাজার টাকা ভাতা পাশাপাশি যেসব গরিব পুরোহিতের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, তাঁদেরও গড়ে দেওয়া হবে বাড়ি। এ ছাড়াও পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটে সনাতন ব্রাহ্মণ ট্রাস্টের মাধ্যমে তৈরি করা হবে হিন্দু তীর্থস্থান ও মন্দির। এই লক্ষ্যে মমতা তাঁদের জমিও দিয়েছেন।

সংখ্যালঘু মুসলিম ভোট পেতে মরিয়া রাজ্য বিজেপিও। রাজ্যের বিধানসভার ২৯৪টি আসনের মধ্যে ৪১টি মুসলিম–অধ্যুষিত আসন। এ ছাড়াও রাজ্যের ১০০টি আসনে মুসলিম ভোট একটি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে। তাই মুসলিম ভোট কবজা করার জন্য বিজেপি মাঠে নামিয়েছে মুসলিম নেতাদের। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতার এই নতুন ছক বিরোধিরা সহজেই বুঝেছেন, বাম-কংগ্রেসরা তো বলেইছেন, বিজেপি যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করছে, তৃণমূলও সেই তাস খেলছে।’ আর বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘মমতার এত দিন পর মনে পড়ল পুরোহিতদের কথা। সামনে ভোট, তাই পুরোহিতদের মন পেতে উৎকোচ দিচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *