তপন মল্লিক চৌধুরী : আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আলকায়েদার সন্দেহভাজন জঙ্গি গ্রেপ্তারের পর এ রাজ্যের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে পারস্পরিক দোষারোপ। বিরোধী দলগুলো চড়াও হয়েছে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল সরকারের ওপর। শাসক দলের পক্ষ থেকেও পাল্টা জবাব দিতে ছাড়ছে না৷ কেরালা ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে ধৃত সন্দেহভাজন জঙ্গীদের হেফাজতে নেওয়ার পর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আল-কায়েদার সদস্য।
এভাবে আল কায়দা জঙ্গিদের রাজ্যব্যাপী তৎপরতায় শঙ্কিত হয়ে পড়া রাজ্যের সাধারণ মানুষদের প্রশ্ন, পশ্চিমবঙ্গে এভাবে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী আল-কায়েদার বাড় বাড়ন্ত হল কিভাবে। কেন রাজ্য সরকার এই জঙ্গি তৎপরতা রোধ করতে পারেনি? জঙ্গি গ্রেপ্তারের পর রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ রাজ্য সরকারকে একহাত নিয়ে বলেছেন, বাংলা ও কেরলে দেশবিরোধী কার্যকলাপ সবচেয়ে বেশি। বাংলা ও কেরল সরকার এই দেশবিরোধী কাজে জঙ্গিদের আশ্রয় ও মদদ দিচ্ছে। এটা এখন রাজ্যের শাসক দলের রেসিপি।
দিলীপ ঘোষ আরও বলেছেন, বাংলায় মাওবাদী ও জঙ্গি সংগঠনের গতিবিধিকে কাজে লাগিয়ে ভোটে জিততে মরিয়া তৃণমূল সরকার। জাতীয় নিরাপত্তার পরিবর্তে ভোট রাজনীতিকে গুরুত্ব দেওয়ার কারণেই রাজ্যে তাদের বাড়বাড়ন্ত। মুর্শিদাবাদ যে জঙ্গিদের আঁতুড় ঘর হয়ে উঠেছে এর কারনরাজ্য প্রশাসন জঙ্গিদের রুখতে ব্যর্থ। দিলীপ ঘোষের উত্তরে তৃণমূল নেতা ও রাজ্যের পৌর মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, উত্তর প্রদেশে ৮ জন পুলিশ কর্মীকে গুলি করে মারা হয়েছে। তাহলে ওই রাজ্য কি টেররিস্ট রাজ্য নয়? মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্য নাথের তো আগেই ইস্তফা দেওয়া উচিত ছিল। চুপচাপ বসে থাকেন না এ রাজ্যের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তিনি বলেছেন, এই রাজ্য এখন বোমা তৈরির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে। এতে গণতন্ত্র বিপন্ন হতে পারে। এ রাজ্যেতো এখন সরকার ও পুলিশ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে রুখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
ফিরহাদ হাকিমরাজ্যপালের মন্তব্যের পাল্টা উত্তর দিয়েবলেছেন, ওনারতো সাংবিধানিক প্রধান থাকার অধিকার আছে কিনা সেই প্রশ্ন এখন উঠে এসেছে। রাজ্যপালের কাছে সব রাজনৈতিক দল সমান হওয়া উচিত। আর এই প্রসঙ্গে জাতীয় কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি ও মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেছেন, জঙ্গি মোকাবিলায় ব্যর্থ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার।
খাগড়াগড়েই তা প্রমাণিত হয়েছে। পুলিশের ওপর এই রাজ্যে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ফলে পুলিশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। ফলে আল-কায়েদার মতো জঙ্গি সংগঠন বাড়ছে। আর বাম দল সিপিএমের বিধানসভার পরিষদীয় দলের নেতা ও সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, এখানেতো একটা জঙ্গি কার্যকলাপ বাড়লে অন্য জঙ্গিদের কার্যকলাপ বাড়ে। কারণ তারা সুযোগ পেয়ে যায়। তারই ছবি এখন এই রাজ্যে।
এনআইএ গোয়ান্দাদের জালে ধরা পড়েছে আল কায়দার বাংলা ও কেরল মডিউল। কেরলে পরিযায়ী শ্রমিকদের ছাউনি থেকে ৩ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ থেকে গ্রেফতার হয়েছে আরও ৬ সন্দেহভাজন জঙ্গি। এ নিয়েই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করেছেন বিরোধী দল বিজেপি।
একই সুরের অভিযোগ বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং বিজেপি–র কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহার। তাঁদের দাবি, পশ্চিমবঙ্গ সরকার জঙ্গিদের আশ্রয় দিচ্ছে। আর এর কারণ শুধুমাত্র ভোটব্যাঙ্ক পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে যে ২০১৯ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে তার মধ্যে ১ হাজার কিলোমিটার এখনও কাঁটাতার দেওয়া হয়নি। এর আগে বাম সরকারের আমলেওসে কাজ হয় নি।পরবর্তীতে তৃণমূল সরকারও হাত পা গুটিয়ে। বিরোধীদের অভিযোগ, তা হলে দেশে অনুপ্রবেশকারী, রোহিঙ্গা আসা বন্ধ হয়ে যাবে। ভোটব্যাঙ্ক কমে যাবে। তাদের জেতাবে কে?
মুর্শিদাবাদ থেকে ৬ জন আল কায়দা আতঙ্কবাদীকে এনআইএ গ্রেফতার করার পর এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে পশ্চিমবঙ্গ এই উগ্রপন্থীদের আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে। নানা জায়গার আতঙ্কবাদীরা তাদের সুবিধা মতো পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিচ্ছে। রাজ্য সরকার ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির কারণে উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এই নোংরা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ছেড়ে সরকার উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করুক, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিক।এমনটাই চাইছেন বিরোধীরা।