মুখ নেই, মোদীর ‘কাট-আউট’ দেখিয়ে বাংলায় ভোটে জিততে পারবে বিজেপি?

মুখ নেই, মোদীর ‘কাট-আউট’ দেখিয়ে বাংলায় ভোটে জিততে পারবে বিজেপি?

দেবময় ঘোষ:  ভারতে নির্বাচনে সাফল্য পাওয়ার প্রচলিত রসায়ন রয়েছে। কোনও বিশেষ মুখকে ঘিরে এদেশের রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে। সুতরাং, প্রশ্ন যখন বিধানসভা নির্বাচন, তার প্রাথমিক প্রয়োজনীয়তা এবং সাফল্য পাওয়া বা ধরে রাখার অন্যতম রাস্তা মুখ-রাজনীতি। মুখ ছাড়া যে কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষে সঠিকভাবে নির্বাচনে লড়াই করা কঠিন হয়ে পড়ে।

তবে প্রচলিত রসায়নের চেনা ফর্মুলা প্রয়োগ না করে জয় পাওয়া অসম্ভব, এমন নয়।  অনেকক্ষেত্রে মুখের অভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে।  ভোটের ময়দানে কোন মুখ বিশ্বাসযোগ্য মুখ না পেলে এই রসায়নের পথে হেঁটে লাভ নেই – রাজনৈতিক দলগুলি তা বুঝতে দেরি করে না। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি মুখ-হীনতায় ভুগছে।  চলতি বছরের অগাস্ট মাসে বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (পশ্চিমবঙ্গের প্রধান পর্যবেক্ষক) কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেছিলেন, বিজেপি তখনও পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রিত্বের মুখ ঠিক করেনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে নির্বাচনে লড়বে বিজেপি। ক্ষমতায় আসার পর বিধানসভায় নির্বাচিত দল কেন্দ্রীয় পার্ট্র সঙ্গে আলোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করবে।

এর পর থেকেই বিজেপি নেতারা বলছেন, একুশে তাদের একমাত্ৰ মুখ নরেন্দ্র মোদি। বাংলার জনতা মোদিকে দেখেই ইভিএম-এ পদ্ম ফুল চিহ্নের পাশের বোতামে চাপ দেবে। কিন্তু, স্বাভাবিক প্রশ্ন, মোদি কী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হবেন, নাকি এখানে ভোটে দাঁড়াবেন? যদি উত্তর না হয়, তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়ে তার জায়গায় কে বসবেন ক্ষমতার চেয়ারে? বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন? এই উত্তর পরিষ্কার ভাবে না দিতে পারলে বাংলায় বিজেপির সুযোগ সীমিত থেকে যাবে। “ভোটে জিতব, তারপর দল দেখবে, কাকে মুখ্যমন্ত্রী করা যায় … ।” – এই যুক্তিতে বাংলার জনতা কতটা প্রভাবিত হবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

তৃণমূল না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় – বাংলার রাজনীতিতে কোন শব্দের জোর বেশি? উত্তরে হয়ত সংখ্যাধিক্য দ্বিতীয়টি পচ্ছন্দ করবেন।  সৃষ্টির থেকে স্রষ্টা রাজন্তিক গুরুত্ব বাংলার মানুষের কাছে বেশি। বাংলায় বাম বিরোধিতার প্রধান মুখ ছিলেন মমতা। এরপর প্রায় এক দশক বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দেন শুধুমাত্র মমতার কথা ভেবেই। অতিবড় তৃণমূল নেতাও এই যুক্তির বিরোধীতা করতে পারবেন না।

আজ একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন মাঝে মধ্যেই উঠে আসে, তৃণমূলে মমতার পর কে? হয়ত নিশ্চয়ই কেউ আছেন। তাকে সন্তর্পনে তৈরি করে রাখা হচ্ছে। হয়ত আমার আপনার নজরে বাইরে তিনি তৈরি আছেন। বা ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছেন। কিন্তু, একথা অস্বীকার করা যায় না, সেই ব্যক্তিত্বকে মমতার ছায়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। মমতার ছায়া’ই তার সব থেকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে মমতার বিরুদ্ধে এক শক্ত রাজনৈতিক মুখের প্রয়োজন। বিজেপি সেই মুখ খুঁজে পায়নি। অগত্যা মোদির কাট-আফট হাতেই প্রচারে নামতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *