ঘরে বাইরে প্রবল চাপে সপ্তমবারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

ঘরে বাইরে প্রবল চাপে সপ্তমবারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

তপন মল্লিক চৌধুরী : সপ্তমবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হয়েও কি নীতীশ কুমার স্বস্তিতে আছেন? বিজেপিবিহারবিধানসভানির্বাচনেরআগে যে কথা দিয়েছিল সে কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী নীতিশের দল জেডিইউ বিজেপির তুলনায় ৩১ টি আসন কম পেয়েছে। যেখানে জোটসঙ্গী বিজেপির ঝুলিতে ৭৩টি আসন, সেখানে জেডিইউ-র দখলে মাত্র ৪৩টি আসন। কেবল তাই নয়, বিহার বিধানসভা ভোটের ফল অনুযায়ী নীতীশ কুমারের দল বিহারের তৃতীয় শক্তি। আসন জয়ের দৌড়ে তাদের চেয়ে আরজেডিও ৩২টি আসনে এগিয়ে। কিন্তু তা স্বত্বেও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হলেন নীতীশ কুমার। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্শিতে বসাল বিজেপি। এই ঘটনা সংসদীয় রাজনীতিতেনজিরবিহীন বলা যায়। কিন্তু রাজনীতির বিশেষঙ্গরা এই ঘটনাকে কেবল নজিরবিহীন বলেই ছেড়ে দিচ্ছেন না। তারা এই ঘটনার পিছনে অনেক কারণ খুঁজে পাচ্ছেন এবং বিজেপির এই পদক্ষেপকেতাঁরা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেও দাবি করছেন।

সেসব কথায় যাওয়ার আগে নীতীশ কুমারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগের ছ’টি ধাপ একটু দেখে নেওয়া যেতে পারে। নীতীশ প্রথম বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন নতুন শতাব্দীর ৩ মার্চ। কিন্তু প্রথমবার তিনি তাঁর মুখ্যমন্ত্রীত্বের মেয়াদ টেকাতে পেরেছিলেন মাত্র এক সপ্তাহেরও কম সময়। সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর কুর্শি নীতীশ কুমারের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। এর পাঁচ বছর পরনীতীশ কুমার দ্বিতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন বিজেপি-র সমর্থনে। এরপর তৃতীয়বার ২০১০ সালে। কিন্তু চতুর্থবার অর্থাৎ ২০১৪-তে লোকসভা নির্বাচনে নীতিশের দল জেডিইউ খুব খারাপ ফল করে। তার পরই মুখ্যমন্ত্রিত্বের পদ থেকে ইস্তফা দেন নীতীশ। তাঁর জায়গায় মুখ্যমন্ত্রী হন জিতন রাম মাঁঝি। তবে এর ঠিক ১৫ মাসের মাথায় চতুর্থবার বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর আসনে ফিরে আসেন নীতীশ। পরবর্তীতেনীতীশের দলআরজেডি-র সঙ্গে জোট বেঁধে বিপুল ভোটে জয়ী হয়।সেবারও পঞ্চমবারের জন্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হন নীতীশ কুমার আর উপমুখ্যমন্ত্রী হন লালুপুত্র তেজস্বী যাদব। কিন্তু ২০১৭-তেজেডিইউ- আরজেডি জোট ভেঙে গেলে বিজেপি-র সাহায্যে ষষ্ঠবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন নীতীশ।

এবার বিজেপি নীতীশ কুমারকে পূর্ব ঘোষণা মতো মুখ্যমন্ত্রী করলেও তাঁর ক্যাবিনেটে রাখা হল দুজন উপমুখ্যমন্ত্রী। এরা হলেন বিজেপির কাটিহারের বিধায়ক তারকিশোর প্রসাদ ও বেতিয়ার বিধায়ক রেণু দেবী। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন,বিজেপি এই দু’জনকে উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছেছেন বিহারে জাতপাতের অঙ্ক কষেই।কাটিহারের বিধায়ক তারকিশোর প্রসাদ বৈশ্য ও বেতিয়ার বিধায়ক রেণু দেবী নোনিয়া সম্প্রদায়ের।গেরুয়া শিবির ওই দুই সম্প্রদায়ের ভোটব্যাঙ্ক ভবিষ্যতের জন্য নিশ্চিত করতেই এই হিসাব করেছেন। এছাড়া নীতিশের ওপর দেওয়া থাকল দুই মুখ্যমন্ত্রীর চাপ। তাছাড়াও নীতীশের মন্ত্রিসভায় বিজেপি থেকে এসেছেন মঙ্গল পান্ডে ও অমরেন্দ্র প্রতাপ সিং, রামপ্রীত পাসোয়ান, জীবেশ মিশ্র, রাম সুরত রাই।

ভোটের ফলাফল জানার পর থেকেই প্রশ্ন উঠেছিল যে নীতীশ কুমার কি সপ্তম বারের জন্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন? বিহার বিজেপির একটা বড় অংশের আপত্তি ছিল নীতিশের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া নিয়ে। তা স্বত্বেও অমিত শাহ, জে পি নাড্ডা-সহ বিজেপির প্রথম সারির একাধিক নেতার উপস্থিতিতে শপথ নিয়েছেন নীতীশ। আর শপথ নেওয়ার পর থেকেই চর্চা শুরু হয়েছে; নিতিশ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন ঠিকই, কিন্তু এবার তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সবথেকে কঠিনসময় শুরু হল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

ঘরে বাইরে প্রবল চক্সাপে পড়েছেন নীতীশ। শপথের পরই নীতীশকে খোঁচা দিয়ে বিরোধীরা বলেছেন, ‘বিজেপির দয়ায় মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন নীতীশ’। কেবল তাই নয়,এবার তিনি মুখ্যমন্ত্রী কতদিন তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।কটাক্ষের সুরে জেডিইউ-র প্রাক্তন শরিক এলজেপি প্রধান চিরাগ পাসওয়ান বলেন, কটাক্ষ, আশা করা যায়এনডি সরকার তাঁর মেয়াদ পূরণ করবে এবং নীতীশ কুমার সম্পূর্ণ সময়ের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকবেন।নীতীশ কুমারের একসময়ের ঘনিষ্ঠ নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোর বহুকাল পর নীতীশ সম্পর্কেকথা বলেন। তিনি টুইট করে বিজেপি নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে শুভেচ্ছা জানালেও কটাক্ষ করতে ছাড়েন না। নীতীশ কুমারকে সরাসরি আক্রমণ করে আরজেডি প্রধান জগদানন্দ সিং বলেন,জনগনের রায়কে ধর্ষণ করে মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসলেন নীতীশ। এর আগে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন ক্ষমতার জন্য, এবার ডাকাতি। তেজস্বী যাদব টুইটারে লিখেছেন তিনি যেন নিজের ক্ষমতা ধরে রাখার চেয়ে বিহারের মানুষকে দেওয়া ১৯ লক্ষ চাকরির প্রতিশ্রুতি পালনকরেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight − two =