গোড্ডাঃ ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা জেলার প্রত্যন্ত এক গ্রাম ভিখিয়াচক। সরকারি কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের প্রত্যেক প্রান্তের মতো এই গ্রামেও রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক স্কুল। কিন্তু সেটা ওই নামে মাত্রই। না আছে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পানীয় জলের ব্যবস্থা, না রয়েছে শৌচাগার। এমনকি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারাও মাসের অধিকাংশ দিনই কোন এক অজ্ঞাত কারণে গায়েব থাকেন স্কুল থেকে। ফলে পড়াশোনার কাজ প্রায় বন্ধ। এইভাবেই ছাত্রছাত্রীদের জন্য তৈরি স্কুল কি করে যেন গবাদি পশু রাখার জায়গাতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি সরকারি স্কুলের এই বেহাল অবস্থার ছবিই একেবারে জনসমক্ষে তুলে ধরেছে ওই স্কুলেরই খুদে এক পড়ুয়া। তার প্রচেষ্টাতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে ভিখিয়াচকের ওই প্রাথমিক স্কুলের চরম অবস্থা। যা দেখে কার্যত নড়েচড়ে বসেছেন খোদ রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী।
উল্লেখ্য, ওই স্কুলের দুরবস্থা নিয়ে স্কুল পড়ুয়া এবং তাদের অভিভাবকদের দীর্ঘদিন ধরে নানা অভিযোগ রয়েছে। প্রথমে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা এবং পরে প্রশাসনকে জানিয়েও হয়নি কোন লাভ। শেষে বাবার মোবাইল ফোনকে ভরসা করে মাঠে নামে ওই স্কুলেরই একরত্তি এক পড়ুয়া সরফরাজ। স্কুলের বেহাল অবস্থার ভিডিও করে সেই প্রথম বিষয়টি জনসমক্ষে আনে। ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, স্কুলের সামনে ছাত্র-ছাত্রীদের পানীয় জলের জন্য টিউবয়েলের লাইন করা হয়েছে, কিন্তু আজ অবধি তাতে কল লাগানোর কাজ শেষ হয়নি। ফলে স্কুলে আপাতত জলের কোন ব্যবস্থা নেই। এছাড়া স্কুলের অধিকাংশ ঘরেই বাসা বেধেছে আগাছা। বলতে গেলে গোটা স্কুল চত্বরই ঘন জঙ্গলে ভর্তি। স্কুলের মধ্যে থাকা একমাত্র শৌচাগারটিও ভেঙে পড়েছে। সেটি মেরামতের কাজও আজ অবধি হয়নি। তবে সবথেকে উদ্বেগজনক বিষয়টি হল স্কুলবাড়ির ছাদ থেকে যখন তখন খসে পড়ছে পোলেস্তরা। যে কারণে যে কোন মুহূর্তে বড়োসড়ো বিপদ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই সমস্ত বিষয়গুলি ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছে ওই খুদে।
তবে এখানেই শেষ নয় একেবারে সাংবাদিকের কায়দায় হাতে ‘বুম’ নিয়ে সে ওই স্কুলের বাকি পড়ুয়াদের অভাব অভিযোগের কথাও তুলে ধরেছে সর্বসমক্ষে। যেখানে পড়ুয়ারা জানিয়েছে স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষকই অনিয়মিত। তারা একেবারেই পড়াশোনা করতে সাহায্য করেন না। এছাড়া স্কুলের ক্লাসরুমগুলোতেই রাখা হয় গবাদি পশু। সবে মিলে গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক স্কুলের সর্বস্তরে বিরাজ করছে চরম অব্যবস্থা।
ঝাড়খণ্ডের এই খুদে পড়ুয়ার ভিডিও ইতিমধ্যেই ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ওই ভিডিওটিতে আবার ওই পড়ুয়া মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেনকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার ও দাবি জানিয়েছে। আর তাতেই বিপাকে পড়েছে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই সরফরাজের বাড়ির লোককে একাধিকবার হুমকি দিয়েছে ওই স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা। কিন্তু তাতেও নিজের অবস্থানে অনড় সরফরাজ। তাঁর দেখানো ভিডিওর জন্য জেলা শিক্ষা আধিকারিক ইতিমধ্যেই ওই স্কুলের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছেন। সঙ্গে ওই স্কুল পড়ুয়াকে খোদ শিক্ষামন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন যে অতি দ্রুত স্কুলের অবস্থার উন্নতি করা হবে।