বীরেন ভট্টাচার্য, নয়াদিল্লি: কৃষকদের সঙ্গে ষষ্ঠ দফার বৈঠকে কিছুটা খুঁজে পেল কেন্দ্রীয় সরকার। কৃষকদের দাবির মধ্যে দুটি বিষয়ে কৃষক-কেন্দ্র সহমতে পৌঁছেছে বলে বৈঠক শেষে জানালেন কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর। বাকিগুলি নিয়ে আলোচনার জন্য একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে।
সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, এদিন কেন্দ্রের তরফে এদিন কৃষক নেতাদের জানানো হয়েছে, কোনও বিল পাস করিয়ে সেটিকে আইনে পরিণত করার প্রক্রিয়া যতটা দীর্ঘতর বা জটিল সেটি প্রত্যাহার করাটাও তেমনই। তবে বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল বা ফসলের অংশ পোড়ানোর ক্ষেত্রে আইনে কিছুটা ছাড়় দিতে রাজি সরকার। যদিও এদিনের বৈঠকে নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত কিছু জানাননি ৪১টি কৃষক সংগঠনের নেতা। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেই তাঁরা এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন। এদিন সরকারের উপস্থিত ছিলেন তিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর, পিযুষ গোয়েল এবং সোম প্রকাশ। তাঁরা কৃষক নেতাদের প্রস্তাব দিয়েছেন, কৃষি আইন সংক্রান্ত তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং পর্যালোচনা করতে একটি কমিটি গঠন করা হবে। এছাড়াও কেন্দ্রের তিনটি কৃষি আইন সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে ব্যাখা করে বোঝানো হয়েছে কৃষক নেতাদের। কৃষক নেতারা জানিয়েছেন, সরকার এখনও আইনটি প্রত্যাহার করতে রাজি নয় এবং ফসলের নূন্যতম সহায়ক মূল্য নিয়ে যে আইন লাগু করার দাবি তোলা হয়েছে কৃষকদের তরফে, তা নিয়ে কেন্দ্রের অবস্থান, এবিষয়টি দেখবে কমিটি। তবে বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল এবং বায়ু দূষণের কারণে ফসলের অংশ পোড়ানোর নিষেধাজ্ঞা আইন প্রত্যাহারে রাজি কেন্দ্রীয় সরকার। বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর বলেন, “আজ খুব সুন্দর এবং ভাল পরিবেশে বৈঠক হয়েছে, এবং একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো গিয়েছে। দু তরফেই চারটির মধ্যে ২টিতে সহমতে পৌঁছানো গিয়েছে।”
মধ্যপ্রদেশে এক ব্যবসায়ীর কাছে প্রতারিত হন কৃষকরা, দাবি কৃষকদের। অভিযোগ,২২ জন কৃষককে ২ কোটি টাকার টেক দেন এক ব্যবসায়ী, যদিও পরে সেই চেক বাউন্স করে। সেই বিষয়টি এদিনের বৈঠকে তুলে ধরার পরিকল্পনা করেন কৃষক নেতারা। ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকাইত বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের বলেন, “উত্তরপ্রদেশে নয়া কৃষি আইন বলবৎ হওয়ার পর, ফসলের দাম কমেছে ৫০ শতাংশ। নূন্যতম সহায়ক মূল্যের কম দামে ফসল কেনা হচ্ছে। কুইন্টাল প্রতি ৮০০ টাকা দরে কেনা হচ্ছে ধান। আমরা এই বিষয়টি বৈঠকে তুলে ধরব।” ৬ মাস বা তার বেশি সময় ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার মতো রসদ তাঁদের কাছে আছে এবং দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত দিল্লি ছাড়়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কৃষক নেতারা।
কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় দিল্লির চার সীমানায় বিক্ষোভরত কৃষকরা। তাঁদের দাবি একটাই, কোনওরকম বিকল্প বা সংশোধনী নয়, তিনটি আইনই প্রত্যাহার করতে হবে। বৈঠকের আগেও এমনই কড়া অবস্থান জানিয়েছিল কিষাণ মজদুর সংঘর্ষ কমিটি। এদিনের বৈঠকে কৃষকদের দাবিগুলি খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিল কেন্দ্রীয় সরকার। সরকারপক্ষের দাবি, তারা চায়, ইংরাজি নববর্ষ বাড়িতেই পালন করুন কৃষকরা। যদিও নিজেদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থানে অনড় কৃষকরা। প্রয়োজনে এক বছর ধরে অবস্থান করতেও রাজি আন্দোলনরত কৃষকরা।