তপন মল্লিক চৌধুরী : দায়িত্বপাওয়ারপর দলের প্রথম ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীবলেছিলেন, বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের সমঝোতাকে নিচু তলা পর্যন্তপৌঁছালেই খেলা ঘুরে যাবে। এর জন্য রাজ্য থেকে শুরু করে ব্লক স্তর পর্যন্ত এখন যৌথ কর্মসূচি বাড়ানোরকথাবলেছিলেনতিনি।এমন পরামর্শের কারণ,বাম ও কংগ্রেসের জোট ঠিকমতো হলে রাজ্যে বিধানসভা ভোটের ছবি অন্য রকম হয়ে উঠতে পারে।
সেই বৈঠকেইরাজ্যের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে কিভাবে এগোনো হবে তা নিয়ে একপ্রস্থ আলোচনা হয়। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের অভিজ্ঞতা ব্যাখ্যা করতে অধীরবাবু বলেছিলেন, সে বার রাজ্যে বাম ও কংগ্রেসের সমঝোতা হলেও আসন ভাগাভাগি ঠিকঠাক হয়নি। সে কারণে আসনের নিরিখে বাম ও কংগ্রেস বড় সাফল্য পায়নি। তবে জোট তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিকল্পের বাতাবরণ তৈরি করতে পেরেছিল বলেই বিজেপি তেমন ভাবে মাথা তুলতে পারেনি। পরে সমঝোতা ঠিকমতো না হওয়ায় বিজেপি তার ফায়দা তোলে।অধীরবাবুর বিশ্বাস, এবারও যদি আন্তরিক ভাবে রাজনৈতিক ও নির্বাচনী সমঝোতা বাম-কংগ্রেস করতে পারে তবে কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসক দলকেই টক্কর দেওয়া সম্ভব।
অধীরবাবুর ব্যাখ্যা, এখন বাংলার মানুষ তৃণমূলের বিকল্প খুঁজছেন। আবার বিজেপি কেন্দ্র এবং অন্যান্য রাজ্যে কী করছে, সেটাও মানুষ নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারছেন। বাম ও কংগ্রেসের সামনে এটাই সুযোগ সুযোগ রাজ্যে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ বিকল্প গড়ে তোলার।
এরঠিক এক মাসের মাথায় শুক্রবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী দলের প্রথম সারির পাঁচ নেতাকে নিয়ে কলকাতায় বৈঠক ডাকেন। বৈঠকের পর দিন মূল্যবৃদ্ধি, করোনা পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, বিদ্যুতের অস্বাভাবিক দাম, বিরোধীদের কণ্ঠরোধ এবং বেড়ে চলা বেকারত্বের প্রতিবাদে শহরে কংগ্রেসের মিছিলও হয় তাঁর নেতৃত্বে। এরপর বিধান ভবনে কাল বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, বিরোধী দলের সচেতক মনোজ চক্রবর্তী, পরিষদীয় দলের উপনেতা নেপাল মাহাতো এবং বিধায়ক তথা উত্তরবঙ্গের নেতা শঙ্কর মালাকারের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চান প্রদেশ সভাপতি।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, বামেদের সঙ্গে যৌথ কর্মসূচি এবং জোটের আসন ভাগাভাগির বিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেস কী চায়, তার রূপরেখা ঠিক হতে পারে কালকের বৈঠকে। প্রয়াত সোমেন মিত্রের জায়গায় অধীরবাবু প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যভার নিয়েছিলেন। বামেদের তরফে বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রেরা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গে আলোচনার অপেক্ষায় রয়েছেন, কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ কিছু প্রশ্নেরও মীমাংসার দরকার রয়েছে। প্রদেশ সভাপতির ঘোষিত কমিটির তরফে মান্নান ও প্রদীপবাবু ইতিমধ্যে বিমানবাবুদের সঙ্গে একপ্রস্ত কথা বলে যৌথ কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন। যে কর্মসূচিতে মঙ্গলবার ভিড় হয়েছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু কংগ্রেসের অন্দরেই মান্নান, প্রদীপবাবুদের সেই উদ্যোগ নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলা হয়েছে। অধীরবাবুর মুখোমুখি হয়ে তাই বাকি নেতারা দলের মনোভাব এবং নিজেদের দায়িত্ব স্পষ্ট করে বুঝে নিতে চান।
মান্নান ও প্রদীপবাবুর যুক্তি, বামেদের সঙ্গে ঠিকমতো জোট করে এগোতে পারলে বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী ভোটের ফায়দা তাঁরা নিতে পারবেন। কিন্তু জোট না থাকলে তার পুরো সুবিধা তুলবে বিজেপি। তৃণমূল-বিরোধী ভোটের সিংহ ভাগই তখন গেরুয়া শিবিরের দিকে চলে যেতে পারে। বাংলার রাজনীতিতে কংগ্রেসের কী অবস্থান হবে? তারা বামেদের সঙ্গে করেই তৃণমূল ও বিজেপির বিরোধিতা করবে, নাকি অন্য কোনও সমীকরণ তৈরি হবে রাজ্যে, তা নিয়েই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চাইছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। দুদিনের কর্মসূচির মধ্যেই অধীর ঠিক করে ফেলতে চাইছেন কংগ্রেসের অবস্থান।
বামেদের সঙ্গে যৌথ কর্মসূচি, নাকি অন্য সমীকরণ বামেদের সঙ্গে যৌথ কর্মসূচি ও জোটের আসন ভাগাভাগির নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের নেতারা কী ভাবছেন, তা জেনেই একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে চান অধীর। তার একটা স্বচ্ছ রূপরেখা তৈরি করেই কংগ্রেস ময়দানে নামবে। এই বৈঠক থেকে অধীর চৌধুরী কংগ্রেসের অবস্থান স্থির করে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছেন ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে।