নয়াদিল্লি: আইএএস! একটা লক্ষ্য৷ একটা স্বপ্ন৷ যে স্বপ্নকে দু’চোখের পাতায় নিয়ে ছুটে চলেছে লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ে৷ তবে আমলা হওয়ার এই পথ মোটেও সহজ নয়। তবে তা অসম্ভবও নয়। আত্মবিশ্বাস আর একাগ্রতা থাকলে সেই স্বপ্নকে ছোঁয়া যায়৷ আর সেটাই আরও এক বার প্রমাণ করে দিলেন ঝাড়খণ্ডের সৌরভ ভাওয়ানিয়া।
আরও পড়ুন- আট বছরের বালককে গিলে খেল কুমির! আতঙ্কে কাঁটা গোটা গ্রাম
ইউপিএসসি’র মতো কঠিন পরীক্ষার ধাপ পেরিয়ে তবেই হওয়া যায় দেশের আমলা। আর এই ধাপ পেরনোর জন্য প্রয়োজন কঠোর অনুশীলন আর অধ্যবসায়। কী ভাবে ধরা দেয় সাফল্য? সেই কাহিনিই শোনালেন আইএএস অফিসার সৌরভ।
তাঁর কথায়, ইউপিএসসি পরীক্ষায় সফল হওয়ার জন্য সব সময় বই মুখে নিয়ে বসে না থাকলেও চলে। তবে যতটুকু পড়বে, তা মনসংযোগের সঙ্গে৷ সৌরভ নিজে ঘোরতর সংসারী৷ শুধু তাই নয়, তিনি যখন ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখন এক সন্তানের বাবা৷ সংসার চালাতে করতেন অন্য চাকরি৷ সংসার-চাকরি সামলে কী ভাবে হল এই লক্ষ্য পূরণ? সৌরভের দাবি, ইউপিএসসি-কে পাখির চোখ করে এগিয়ে যেতে হবে৷ কোনও ভাবেই লক্ষ্য থেকে সরে গেলে চলবে না৷
সালটা ২০১৯৷ ইউপিএসসি পরীক্ষায় পাশ করেন সৌরভ। তাঁর র্যাঙ্ক ছিল ১১৩। তবে প্রথম বারে নয়, দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় স্বপ্নকে ছোঁয়ার স্বাদ পান। ছোট থেকেই মেধাবী সৌরভ চাকরি পেয়েছিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াতে৷ বড় চাকরি করলেও সৌরভের স্বপ্ন ছিল আইএএস হওয়া৷
ঝাড়খণ্ডের দুমকার ছেল সৌরভের পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলোতেও ভালো ছিলেন। তবে তিনি ছিলেন ইন্টারনেট-পাগল। তাঁর কলেজ জীবন কাটে কলকাতায়। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বাণিজ্য শাখায় পড়াশোনা করার পর সিএ পাশ করেন। তার পর এমবিএ পড়তে পাড়ি দেন দিল্লি।
সৌরভ বিবাহিত৷ বাড়িতে রয়েছে স্ত্রী ও সন্তান। সংসারের হাজারো ঝক্কিও পোহাতে হয় তাঁকে৷ কাজের চাপও বিশাল। এত কিছু সামলেও কী ভাবে ইউপিএসসি’র মতো কঠিন পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া যায়? সৌরভের কথায়, এর জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা এবং নির্দিষ্ট রুটিন৷ এউপিএসসি’র জন্য সব সময় বইমুখো হয়ে না থাকলেও হয়৷
সৌরভ তখন আরবিআইয়ের চাকরির ইন্টারভিউ পর্বে বসেছেন৷ কিন্তু মন সাড়া দেয়নি৷ মনে হয়েছিল, ব্যাঙ্কিং সেক্টর নয়, বরং তিনি বরাবরই চেয়ে এসেছেন আমলা হয়ে জনসেবা করতে। এদিকে সদ্য বিয়ে হয়েছে তাঁর৷ সংসারে দায়িত্ব এসেছে কাঁধে৷ পাকা চাকরি ছাড়ার সাহস হয়নি৷ কিন্তু ২৯ বছর বয়সে সৌরভ বুঝতে পারেন, ‘‘জীবন চাইছে অন্য কিছু।’’ ঝুঁকি থাকলেও, নেমে পরেন নতুন লড়াইয়ে৷ ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে৷
কী ভাবে পড়াশোনা করতেন সৌরভ? তিনি জানান, অফিসের ‘লাঞ্চ ব্রেক’-এ পড়াশোনা করতেন তিনি। অন্যরা যখন চা-কফি খাওয়ার পিছনে সময় দিতেন, তিনি চোখ বুলোতেন ইউপিএসসি-র বিশাল সিলেবাসে। সৌরভের ইউপিএসসি প্রস্তুতির সবে দু’মাস পেরিয়েছে৷ এরই মধ্যে আসে স্ত্রী পারুলের মা হওয়ার খবর৷ বাবা হওয়ার দায়িত্ব বেড়ে যায় এক ঝটকায়৷ তবুও থেমে যাননি সৌরভ৷ অল্প সময়েই পড়াশোনা করেছেন নিবির ভাবে৷ যখন প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দিচ্ছেন তখন বাবা হন তিনি৷ ওই পরীক্ষায় পাশও করেন৷ তবে সেবার মেন পরীক্ষার বেড়া টপকাতে পারেননি৷ তবে হার মানেননি৷ ফের নতুন করে শুরু করেন৷ দ্বিতীয়বারে পেরিয়ে যান সমস্ত বাধা৷ ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল এইপিএসসি পাশ করেন সৌরভ৷ স্বামীর সাফল্যে খুশিতে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন তাঁর স্ত্রীও৷
সৌরভের কথায়, ,‘‘আমার শক্তি আমার পরিবার। ওদের সঙ্গে সময় কাটাতে খুবই ভালবাসতাম। তা ছাড়া মনে জোর ছিল, একটা চাকরি তো আছেই।’’ এউপিএসসি-তে তাঁর সাফল্যের বীজমন্ত্র, ‘আপনি বাবা-মা হোন, বা ১০টা ৫টার চাকরিই করুন না কেন, কোনওটাই সমস্যা নয়৷ আসল হল ইচ্ছাশক্তি আর শৃঙ্খলা৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>