কলকাতা: আকাশজুড়ে আতশবাজির রোশনাই৷ যেন কোনও রঙের মজলিস৷ কালো আকাশের ক্যানভাসে রঙের আঁকিবুকি। যদিও এহেন দৃশ্য প্রতি বছরই দেখা যায়। মহাকাশ প্রেমীদের কাছে এ ছবি অচেনা নয়। ফি বছর ১৯ এপ্রিল থেকে ২৮ মে রাতের আকাশে হয় উল্কা বৃষ্টি। এবারও ব্যতিক্রম নয়। তবে, আজ অর্থাৎ শনিবার উল্কাবৃষ্টির দৃশ্যমানতা থাকবে সবচেয়ে ভালো। মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, যে সময় আকাশে আলোর পরিমাণ কম থাকে, সেই সময়ই সবচেয়ে ভালো দেখা যায় উল্কাবৃষ্টি। তাই প্রকৃতির এই অপরূপ রূপ দেখার সবচেয়ে উপযোগী সময় হল ভোর রাত্রি। এই উল্কাবৃষ্টির পোশাকি নাম ‘এটা অ্যাকুয়ারিডস’। এই উল্কাবৃষ্টির আরও একটি বিশেষত্ব রয়েছে৷ এর সঙ্গে রয়েছে হ্যালির কমেটের অংশ বিশেষ। এপ্রিল ও মে মাসের এই সময়েই ‘এটা অ্যাকোয়ারিড’ উল্কা ছুটে আসে পৃথিবীর দিকে। শনিবার রাতের আকাশে ঝর্নার মতো আলো ছড়াবে এই উল্কা।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছে, পৃথিবীর খুব কাছাকাছি চলে এসেছে ‘এটা অ্যাকোয়ারিড’। শুক্রবার রাতের পর থেকেই আকাশজুড়ে আলোরফুলঝুড়ির মতো ভেসে বেড়াবে উল্কার ফুলকি। ঘণ্টায় কমকরে ১০ থেকে ১৫টি উল্কা আকাশ থেকে ঝরে পড়তে দেখা যাবে। তবে রাতে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে উল্কাবৃষ্টি দেখার সৌভাগ্য হবে না৷ এই দৃশ্য সবচেয়ে বেশি উপভোগ করা যাবে ভোররাতের দিকে৷ উত্তর গোলার্ধ থেকে সবচেয়ে ভাল দেখা যাবে এই উল্কাবৃষ্টি।
এই উল্কাবৃষ্টি আসলে কী? এমপি বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়ামের সায়েন্টিফিক অফিসার শিল্পী গুপ্তর কথায়, সৌরমণ্ডলের বাইরের অংশে বরফ জমাট বাঁধে। ধুলিকণা সহ সেই বরফের গোলা সৌরমণ্ডলের ভিতরে প্রবেশ করলে, সূর্যের তাপে বরফ গলে যায়৷ বেরিয়ে পড়ে পাথরের টুকরো৷ এছাড়াও মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝখানে গ্রহাণুর বলয় থেকেও এমন বরফের গোলা ছুটে আসে। যেগুলি সূর্যের তাপে ভেঙে গুঁড়ো হয়ে যায়। ওই বরফগোলার পথে পৃথিবী প্রবেশ করলে, ওই টুকরোগুলি মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। কিন্তু, বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে বরফের গোলাগুলি জ্বলে ওঠে। সেই জ্বলে ওঠা কণাগুলিই দেখা যায় উল্কাবৃষ্টি হিসেবে৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, অনেকগুলি পাথরের টুকরো একসঙ্গে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে বলে তা বৃষ্টির মতো দেখতে লাগে। আকাশে গ্রহরাজ শনির কিছুটা উত্তর দিকে এই উল্কাবৃষ্টির রেডিয়েন্ট পয়েন্ট। সেখান থেকেই উৎপত্তি হয় উল্কাবৃষ্টির।
উল্কাবৃষ্টির কোনও নির্দিষ্ট সময় থাকে না। যে কোনও সময়, আকাশের যে কোনও প্রান্তে তা দেখা যেতে পারে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, দক্ষিণ গোলার্ধে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে উল্কাবৃষ্টি দেখা যাবে। সেখানে ঘণ্টায় ১০০টিরও বেশে আলোর বল আকাশ থেকে টুপ করে খসে পড়বে। তবে এখানে ঘণ্টা ৩০ থেকে ৫০টি আলোর বল খসে পড়তে দেখা যাবে৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>