নয়াদিল্লি: তাঁর অপরূপা৷ লাস্যময়ী৷ রূপের পাশাপাশি কথায় মায়াজালে ফেঁদেছিলেন প্রেমের ফাঁদ৷ আর সেই ফাঁদেই অজান্তে পা দিয়ে ফেলেন বছর ২৪-এর জেনা জওয়ান শান্তিময় রানা৷ দুই তরুণীর সঙ্গে নিয়মিত হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ ছিল তাঁর৷ কথা হত ভয়েস কলেও৷ এমনকী তাঁরা ভিডিয়ো কলও করত৷ দুই তরুণীর রূপের নেশায় বুঁদ ছিলেন ওই জওয়ান৷ তাঁদের সঙ্গে আলাপচারিতার মাঝেই রেজিমেন্ট সংক্রান্ত বেশ কিছু স্পর্শকাতর তথ্য ভাগ করে নিয়েছিলেন রাজস্থানে কর্তব্যরত পশ্চিমবঙ্গের যুবক শান্তিময়৷ চরবৃত্তির অভিযোগ তাঁকে গ্রেফতার করল রাজস্থান পুলিশ৷
আরও পড়ুন- গ্রেফতার করতেই পারে ইডি, অর্থ তছরূপ মামলা ইস্যুতে ‘সুপ্রিম’ রায়
রাজস্থান পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল উমেশ মিশ্র জানান, সোশ্যাল মিডিয়ায় যে দুই মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল শান্তিময়ের তাঁদের একজনের নাম গুর্নুর কওর ওরফে অঙ্কিতা। অপরজনের নাম নিশা৷ অঙ্কিতা নিজেকে উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুরের বাসিন্দা বলে দাবি করেছিলেন৷ বলেছিলেন তিনি মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসে কর্মরত৷ নিশা নিজেকে মিলিটারি নার্সিং সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত বলে পরিচয় দেন৷ আর দুই তরুণীর কথাই চোখবুজে বিশ্বাস করে নিয়েছিলেন শান্তিময়৷ আদতে ওই দুই লাস্যময়ী ছিলেন পাক গুপ্তচর বাহিনী আইএসআই-এর এজেন্ট৷ শান্তিময়ের সঙ্গে প্রেমের মিথ্যে নাটক সাজিয়েছিলেন তাঁরা৷
২০১৮ সালে সেনায় যোগ দেন শান্তিময়৷ এর পরই শান্তিময়কে টার্গেট করেন ওই দুই লাস্যময়ী পাক এজেন্ট৷ ওই জওয়ানকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাঁর রেজিমেন্ট সম্পর্কে অনেক কৌশলগত তথ্য আদায় করতে শুরু করেন তাঁরা।শান্তিময় পুলিশকে জানান, দীর্ঘদিন ওই দুই মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাঁর৷ হোয়াটসঅ্যাপে রীতিমতো অডিয়ো ও ভিডিয়ো কল করতেন তাঁরা৷ পুলিশের দাবি, তথ্য দেওয়ার বদলে তাঁদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকাও পেতেন শান্তিময়। টাকার লোভেই গুরুত্বপূর্ণ ছবি এবং যুদ্ধ অনুশীলনের গোপন তথ্য এবং ভিডিয়ো ফাঁস করে দিয়েছিলেন ধৃত জওয়ান৷
প্রাথমিক তদন্তের পর, মঙ্গলবার শান্তিময় রানাকে গ্রেফতার করে রাজস্থান পুলিশ। তাঁর মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করে তার প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ করা হয়েছে। শান্তিময়ের বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ধারা অনুসারে মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই সাইবার ক্রাইম নিয়ে সতর্ক হওয়ার বার্তা দেওয়া হচ্ছে৷ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ঝুঁকি নিয়ে সেনা জওয়ানদের বারবার সতর্ক করেছে ভারতীয় সেনা। সাবধান করে বলা হয়েছিল, সোশ্যাল মিডিয়া বা হোয়াটসঅ্যাপে প্রেমের ফাঁদ পাততে পারে আইএসআই এজেন্টরা। কিংবা অন্য কোনওভাবে ভারতীয় সেনা জওয়ানদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হতে পারে৷ সেই প্রেক্ষিতেই ২০২০ সালে সেনা অফিসারদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। নৌসেনা কর্তাদের স্পষ্ট বলা হয়েছে, নৌঘাঁটিতে বা ডকইয়ার্ডে স্মার্টফোন নিয়ে আসা যাবে না৷ হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো নিরাপদ নয় বলেও বহুবার সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি, জুম-সহ বেশ কিছু চিনা অ্যাপ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর পরেও আইএসআই এজেন্টদের হানিট্র্যাপ এড়াতে পারলে না শান্তিময়৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>