ওয়াশিংটন: পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহকে নিয়ে আগ্রহ সীমাহীন৷ বিশ্ববাসীর চাঁদে বসতি গড়ার স্বপ্নও দীর্ঘদিনের৷ সেই স্বপ্ন এবার হয়তো সত্যি হতে চলেছে৷ কারণ চাঁদে মিলল জলের খোঁজ৷ হ্যাঁ, সত্যিই চাঁদের পিঠে রয়েছে জল৷ এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের কৃতিত্ব মার্কিন মহাকাশ গবেষণাকারী সংস্থা নাসার৷
আরও পড়ুন- পরের ১৫ বছর পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে থাকবে লাল গ্রহ মঙ্গল
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, চাঁদের গহ্বরের মধ্যেই রয়েছে জলের অণু৷ চাঁদের যে অংশ সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়, সেই অংশেই মিলেছে এই খোঁজ৷ নাসার কাছে চাঁদের বুকে জলের সন্ধান এনে দিয়েছে ‘সোফিয়া’৷ পৃথিবী থেকে চাঁদের পিঠে যে বৃহৎ গর্তটি দেখা যায় তার মধ্যেই রয়েছে জলের অণু৷ হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন মৌল জোট বেঁধে H2O অণু তৈরি করেছে৷ চাঁদের বুকে জল আছে কিনা, তার খোঁজ পেতে দীর্ঘ দিন ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছিলেন বিজ্ঞানীরা৷ চাঁদের মেরুতে যে বরফ জমে রয়েছে সেই হদিশ আগেই মিলেছিল৷ এবার মিলল জলের খোঁজ৷
চাঁদের পিঠে এই গর্তটি রয়েছে দক্ষিণ গোলার্ধে৷ তবে চাঁদের পুরো পৃষ্ঠ জুড়েই জল থাকতে পারে আশা করা হচ্ছে৷ নাসার তরফে জানানো হয়েছে, ‘‘নাসার স্ট্র্যাটোস্ফেরিক অবজারভেটরি ফর ইনফ্র্যারেড অ্যাস্ট্রোনমি (সোফিয়া) চাঁদের আলোকিত পৃষ্ঠে জলের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে৷ এটি হিমশীলত, ছায়াযুক্ত অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নয়৷’’ চাঁদের দক্ষিণ পৃষ্ঠে দ্বিতীয় বৃহত্তম গর্ত হল ক্লেভিয়াস৷ জার্মান গণিতজ্ঞ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার ক্লেভিয়াসের নামে এই নামকরণ করা হয়েছে৷ চাঁদের পিঠে থাকা সবচেয়ে পুরনো গহ্বরগুলির মধ্যে এটি একটি৷ নাসা জানিয়েছে এই অংশে ১২ আউন্স মতো জল জলে রয়েছে৷ চাঁদের মাটি ধূলিকণায় এক ঘনমিটার জায়গা জুড়ে জলের অণু ছড়িয়ে আছে৷
আরও পড়ুন- জিন গবেষণায় খুলল নতুন দিগন্ত, জেনেটিক সিজার আবিষ্কারের জন্য রসায়নে নোবেল দুই বিজ্ঞানীর
চাঁদের মেরুদেশে যে কয়েক লক্ষ টন বরফ জমে রয়েছে সেই খোঁজ আগেই মিলেছিল৷ চাঁদে যে পরিমাণ জল রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছিল, তার চেয়ে আনেক বেশি জল থাকতে পারে বলেই মিলেছে ইঙ্গিত৷ চাঁদের পিঠে ১৫,৪০০ স্কোয়ার মাইল (৪০ হাজার স্কোয়ার কিলোমিটার) এলাকা জুড়ে বরফের আকারে জল থাকতে পারে বলে মনে করছে কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের পল হায়েনের নেতৃত্বাধীন গবেষক দল৷ নাসার বোয়িং ৭৪৭এসপি জেটলাইনার ‘সোফিয়া’ ৪৫ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে চাঁদের গহ্বরের দিকে নজর রাখছিল৷ নাসা এবং জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার যৌথভাবে তৈরি করেছে জেটলাইলার সোফিয়া৷ এটি এয়ারবোর্ন অবজারভেটরি৷ এই জেট প্লেনের ভিতরে রয়েছে বিশাল টেলিস্কোপ৷ এই টেলিস্কোপেই ধরা পড়েছে জলের অণু৷
নেচার অ্যাস্ট্রনমি জানার্লে প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণার রিপোর্ট৷ এই গবেষণার সদস্য ক্যাসি হোন্নিবল বলেন, ‘‘এত দিন মনে করা হত, চাঁদের দক্ষিণ মেরুর অন্ধকার হিমশীতল পিঠেই লুকিয়ে রয়েছে জল৷ কিন্তু এই আবিষ্কার সেই ধারণা সম্পূর্ণ বদলে দিল৷ চাঁদের যে পিঠ সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়, সেখানেই লুকিয়ে রয়েছে জল৷’’