১৯৯৯ সাল। ভারতের ইতিহাসে এই বছরটির গুরুত্বও কম কিছু নয়। কারণ এই বছরই ২৬ জুলাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এক অসম লড়াই জিতে কার্যত অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছিল আমাদের দেশ। আর তাই প্রতি বছরই ২৬ জুলাই তারিখটিকে কার্গিল বিজয় দিবস হিসাবে উদযাপন করা হয়। এই দিনটি ভারতের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন হওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেক দেশবাসীর কাছে অত্যন্ত গর্বেরও বটে। আজ সেই বিজয় দিবসই পদার্পণ করল ২৩ বছরে। দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে দেশের জন্য এই যুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী ভারতীয় বীরদের স্মরণে উদযাপিত হচ্ছে এই কার্গিল বিজয় দিবস।
একনজরে কার্গিল বিজয় দিবসের ইতিহাস
স্বাধীনতার পর থেকে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ নতুন কিছু নয়। ১৯৯৯ এর আগে ১৯৭১ সালেও ভারত পাকিস্তান একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। তারপর থেকেই শিয়াচেন হিমবাহের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যেকার সংঘর্ষ ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। কিন্তু সেই সংঘর্ষই যুদ্ধে রূপান্তরিত হয় ১৯৯৯ সালের মে মাসে যখন পাকিস্তানী সশস্ত্র বাহিনী কাশ্মীর এবং লাদাখের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন করতে নিয়ন্ত্রণ রেখায় প্রবেশ করে। তারা ভারতীয় সৈন্যদের উপর নজরদারি চালানোর জন্য ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করে এবং কার্গিলের পর্বতশ্রেণী দখল করে। পাকিস্তানের দখল করা সেই পর্বতশ্রেণী পুনর্দখল করতেই ভারত সরকার ঘোষণা করে অপারেশন বিজয়। প্রায় দু মাস ধরে পাহাড়ের ধাপে ধাপে চলে এই যুদ্ধ। আর তাতে পাকিস্তানি সেনাদের পরাজিত করে এক অসম লড়াই জিতে সমগ্র বিশ্বের কাছে এক উদাহরণ তৈরি করেছিল ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী। দু মাস ধরে কার্যত তিনটি পর্বে চলেছিল এই যুদ্ধ। প্রথম পর্যায়ে, পাকিস্তানি বাহিনী টাইগার হিল এবং অন্যান্য পোস্টে নিজেদের অবস্থান করে ভারতীয় ভূখণ্ডে আক্রমণ করে। দ্বিতীয় পর্যায়ে, ভারতীয় সেনাবাহিনী পরিবহন রুট দখল করে এবং পাকিস্তানি আক্রমণাত্মক লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করে প্রতিক্রিয়া জানায়। কার্গিল যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে, ভারতীয় সেনাবাহিনী ভারতীয় বিমান বাহিনীর সহায়তায় পাকিস্তানি সেনাদের সরিয়ে দেওয়ার মিশন বিজয় সম্পূর্ণ করতে সক্ষম হয়।
২৬ শে জুলাই ১৯৯৯ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিজয় ঘোষণা করে কার্গিলের শৃঙ্গগুলি পুনদখল করতে সফল হয়। তবে এই যুদ্ধ কেড়েছিল বহু বীর সেনার প্রাণ। সরকারি হিসাব বলে কার্গিল যুদ্ধে ভারতের ৫২৭ জন সৈনিক তাঁদের প্রানাহুতি দিয়েছিলেন। ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রা ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তিনি তাঁর একার চেষ্টায় কার্গিলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গটি দখল করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে এই অভিযানে তিনি পাকিস্তানি সেনার গুলিতে গুরুতর জখম হন এবং পরবর্তীতে শহীদ হন। তাঁর এই বীরত্বের জন্য ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রাকে ভারতের সর্বোচ্চ বীর পুরস্কার পরমবীর চক্রে ভূষিত করা হয়। এছাড়া সেদিন থেকেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্ডিয়া গেটে শহীদ সেনাদের শ্রদ্ধায় অমর জওয়ান জ্যোতির উন্মোচন করেন। প্রতিবছরই এই দিনে কার্গিল যুদ্ধের শহীদ যোদ্ধাদের স্মরণে ইন্ডিয়া গেটে এই যুদ্ধের স্মৃতিসৌধের সামনে পতাকা উত্তোলনের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।