চাঁদের মাটি ছোঁয়ার প্রস্তুতি, যাদবপুরের হাত ধরে চাঁদে নামবে ইসরোর চন্দ্রযান

চাঁদের মাটি ছোঁয়ার প্রস্তুতি, যাদবপুরের হাত ধরে চাঁদে নামবে ইসরোর চন্দ্রযান

36e04749c8ba3a9bc2663a62056ef56d

কলকাতা:  ফের চাঁদের মাটি ছোঁয়ার প্রস্তুতি। দ্বিতীয় চন্দ্রযাত্রার ভুল শুধরে শুরু হবে তৃতীয় মিশন। যার নেপথ্য কুশীলব যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়৷ এই স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হাত ধরেই চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করতে চলেছে ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো)-এর চন্দ্রযান৷ যা মসৃণভাবে ল্যান্ড করবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর আঁধার পিঠে৷ কোনও যান্ত্রিক গোলযোগ হবে না বলেই আশ্বাস ইসরোর চেয়ারম্যান কে শিবনের৷ জোর কদমে চলছে মহাকাশযান তৈরির প্রক্রিয়া৷  

আরও পড়ুন- মহাকাশে মিলল ‘নতুন’ উল্কার খোঁজ, আতঙ্ক বাড়ছে পৃথিবীর

২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ এর অভিযানে রোভার সহ- বিক্রম নামের ল্যান্ডারটি চাঁদের পিঠে মুখ থুবড়ে পড়ে৷ এর পর আর কোনও চন্দ্রাভিযান হয়নি৷ বরং ‘ফুল প্রুফ’ প্রযুক্তি তৈরির জন্য যাদবপুরের দ্বারস্থ হয় ইসরো। এর মধ্যে হানা দেয় করোনা৷ অতিমারী পর্বে সেই কর্মকাণ্ডের গতি কিছুটা শ্লথ হয়ে গেলেও, প্রযুক্তি তৈরির কাজ বন্ধ করেননি বাংলার কৃতীরা৷ সেই কাজই এখন অন্তিম লগ্নে। ১০ নভেম্বর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক অমিতাভ গুপ্তর সঙ্গে ইসরোর প্রতিনিধিদের ভার্চুয়াল বৈঠক হওয়ার কথা৷ এই প্রকল্পের তত্বাবধানে রয়েছেন তিনিই৷ সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে চললে মহাকাশে ইতিহাস রচনার পথে এগিয়ে যাবে ভারত।

বিজ্ঞানীদের কাছে মিশন চন্দ্রযান-৩ আরও চ্যালেঞ্জিং৷ অবতরণে কোনও ভুলচুখ হলে চলবে না৷ ল্যান্ডারের মডেল তৈরি ও সেটির সফট ল্যান্ডিং করানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যাদবপুরের দুই অভিজ্ঞ গবেষকের হাতে৷ প্রসঙ্গত, যে কোনও মহাকাশযানের ক্ষেত্রেই ‘সফ্‌ট ল্যান্ডিং’  অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চাঁদ হোক বা অন্য কোনও গ্রহ, পৃষ্ঠদেশের সঙ্গে সংঘাত না ঘটিয়ে ধীরে ধীরে মহাকাশযানের অবতরণ করানোটাই প্রধান চ্যালেঞ্জ। ইসরোর চন্দ্রায়ন-২ প্রকল্পে যেটা সম্ভব হয়নি৷ বিক্রম ল্যান্ডার সফলভাবে অবতরণ করতে পারেনি৷ সেই ঝুঁকি এড়াতেই এবার যাদবপুরকে মহাকাশযানটির ল্যান্ডারের দায়িত্ব দিয়েছিল ইসরো। 

অমিতাভবাবুর কথায়,  মোট ১৩টি ‘থ্রাস্টার’ রয়েছে চন্দ্রযান-৩ এ। যা ওই মহাকাশযানের ফেদারটাচ ল্যান্ডিং নিশ্চিত করবে। এই থ্রাস্টারগুলির মাধ্যমে জ্বালানি নিঃসরণ কমিয়ে-বাড়িয়ে যানটিকে নিরাপদে নামানো সম্ভব হবে বলেই তিনি আশাবাদী। এটির নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে ‘হোভারিং’ টেকনোলজি। এর ফলে  অবতরণের আগে চিলের মতো একটি জায়গায় স্থির হয়ে অবতরণস্থলটিকে পর্যবেক্ষণ করবে৷ পরিস্থিতি অনুকূল বুঝলে থ্রাস্টারের মাধ্যমে সোজা নীচে নেমে আসবে। 

জ্বালানি সহ মহাকাশযানটির ওজন প্রায় আড়াই হাজার কেজি। জ্বালানিশূন্য অবস্থায় সেই মহাকাশযানেরই ওজন নেমে আসবে ৫০০ কিলোগ্রামে৷ চন্দ্রযান ৩-এ থাকবে বিশেষ ক্যামেরা এবং অন্যান্য প্রযুক্তি। এই যানের ইমেজিংয়ের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক সায়ন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘অবতরণস্থল থেকে সরে যাওয়ার পরেও মহাকাশযানটির অবস্থান বুঝতে অবতরণস্থলের আশপাশের অঞ্চলের বহু ছবির সংকলন রাখা হয়েছে। সেটি সরে গেলেও,  ওই ছবি দেখে তা বোঝা যাবে।’