চিনকে টক্কর দিতে ভারতীয় নৌবহরে যুক্ত হচ্ছে দেশীয় রণতরী! কী কী বৈশিষ্ট্য রয়েছে এই ‘ব্রহ্মাস্ত্রে’?

চিনকে টক্কর দিতে ভারতীয় নৌবহরে যুক্ত হচ্ছে দেশীয় রণতরী! কী কী বৈশিষ্ট্য রয়েছে এই ‘ব্রহ্মাস্ত্রে’?

1f77ec45f6f294bb4e60edc3dc180050

নয়াদিল্লি: স্বাধীনতা দিবসের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০২১ সালেই অমৃত মহোৎসবের ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ সেই উদ্যোগের অংশ হিসাবেই স্বাধীনতা দিবসে ভারতের নৌবহরে যোগ দিচ্ছে এক নতুন পাহারাদার৷ আধুনিক রণতরী আইএনএস বিক্রান্ত! এখনও অবশ্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি এটি৷ কিন্তু, এখন থেকেই আইএনএস বিক্রান্তের উপর ভরসা করতে শুরু করেছেন দেশের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।

আরও পড়ুন- পরপর দু’দিন নিম্নমুখী করোনার দৈনিক সংক্রমণ, কমল সক্রিয়তার হারও

গত কয়েক বছর ধরে চিনের সঙ্গে ভারতের রাজনৈতিক সম্পর্কে তৈরি হয়েছে তিক্ততা। ভারত ও চিন সেনার সংঘর্ষে লাদাখে ঝরেছে রক্ত৷ সীমান্তে ক্রমশ ঝরছে ড্রাগনের উষ্ণ নিঃশ্বাস৷ এই পরিস্থিতিতে চিন যদি সমুদ্রপথে ভারতকে আক্রমণের পরিকল্পনা করে, তবে সেই আত্রমণ রুখতে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ হতে পারে বিক্রান্ত। এমনটাই মনে করছেন প্রতিরক্ষাবিদরা৷ 

তাঁদের কথায়, ভারতীয় নৌবাহিনীর তূণে অন্যতম সেরা তির আসতে চলেছে৷ তবে এই রণতরী নিয়ে চর্চার কারণ শুধুমাত্র তার বিশাল ক্ষমতা বা জলযুদ্ধে ভারতের শক্তিবৃদ্ধিতে এর ভূমিকা নিয়ে জল্পনা নয়। বিক্রান্ত নিয়ে এত আলোচনায় অন্যতম কারণ হল, এই রণতরী নিজের ক্ষমতায় তৈরি করেছে ভারত।

কোনও রকম বিদেশি শক্তি ছাড়া সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় প্রযুক্তিবিদদের হাতে গড়ে উঠছে আইএনএস বিক্রান্ত। এত দিন জলপথে শত্রু মোকাবিলায় ভারতের ভরসা ছিল বিদেশ থেকে আমদানি করা যুদ্ধজাহাজ৷ তারাই এতদিন সমুদ্রের বুকে ঝড়ঝাপটা সামলাত। এই প্রথম সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি কোনও রণতরী ভাসতে চলেছে সমুদ্রের জলে৷ 

ins

কী কী বৈশিষ্ট রয়েছে বিক্রান্তে? আইএনএস বিক্রান্ত একটি বিশাল যুদ্ধজাহাজ। যার দৈর্ঘ্য ২৬২ মিটার।   প্রস্থ ৬২ মিটার। সব মিলিয়ে এই রণতরীতে রয়েছে ১৪টি ডেক আর ২,৩০০টি কামরা। নাবিক-সহ মোট ১,৭০০ জন থাকতে পারবেন আইএনএস বিক্রান্তে৷ মহিলা অফিসারদের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যবস্থা।

