নজরে নির্বাচন: ফের জঙ্গলমহল সফরে মুখ্যমন্ত্রী, লক্ষ্য জমি পুনরুদ্ধার?

নজরে নির্বাচন: ফের জঙ্গলমহল সফরে মুখ্যমন্ত্রী, লক্ষ্য জমি পুনরুদ্ধার?

baf351175c9ae1ce80cd409ea342075f

তপন মল্লিক চৌধুরী :  ক্ষমতায় এসে উন্নয়নে কার্পন্য রাখেন নি। তা সত্ত্বেও ঊনিশের লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গ এবং জঙ্গলমহল তাঁর দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল। এবার সেই হারানো জমি ফিরে পেতেই কোমর বেঁধে ময়দানে নেমে পড়েছেনখোদ দলের সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত করোনা আবহেই উত্তরবঙ্গ সফরের সূচি ঠিক ছিল। তবে খারাপ আবহাওয়ার কারণে তা বাতিল হয়। এরপর গত ১লা অক্টোবর উত্তরবঙ্গের ৫ জেলার সঙ্গে তিন দিনের প্রশাসনিক বৈঠক সেরে কলকাতায় ফেরেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর আর বিলম্ব না করেই আগামী কাল ও পরশু জঙ্গলমহল সফরে বেরোচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।

ঘটনাচক্রে, উত্তরবঙ্গের মতো যেখানে গত লোকসভা ভোটের ফলাফলতৃণমূলকে নিরাশ করেছিল তার নিরিখে নিজের জেলা সফরের সূচি ঠিক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যাতে ভোটের আগে সেখানে প্রশাসনিক কাজকর্মে গতি আসে। পাশাপাশিই, ভোটের আগে আরও এক বা একাধিকবার যাতে তিনি ওই জেলাগুলিতে ফিরে গিয়ে কাজকর্মের অগ্রগতির খতিয়ান নিতে পারেন।

করোনা আবহেই উত্তরবঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠক সেরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গ থেকে পদ্মবাগান সাফ করে ফেলতে সেখানকার ভোটব্যাঙ্ক তফসিলি জাতি-উপজাতিদের অভাব-অভিযোগ মেটানোর জন্য মমতাআধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন। গত লোকসভা নির্বাচনে এই আদিবাসী ভোটব্যাঙ্কই ঘাসফুলের জায়গায় পদ্ম ফুটিয়েছিল।তাই উত্তরবঙ্গে তৃণমূলেরঝুলি শূন্যই থেকে গিয়েছিল।একুশের লক্ষ্যে সেই আদিবাসীদেরই কাছে টানতে মরিয়া মমতা কাল রওনা দেবেন জঙ্গলমহল সফরে। সব ঠিক থাকলেমঙ্গলবার জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে পা রাখছেন মমতা।

উত্তরবঙ্গের মতো জঙ্গলমহলে ঘাসফুল ফোটাতে ব্যর্থ শাসকদলতৃণমূলের হাতছাড়া হয় ঝাড়গ্রামমেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো আদিবাসী অধ্যুষিত কেন্দ্রগুলি।পশ্চিম মেদিনীপুরে শুধুমাত্র ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলজয় পায়। লোকসভায় এই দুই জেলায় ভরাডুবির পর জেলা সফর শুরু করেছেন মমতা। নবান্নের খবর অনুযায়ী, বিধানসভা নির্বাচনের আগে এটাই সম্ভবত মুখ্যমন্ত্রীর দুই জেলায় শেষ প্রশাসনিক সফর। ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রশাসনিক কর্তা, পুর কর্তৃপক্ষ, পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের সঙ্গে রিভিউ বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। মনে করা হচ্ছে, উত্তরবঙ্গের মতো জঙ্গলমহলের এই দুই জেলায় নির্বাচনের আগে কল্পতরু হবেন মমতা। আদিবাসীদের জন্য ঢালাও প্রকল্পের ঘোষণা করতে পারেন। 

করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে জঙ্গলমহল সফরে সমস্ত বিভাগের কর্তাদের বৈঠকে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। জেলার তৃণমূল নেতারাও যেন দলনেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে না আসেন, সে বিষয়েও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নবান্ন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও কৃষি, পঞ্চায়েত, সেচ, ভূমি, স্বরাষ্ট্র সচিব এবং মুখ্যসচিবই প্রশাসনিক বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। বাকিরা ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেবেন। ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমেই মুখ্যমন্ত্রী জনপ্রতিনিধিদের থেকে জেলার সমস্যার বিষয়ে, উন্নয়নের কাজের অগ্রগতির খোঁজ নেবেন। জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, সড়কপথেই দুদিনের জঙ্গলমহল সফর সারবেন মুখ্যমন্ত্রী। বিধানসভা ভোটের নিরিখে মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

উল্লেখ্য, উনিশের লোকসভা ভোটে জঙ্গলমহল এলাকায় কার্যত প্রতিটি কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থীদের হারিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন বিজেপি প্রার্থীরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে জঙ্গলমহলে ব্যাপক উন্নয়ন সত্ত্বেও কেন এই ফলাফল, সেই নিয়ে রীতিমতো বৈঠকে বসেছিল দলীয় নেতৃত্ব। তবে, এবার একুশের ভোটের আগে হারানো জনসমর্থন ফেরাতে নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসেবে প্রশান্ত কিশোরকে এনেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন পিকের পরামর্শেই জঙ্গলমহলের তৃণমূলের উপর বিশ্বাস ফেরাতে শীঘ্রই ‘তফসিলির সংলাপ’ জনসংযোগ কর্মসূচি শুরু করবে তৃণমূল।

মঙ্গলবার বিকেতা মমতা খড়্গপুরে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন। উল্লেখ্য, গত লোকসবা ভোটে খড়্গপুর আসনটি জিতেছিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। যদিও তার পর উপ নির্বাচনে খড়্গপুর বিধানসভা আসনটি তৃণমূল বিজেপিীর থেকে  ছিনিয়ে নেয়।  প্রসঙ্গত, দিলীপই ছিলেন ওই আসনের বিধায়ক। তিনি জিতে সাংসদ হওয়াতেই আসনটিতে ভোট হয়েছিল। প্রশাসনিক বৈঠকের জন্য মমতার স্থান নির্বাচনে স্পষ্ট— দিলীপের দুর্গে দাঁড়িয়েই তিনি সরাসরি চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *