তপন মল্লিক চৌধুরী : রাজনীতিতে জল্পনা সৃষ্টি করতে পারাটা রাজনীতিকের ক্ষমতার প্রসারতা নির্ধারণ করে। দলিয় রাজনীতিতে একজন সক্রিয় রাজনীতিক যখন আচমকা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন, তখনই তাঁকে ঘিরে তৈরি হয় জল্পনা৷ সম্প্রতি রাজ্য রাজনীতিতে জল্পনাতৈরি হয়েছিল শুভেন্দু অধিকারীকে ঘিরে, তিনি তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেসে গুরুত্ব হারিয়ে বিজেপিতে যাচ্ছেন-এমনটাই ছিল গুঞ্জন৷ সেই জল্পনার আপাত অবসান ঘটতে না ঘটতেই রাজ্য রাজনীতি সরগরম হয়ে উঠেছে বিজেপি নেতা রাহুল সিনাহাকে ঘিরে৷
মাত্র কয়েকদিন আগেই বিজেপি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নতুন তালিকা প্রকাশিত হয়৷ সেই তালিকা থেকে বাদ পড়েন বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা৷ পদচ্যুত হওয়ার পরই রাজ্য রাজনীতিতে রাহুল সিনহার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে চর্চা শুরু হয়৷ এর পরও কি তিনি তাঁর দলেই থাকছেন, নাকি তৃণমূলে দিকে হাঁটবেন! রাহুল সিনহা বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক হওয়া স্বত্বেও তৃণমূল থেকে আসা মুকুল রায়কে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়৷ শুধু তাই নয়, যে অনুপম হাজরা কয়েক দিন আগে রাহুল সিনিহার হাত ধরে বিজেপিতে এসেছিলেন, তাঁকে করা হয় কেন্দ্রীয় সম্পাদক৷ কেন্দ্রীয় মুখপাত্রের দায়িত্ব দেওয়া হয় রাজু বিস্তকে৷ অথচ দীর্ঘ দিন দলে থাকা রাহুল সিনহার নাম নেই তালিকায়৷
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছিল রাহুল সিনহা কি বিজেপিতেই থাকছেন, নাকি তৃণমূলে যাচ্ছেন? রাহুল সিনহা এ প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব সেদিন পর্যন্ত দেননি৷ শুধু বলেছিলেন, ‘যখন কিছু বলার সময় হবে, তখন আপনাদের জানাব৷’ তবে প্রাক্তন হয়ে যাওয়া জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা তাঁর ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি৷ তৃণমূলের দুই প্রাক্তন নেতা মুকুল রায় এবং অনুপম হাজরা বিজেপির নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পাওয়ার পর টুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট করে তিনি বলেছিলেন, ‘চল্লিশ বছর বিজেপির সেবা এবং বিজেপির একজন সৈনিক হিসেবে কাজ করে এসেছি। জন্মলগ্ন থেকে বিজেপির সেবা করার পুরস্কার এটাই। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা আসছে, তাই আমাকে সরতে হবে। এর থেকে বড়ো দুর্ভাগ্যের আর কিছু হতে পারে না। আমি এর বাইরে আর কিছু বলব না। পার্টি যে পুরস্কার দিল, সেই পুরস্কারের পক্ষে-বিপক্ষে কিছু বলতে চাই না৷’
দলের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সম্পাদক জানিয়েছিলেন, তিনি দলে থাকবেন কি না আগামী ১০-১২ দিনের মধ্যেসে বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন৷ যদিও এরপরই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁকে দিল্লি যেতে হয়েছিল৷ কিন্তু তাতে তাঁর ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি৷ তবে বিজেপি যুব মোর্চার ডাকে নবান্ন অভিযানে তিনি ও তাঁর অনুগামীরা একেবারেই নিষ্ক্রিয় ছিলেন৷ অনেকেই বলেছেন, বিজেপির প্রবীণ নেতার অনুপস্থিতি বিজেপির শক্তিকে অর্ধেক করে দিয়েছিল৷ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা আগেই বলেছিলেন, এখন অপেক্ষা ক্ষুব্ধ রাহুল সিনহা তাঁর দলকে দুশ্চিন্তায় ফেলতে কি বিস্ফোরণ ঘটান৷
রাহুল সিনহা জানিয়েছেন, তৃণমূলের দুই সম্মানীয় নেতা তাঁকে ফোন করেছিলেন৷ তাঁদের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে৷ তৃণমূলের দুই নেতা তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় সম্পাদকের পদ হারানোর পর আগামী দিনে তাঁর কী ভাবনা? বিজেপির প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সম্পাদকের এই কথাতেই জল্পনা তরতরিয়ে উর্ধগামী হয়েছে৷ একুশে বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিনি তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন, বাংলার রাজনীতিতে ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে এই আলোচনা৷ নিজের দলে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে কাজ করার পর তাঁর কপালে যে পুরস্কার জুটলো তাতে তিনি বিরাট ধাক্কা খেয়েছেন৷ এর বিপরীতে তিনি যে পাল্টা আঘাত দিয়েই ছাড়বেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ মুকুল রায় ও শুভেন্দু অধিকারীর পর রাহুল সিনহার দলবদল নিয়ে চর্চাই এখন বাংলার রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু৷