তপন মল্লিক চৌধুরী : বুধবার বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফা ভোটে ১০৬৬ জন প্রার্থীর ভাগ্য পরীক্ষা হয়েগিয়েছে। এখনও দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফার ভোট বাকি। সেগুলি হবে ৩ এবং ৭ নভেম্বর। এবারের ভোট নিয়ে জনমত সমীক্ষার ফল অনুসারে বিহারে ফের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন নীতীশ কুমার। কিন্তু বিহার বিধানসভা ভোটে একটা বড় ফ্যাক্টর লোক জনশক্তি পার্টির নেতা চিরাগ পাসোয়ান। অক্টোবর মাসের গোড়াতেই চিরাগ পিতৃহারা হন। গত পাঁচ দশক ধরে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রামবিলাস দলিতদের নেতা হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি তৈরি করেছিলেন। আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদের জমানাতেও তা বজায় ছিল। রাম বিলাস পাসওয়ান কেন্দ্রীয়মন্ত্রী ছিলেন। বাবা রামবিলাসের অনুপস্থিতিতে বিহার বিধানসভা নির্বাচন চিরাগেরকাছে প্রথম রাজনৈতিক লড়াই।
রামবিলাস পাসওয়ানবেঁচে থাকাকালীন বিহার বিধানসভা নির্বাচনে এককভাবে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেয় লোক জনশক্তি পার্টি। যদিও চিরাগের অন্তরে নরেন্দ্র মোদীর ওপর সম্পূর্ণ সমর্থন রয়েছে তবুও তিনি এনডিএর ছত্রছায়ায় বিহার ভোটে লড়াই করতে চেয়েছেন। এর একমাত্র কারণ নীতীশ কুমার। তাই বিহার বিধানসভা নির্বাচনএলজিপির কাছে নীতিশের বিরুদ্ধে একার লড়াই। অন্যভাবে একা লড়াই করলেও চিরাগের জেহাদ বিজেপির বিরুদ্ধে নয়, নীতীশের বিরুদ্ধেই।
নির্বাচনী প্রচারে চিরাগ পাসোয়ান নীতীশকে হারানোর কথাই জোর দিয়ে বলছেন। চিরাগ নীতিশের নাম না করে বলছেন, ‘উনি আর কোনও ভাবেই সুশাসনবাবু নন৷’ এমনকি চিরাগ পাসওয়ান টুইটেও লিখেছেন, বিহার ফাস্ট, বিহারি ফাস্ট। এটাই এখন লোক জনশক্তি পার্টিরমন্ত্র। চিরাগ প্রচার সভায় বলছেন, দয়াকরে এলজেপিকে ভোট দিন। যেখানে এলজেপি দাঁড়িয়েছে সেখানে এলজেপিকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন। অন্য জায়গায় বিজেপিকে জেতান। চিরাগের ঘোষণা, বিহারের পরবর্তি সরকার হবে নীতীশ মুক্ত সরকার।
বিহার বিধানসভায় মোট আসন সংখ্যা ২৪৩টি৷ তার মধ্যে মাত্র ১৩৮ আসনে এবার প্রার্থী দিয়েছে এলজেপি৷ চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি নীতীশ কুমারের দল জেডিইউর বিরুদ্ধে ১২২টি আসনে প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে। আর গোটা বিহার বিধানসভায় মাত্র ৫টি আসনে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে এলজেপি। এখান থেকেও একটা বিষয় জলের মতো স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে এবারের বিধানসভা নির্বাচনেরলড়াইটা যতটানা আরজেডি কিংবা অন্যান্য বিরোধীদের বিরুদ্ধে, তার থেকেও অনেক বেশি মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে।
বিহারে বিধাবসভা নির্বাচনের আসন রফার সময় থেকেইবিজেপি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ভোটেজিতলে নীতীশই হবেন এনডিএর মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তাহলেও চিরাগ পাসওয়ান বা তাঁর দল এলজিপির বিরুদ্ধে বিজেপি সুর চড়াচ্ছে না কেন? রাজ্য রাজনীতিতে এ নিয়ে জল্পনা চলছে অনেক আগে থেকেই। নীতিশের বিরুদ্ধে চিরাগের চড়া সুর, নীতিশকে আক্রমণ এমনকি বিধানসভা ভোটে এলজেপি-র একা লড়ার সিদ্ধান্তএ সবের পেছনে বিজেপির হাত রয়েছে।
নীতীশকে সরাতে হবে- এই আওয়াজ উঠেছিল লকডাউনের আগেই। তখন থেকেই লোক জনশক্তি পার্টি এবং বিজেপির একটি অংশ শোর তুলে গোল পাকাচ্ছিল, যে নীতিশকে হটাতে হবে। প্রথম দিকে বিজেপিএতে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেনি। কিন্তু চিরাগ তার জায়গা থেকে এক চুল নড়েনি। জেপি নাড্ডার মধ্যস্থতাতেও চিরাগকে বোঝানো যায় নি। সে একাই নীতিশের বিরোধিতা চালিয়ে গেছে।
অক্টোবর মাসের গোড়াতে কেন্দ্রীয়মন্ত্রী রাম বিলাস পাসওয়ান মারা যান৷ এরপর এলজেপি প্রেসিডেন্ট হন তাঁর ছেলে চিরাগ৷ ইতিমধ্যে বিহার বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘন্ট প্রকাশিত হয়ে গিয়েছে। তার আগে নির্বাচনে লোক জনশক্তি পার্টির একা লড়াই করার সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। বিহার বিধানসভা নির্বাচনে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে বাবার অনুপস্থিতিতেও চিরাগ পাসওয়ান নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে পেরেছেন। করোনা পরিস্থিতিতে প্রচার বা জনসভায় চিরাগ একা তার দলের মুখ। স্বভাবতই বাবা রামবিলাস পাসওয়ানের মৃত্যুকে ইস্যু করে ফায়দা তুলতে মরিয়া চিরাগ। রামবিলাস অনুপস্থিত থাকলেও চিরাগকে ভয় পাচ্ছে জেডিইউ। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা স্বীকার করছেন এবারের বিহার নির্বাচনে রামবিলাস পাসোয়ানের পুত্র চিরাগ পাসোয়ান একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে।