বঙ্গ-বিজেপির ‘গৃহযুদ্ধ’ রুখতে কী বার্তা দেবেন ‘হেডস্যার’ অমিত শাহ?

বঙ্গ-বিজেপির ‘গৃহযুদ্ধ’ রুখতে কী বার্তা দেবেন ‘হেডস্যার’ অমিত শাহ?

দেবময় ঘোষ: নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই দু’দিনের কলকাতা সফরে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্য বিজেপির প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করতে আসবেন। সম্প্রতি, রাজ্য বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। মুকুল রায় – কৈলাস বিজয়বর্গীয় শিবিরের সঙ্গে দিলীপ ঘোষ শিবিরের দূরত্ব ক্রমবর্ধমান। কিন্তু, বিধানসভা নির্বাচনও আগুয়ান। উত্তরবঙ্গ নিয়ে বিজেপি যতটা আত্মবিশ্বাসী, দক্ষিণবঙ্গ নিয়ে ততটা নয়। দলের অন্তর্তদন্তে অন্তত তা-ই উঠে এসেছে। সেক্ষেত্রে, একথা অত্যুক্তি হবে না যে, বিবাদমান দুই শিবিরকেই সতর্ক করতে আসছেন ‘হেডস্যার’ অমিত।

রাজ্য বিজেপির এক সিনিয়ার নেতা বলেন, “মূলত সাংগঠনিক বৈঠক। বাঁকুড়া এবং কলকাতায় হবে। কার্যকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন।” ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে বিজেপিতে যোগদান করেন মুকুল রায়। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে তার সম্পর্ক সরলরেখায় চলেনি। মুকুল এবং মুকুলের হাত ধরে আসা নেতারা বিজেপিতে এখনও ‘তৃণমূলের লোক’। অন্যদিকে, প্রভাবশালী নেতা তথা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়’র আস্থা অর্জন করে দিলীপকে সময়ে সময়ে অস্বস্তিতে ফেলেছেন মুকুল। দলের নতুন রাজ্য কমিটিতে মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ মানুষ সংখ্যায় কম থাকলেও যুব মোর্চার সভাপতি সৌমিত্র খাঁ এবং মহিলা মোর্চার সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পালের মনোনয়ন মুকুলেরই সম্মতিতে হয়েছে বলে শোনা যায়।

মুকুল রায় এবং দিলীপ ঘোষের ‘অম্লমধুর’ সম্পর্ক রাজ্য রাজনীতির অন্যতম চর্চিত বিষয়, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ পদাধিকার বলে সংগঠনের মাথায়।আবার দিল্লির পার্টি ভোট করানোর ব্যাপারে মুকুল রায়ের উপর বেশি নির্ভরশীল। বিজেপির সাম্প্রতিক সাফল্যের পিছনে মুকুলের অবদান স্বীকার করে গিয়েছেন অমিত শাহ, জে পি নাড্ডা। ভোটে জিততে যে মুকুলকে লাগবেই তা জলের মত পরিষ্কার বুঝেছে কেন্দ্রীয় বিজেপি। অন্যদিকে, দীর্ঘদিন খেটেখুঁটে রাজ্যে নিজেকে বিজেপির ‘পোস্টার বয়’ তৈরি করেছেন দিলীপ। বিজেপি বলতেই লোকে দিলীপ ঘোষের কথা মুখে আনে। গ্রাম ঘাটে তার বিতর্কিত ‘ডায়লগ’ বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। কিন্তু ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার জন্য দিলীপের ‘ডায়লগ’ যথেষ্ঠ নয় – বরং প্রয়োজন বুথভিত্তিক সংগঠন তা শাহ-নাড্ডাকে বুঝিয়ে দেওয়ার দরকার নেই। সেখানেই ফের দ্বন্দ্ব বেঁধেছে মুকুল-দিলীপের।

কিছুদিন আগেই মুকুল রায় এমন বলেছিলেন বলে শোনা গিয়েছিল যে, বিজেপির জেলাস্তরের নেতারা কাজ করছেন না। নির্বাচনের বাকি ছয় মাস। কিন্তু তৈরি নয় বুথ ভিত্তিক সংগঠন। অনেক জায়গায় বুথ কমিটিই গড়ে ওঠেনি। জেলার সংগঠনের দায়িত্ব বর্তায় রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের উপর। সুতরাং মুকুলের উষ্মার মূল লক্ষ্য যে দিলীপ তা স্পষ্ট। স্বাভাবিক ভাবেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন দিলীপ। দিলীপের এক ঘনিষ্ট অনুচর নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘বর্গি দেশের এক উজির পশ্চিমবঙ্গে বারবার আঘাত হানছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে সঙ্গে আছে কিছু বর্গি পেয়াদা।’  এই বর্গি বলতে যে উনি কৈলাস বিজয়বর্গীয় কথা বলতে চাইছেন তা আর বুঝতে বাকি থাকে না। পরে অবশ্য তিনি ওই পোস্ট মুছে দেন। বর্গি পেয়াদা বলতে উনি মুকুল রায়কে বুঝিয়েছেন, তা স্পষ্ট।

বিধানসভা নির্বাচনমুখী রাজ্যে এই পরিস্থিতি বিদ্যমান ঠিক তা চান না অমিত শাহ। তাই তিনি দ্বন্দ্বের ইতি দেখতে আসছেন। যদিও পার্টির তরফ থেকে বলা হয়েছে সাংগঠনিক বৈঠক। যা বাস্তব। সত্য। কিন্তু এই সত্যের পিছনেও ওপর সত্য লুকিয়ে আছে। দলের দুই গোষ্ঠীর আড়াআড়ি বিভেদ এবং ক্ষয়ক্ষতি মেরামত করতে সময় দিতে হবে শাহ’কে। সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী কেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে দেখা যাবে। দক্ষিণবঙ্গে বিজেপির চারটি সাংগঠনিক অঞ্চল রয়েছে। রাড়বঙ্গ, হাওড়া-হুগলি-মেদিনীপুর, নবদ্বীপ এবং কলকাতা। ৫ নভেম্বর বাঁকুড়া শহরে রাড়বঙ্গ, হাওড়া-হুগলি-মেদিনীপুরের জন্য বৈঠক করবেন শাহ। কার্যকর্তারা থাকবেন। ৬ নভেম্বর কলকাতায় এবং নবদ্বীপের জন্য বৈঠক হবে কলকাতায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten + 20 =