নয়াদিল্লি: কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দিল্লীর সীমান্তে অবস্থান-বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন কয়েক হাজার কৃষক৷ চালিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলন৷ দফায় দফায় কেন্দ্রের সঙ্গে চলছে বৈঠক৷ পরিস্থিতি গুরুত্ব বিবেচনা করার চেষ্টা শুরু করেছে কেন্দ্র৷ কৃষক প্রতিনিধি ও কেন্দ্রের মধ্যে আলোচনার মাঝেই সুপ্রিম কোর্টে বড়সড় ধাক্কা খেল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকার৷
আজ মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের তরফের সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কৃষি আইন কার্যকর করবেন না৷ আইন কার্যকর করা থেকে বিরত না হলে আমরা তা করব৷ শুনানিতে কেন্দ্রকে জানিয়ে দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত৷ গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে আদালত৷ একই সঙ্গে আন্দোলনরত কৃষকদের প্রতিও বার্তা দিয়েছে আদালত৷ তবে, কেন্দ্রকে আইন কার্যকর করা থেকে বিতর থাকার পরামর্শ দেওয়া হলেও আইন কার্যকরের বিষয়ে কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি দেশের শীর্ষ আদালত৷
মামলার শুনানিতে আন্দোলনরত কৃষকদের শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, রাস্তা অবরুদ্ধ করে আন্দোলন করবেন না৷ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান সম্ভব৷ আলোচনা চালিয়ে যাওয়া প্রযোজন, তবে রাস্তা বন্ধ করে নয়৷ আলোচনার টেবিলে সমস্যার সমাধান হোক বলেও পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত৷
শীর্ষ আদালতের বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ, ‘‘আপনারা এই আইন কার্যকর করা স্থগিত করবেন, নাকি আমরা করব? এখানে কি ইগো আছে?’’ প্রধান বিচারপতি এসএ ববদে বলেন, ‘‘যদি ভুল কিছু হয়ে যায় তার দায় আমাদের প্রত্যেকের৷ আমরা কোনও জখম বা রক্ত পাত চাই না৷’’
প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, কৃষি আইন স্থগিত করে দেওয়ার পরেও হয়তো বিক্ষোভ চলবে৷ তাঁর কথায়, ‘‘আপনারা ঠিক করুন, এই জায়গাতেই বিক্ষোভ কর্মসূচি চলবে, নাকি অন্য কোথাও সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে৷’’ এদিন কেন্দ্রীয় সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘‘যদি এই বিষয়টি আপনারা ঠিকমত না সামাল দিতে পারেন, তাহলে আমরা আজই পদক্ষেপ করব৷ আমরা বিশ্বাস করি না কেন্দ্র বিষয়টি ঠিক ভাবে সামাল দিতে পারছে৷ আমরা বিশ্বাস করি না, আপনাদের আলোচনা প্রস্তাব কোনও কাজে আসছে৷’’ কৃষক সংঘটনের আইনজীবী দুষ্মন্ত দাভে প্রশ্ন তোলেন, এত গুরুত্বপূর্ণ একটি আইন কীভাবে সংসদে ধ্বনি ভোট পাস করা হয়? তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্র যদি বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়, তাহলে সংসদে যৌথ অধিবেশন ডাকা যেতে পারে৷ সেই দিক থেকে সরকার কেন পালিয়ে যাচ্ছে?’’ কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবী তথা অ্যাটর্নি জেনারেল কেকে বেনুগোপাল দাবি করেন, সুপ্রিম কোর্টের আইন অনুযায়ী আদালত আইন কার্যকর করা আটকাতে পারে না৷
কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় দিল্লির চার সীমানায় বিক্ষোভরত কৃষকরা। তাঁদের দাবি, কোনওরকম বিকল্প বা সংশোধনী নয়, কৃষি সংক্রান্ত তিনটি আইন প্রত্যাহার করতেই হবে৷ বৈঠকের আগেও এমনই কড়া অবস্থান জানিয়েছিল কিষাণ মজদুর সংঘর্ষ কমিটি৷ এদিনের বৈঠকে কৃষকদের দাবিগুলি খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ যতক্ষণ না পর্যন্ত আইন বাতিল না হচ্ছে, প্রয়োজনে এক বছর ধরে অবস্থান করতেও রাজি আন্দোলনরত কৃষকরা৷
একদিনে দেশজুড়ে বাড়তে থাকা কৃষক বিদ্রোহ, অন্যদিকে আদালতের গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষ, জোড়া চাপের মুখে বেশ কিছুটা অস্বস্তি তৈরি হয়েছে এনডিএ সরকারের অন্দরে৷ যদিও, এই আইন কার্যকর করতে গিয়েছে এনডিএর ঘরও ভেঙেছে৷ এবার আদালতেও সমালোচিত কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকার৷