গতিতেও দুরন্ত বিক্রান্ত৷ এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২৮ নটিক্যাল মাইল। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী যুদ্ধজাহাজের গতিবেগের থেকে ঘণ্টায় ৭ নটিক্যাল মাইল কম। বারবার জ্বালানি ভরার সমস্যাও নেই বিক্রান্তের৷ এক বার জ্বালানি ভরা হলে সাড়ে সাত হাজার নটিক্যাল মাইল অতিক্রম করতে পারে এই রণতরী। অর্থাৎ এক বারের জ্বালানিতে ভারতের নৌসীমা বরাবর দু’বার যাতায়াত করতে পারবে এই যুদ্ধ জাহাজ।

বিক্রান্তের গুণে প্রশংসায় পঞ্চমুখ রণতরী বিশেষজ্ঞরাও। তাঁদের কথায়, ‘‘বিক্রান্ত যেন সমুদ্রে ভাসমান পুরদস্তুর ১৮ তলা একটি বাড়ি৷ আধুনিক প্রযুক্তিতে পরিপূর্ণ। এর পরতে পরতে প্রযুক্তির বিস্ময়৷’’ 

প্রায় ২১ হাজার টন উন্নত মানের ইস্পাত দিয়ে নির্মিত হয়েছে আইএনএস বিক্রান্ত। যা দিয়ে অন্তত তিনটি আইফেল টাওয়ার তৈরি করা যায়। বিক্রান্তের ছাদে রয়েছে বিশাল বিমানঘাঁটি৷ শত্রু নিধনে সেই ভাসমান বিমানঘাঁটি থেকে উড়ে যাবে নৌবাহিনীর যুদ্ধবিমান। এই বিমানপোত আকারে প্রায় দু’টি ফুটবল মাঠের সমান৷ রয়েছে বিমান টেক অফের জন্য দু’টি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের রানওয়ে। বিমানের গতি রোধ করার জন্য রয়েছে তিনটি অ্যারেস্টার ওয়্যারও। এক সঙ্গে ৩০টি যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টার ওঠানামা করতে পারবে বিক্রান্তের বিমানপোত থেকে। সমুদ্রের বুকে নিয়ন্ত্রণ কায়েম রাখতে এমন একটি রণতরী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ যা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দেশের শক্তিবৃদ্ধি করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

বিক্রান্ত ভারতীয় নৌবাহিনীতে যোগ দিলে শুধু ভারতের নৌশক্তিই বৃদ্ধি পাবে না, ভারতের হাতে চলে আসবে দু’টি ভাসমান বিমানঘাঁটি— প্রথমটি আইএনএস বিক্রমাদিত্য এবং দ্বিতীয়টি আইএনএস বিক্রান্ত। 

এদিকে, ভারত মহাসাগরে ক্রমেই নিজেদের উপস্থিতি বাড়িয়ে চলেছে চিন। এই মুহূর্তে বেজিং-এর হাতে রয়েছে হাতে রয়েছে দু’টি ভাসমান বিমানঘাঁটি। তবে গোয়েন্দা সূত্রে খবর, খুব শীঘ্রই ভারত মহাসাগরে আরও একটি ভাসমান বিমানঘাঁটি রাখতে চলেছে চিন। ভারতীয় নৌবাহিনীও তাদের তৃতীয় ভাসমান বিমানঘাঁটির জন্য আবেদন জানিয়েছে। তবে বিক্রান্ত নৌসেনায় যুক্ত হলে একলাফে জলসীমায় ভারতের  শক্তি অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে বলে  মনে করা হচ্ছে।

২০০৬ সালে শুরু হয় পুরনো বিক্রান্ত থেকে নতুন বিক্রান্ত তৈরির কাজ৷ তার পর থেকে অসংখ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে নতুন বিক্রান্তকে। আপাতত নৌবাহিনীতে তার অন্তর্ভুক্তির অপেক্ষা৷ এর পর ভারতও সেই হাতেগোনা সাতটি দেশের তালিকাভুক্ত হবে যে সকল দেশের নিজস্ব রণতরী বানানোর ক্ষমতা রয়েছে। এর আগে নিজস্ব রণতরী তৈরি করেছে রাশিয়া, আমেরিকা, চিন, ব্রিটেন , ফ্রান্স এবং ইতালি৷