বাংলায় ২০০ আসন কীভাবে পাবেন অমিত শাহ?

বাংলায় ২০০ আসন কীভাবে পাবেন অমিত শাহ?

462fd552ef9d2b549a6eb57a5965f5e3

দেবময় ঘোষ: পশ্চিমবঙ্গে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেয়ে ক্ষমতায় আসার কথা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে উপড়ে ফেলে রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে বলে মনে করেন অমিত। কিন্তু, কোন পরিসংখ্যানকে সামনে রেখে এই দাবি করছেন অমিত? বিজেপি কি রাজ্যে একক প্রচেষ্টায় দুই-তৃতীয়াংশ আসন (১৯৬টি) পেতে পারে? কীভাবে সেই সম্ভাবনা তৈরি হবে? রাজ্যে মত বিধানসভা আসন ২৯৪টি।

২০১৯ সালে শেষ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ১৮টি আসন জিতেছিল। ৪০.৬৪ শতাংশ ভোট তারা নিশ্চিত করেছে। যা ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের থেকে ২২.৭৬ শতাংশ বেশি। এই ব্যাপক ভোট বৃদ্ধি ইঙ্গিত করে কোনও কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষ বিজেপির দিকে ঝুঁকেছে। তা যে ধর্মীয় মেরুকরণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। লোকসভা নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে যদি বিধানসভায় বিজেপি, তৃণমূল, কংগ্রেস এবং বামদলগুলি ফলাফল বিচার করতে হয় তবে দেখা যাবে বিজেপি প্রায় ১২২টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। ৪৩.৬৯ শতাংশ ভোট নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ২২টি আসনে জিতেছিল। বিধানসভার ফলাফল বিচার করলে ১৬৩টি আসলে তৃণমূলের এগিয়ে থাকার কথা। আপাতদৃষ্টিতে লোকসভার নিরিখে বিচার করলে বোঝা যায় তৃণমূল অন্তত ৪১টি আসনে এগিয়ে রয়েছে।

কিন্তু এখানে দুটি বিষয় খেয়াল করা জরুরি। ১) বাম-কংগ্রেস জোট এবং পাহাড়ে গোর্খা-নেপালি জনজাতির ভোট। ২) ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের পর রাজ্যে পরবর্তী ভাগের রাজনীতি। পরিসংখ্যান বলছে, কংগ্রেসের ৫.৬৭ শতাংশ এবং সিপিএমের ৬.৩৪ শতাংশ ভোট পরিস্থিতির সঠিক ব্যাখ্যা করছে না। কারণ, ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় সিপিএম (১৬.৭২ শতাংশ) এবং কংগ্রেস (৪.০৯ শতাংশ) ভোট কমে গিয়েছে। কিন্তু, এই (১৬.৭২+৪.০৯)=২০.৮১ শতাংশ ভোট কথায় গিয়ে পৌঁছল, তা নিয়ে সাম্প্রতিক অতীতে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হয়ে গিয়েছে। আলোচকদের একটি বৃহৎ অংশের মতে ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের থেকে বিজেপি ২২.৭৬ শতাংশ বেশি ভোট পাওয়াটা পরিসংখ্যান অথবা রসায়ন যাই বলুন না কেন, এইখানেই লুকিয়ে রয়েছে। সিপিএম এবং কংগ্রেসের মিলিতভাবে যে ২০.৮১ শতাংশ ভোট কম পেয়েছে, তা চলে গিয়েছে বিজেপির দিকে।

অল্প কিছু গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের দিকেও। সিপিএম, অন্যান্য বাম দলগুলি এবং কংগ্রেসের ভোটব্যাংক ভোট কি বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপি লুঠ করতে পারবে? অথবা, বাম-কংগ্রেস কী নিজের ভোটক্ষয় রোধ করতে পারবে? এই সব প্রশ্ন উত্তর অমিত শাহের দুই-তৃতীয়াংশ বাস্তবায়নের পক্ষে খুবই উপযোগী। শক্তিশালী বাম-কংগ্রেস অমিত শাহের স্বপ্ন কে ছাড়খার করতে পারে। মনে রাখা প্রয়োজন, পাহাড়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে দ্বিধাবিভক্ত ছিল। একদিকে, পলাতক বিমল গুরুং এবং রোশন গিরির সমর্থন ছিল বিজেপির দিকে। অন্যদিকে, তৃণমূল প্রভাবিত মোর্চা নেতা বিনয় তামাং ছিলেন তৃণমূলের দিকে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গুরুং পাহাড়ে ফিরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চান। সেক্ষেত্রে, প্রশ্ন আসবে, পাহাড় কি এখনও গুরুংকেই ‘দেবতা’ হিসাবে মনে? নাকি গুরুং-তামাংয়ের লড়াইয়ে পাহাড়ি জনতার ভোট পকেটে পুরবে অন্য কেউ।

অঙ্ক বলছে মমতা ১৮টি আসনে হেরে গিয়েছেন তবে ভোটে হারেননি – ৪৩.৬৯ শতাংশ ভোট তাঁর দিকে ছিল। বিজেপি ৪০.৬৪ শতাংশ ভোট তাঁকে অবশ্য চিন্তায় রেখেছিল। কিন্তু, তা ছিল কোভিড এবং আমফান পূর্ববর্তী সময়। বাঙলার রাজনীতিতে কোভিড এবং আমফান বড় ভূমিকা গ্রহণ করেছে। শাসক দলের বিরুদ্ধে বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। যদিও অতীতে নারদা বা সারদা কেলেঙ্কারির মত দূর্নীতি রাজনৈতিক ভাবে তৃণমূলকে কোণঠাসা করলেও ভোটযন্ত্রে তার শূন্য প্রভাব পড়েছে। তা নিয়ে মমতা চিন্তিত নয়। কিন্তু, মেরুকরণের চাল মমতা ২০১৯ সালে বুঝে উঠতে পারেনি। সেক্ষেত্রে, মেরুকরণকেই অস্বীকার করার কথা ভাবতে পারবেন না মমতা। কারণ তাতে আখেরে তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *