কলকাতা: রবিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মেগা সমাবেশকে সম্বোধন করার সময়, বাংলা টিভি চ্যানেলগুলি স্ক্রিন দুটি ভাগে ভাগ করে দেখছিল, শিলিগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা। মোদী যখন তৃণমূল কংগ্রেসকে কাটমানি এবং সিন্ডিকেট আভিযোগে বিদ্ধ করছেন সেই সময় মমতা কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলিতে বেসরকারীকরণ এবং দুর্নীতির প্রস্তাবের জন্য মোদী সরকারকে তীব্র আক্রমণে নেমেছিলেন।
ঠিক এক সপ্তাহ আগে, একই ব্রিগেড ময়দানে আরও একটি বিশাল সমাবেশ হয়েছিল। এটি ছিল তিনটি রাজনৈতিক শক্তির একত্রিত প্রয়াস – বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং সদ্য গঠিত ভারতীয় সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) – এক মুসলিম উলেমা পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর নেতৃত্বে যা গঠিত হয়েছে। তাদের বার্তা একই ছিল। নতুন জোটের নেতারা রাজ্যে টিএমসির দুর্নীতি এবং কেন্দ্রের বিজেপির জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছিলেন। সুতরাং, মনে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ একটি ত্রি-পাক্ষিক প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত। এটি নতুন নয় ২০১১ সালের পর থকেই পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় বিকল্পের ধারণা শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তৃতীয় বিকল্প এত শক্তিশালী ছিল না। এর বাইরে, সাম্প্রতিক স্মৃতিতে বাংলা এ জাতীয় উচ্চ-প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন দেখেনি।
বিজেপির অন্তর্দলীয় তদন্ত বলছে, এই মুহুর্তে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসতে পারে দল। দেশের অন্য কোনও রাজ্যে এতটা সম্ভাবনা নেই। তাই বিজেপির ক্ষেত্রে – পশ্চিমবঙ্গে এবার, নয়তো নেভার। ২০১৯ সালে শেষ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ১৮টি আসন জিতেছিল। ৪০.৬৪ শতাংশ ভোট তারা নিশ্চিত করেছে। যা ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের থেকে ২২.৭৬ শতাংশ বেশি। এই ব্যাপক ভোট বৃদ্ধি ইঙ্গিত করে কোনও কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষ বিজেপির দিকে ঝুঁকেছে। তা যে ধর্মীয় মেরুকরণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। লোকসভা নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে যদি বিধানসভায় বিজেপি, তৃণমূল, কংগ্রেস এবং বামদলগুলি ফলাফল বিচার করতে হয় তবে দেখা যাবে বিজেপি প্রায় ১২২টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। ৪৩.৬৯ শতাংশ ভোট নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ২২টি আসনে জিতেছিল। লোকসভার ফলাফল বিচার করলে ১৬৩টি আসলে তৃণমূলের এগিয়ে থাকার কথা। আপাতদৃষ্টিতে লোকসভার নিরিখে বিচার করলে বোঝা যায় তৃণমূল অন্তত ৪১টি আসনে এগিয়ে রয়েছে।
কিন্তু এখানে দুটি বিষয় খেয়াল করা জরুরি। ১) বাম-কংগ্রেস জোট এবং পাহাড়ে গোর্খা-নেপালি জনজাতির ভোট। ২) ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের পর রাজ্যে পরবর্তী ভাগের রাজনীতি। পরিসংখ্যান বলছে, কংগ্রেসের ৫.৬৭ শতাংশ এবং সিপিএমের ৬.৩৪ শতাংশ ভোট পরিস্থিতির সঠিক ব্যাখ্যা করছে না। কারণ, ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় সিপিএম (১৬.৭২ শতাংশ) এবং কংগ্রেস (৪.০৯ শতাংশ) ভোট কমে গিয়েছে। কিন্তু, এই (১৬.৭২+৪.০৯)=২০.৮১ শতাংশ ভোট কথায় গিয়ে পৌঁছল, তা নিয়ে সাম্প্রতিক অতীতে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হয়ে গিয়েছে। আলোচকদের একটি বৃহৎ অংশের মতে ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের থেকে বিজেপি ২২.৭৬ শতাংশ বেশি ভোট পাওয়াটা পরিসংখ্যান অথবা রসায়ন যাই বলুন না কেন, এইখানেই লুকিয়ে রয়েছে। সিপিএম এবং কংগ্রেসের মিলিতভাবে যে ২০.৮১ শতাংশ ভোট কম পেয়েছে, তা চলে গিয়েছে বিজেপির দিকে। অল্প কিছু গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের দিকেও। সিপিএম, অন্যান্য বাম দলগুলি এবং কংগ্রেসের ভোটব্যাংক ভোট কি বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপি লুঠ করতে পারবে? অথবা, বাম-কংগ্রেস কী নিজের ভোটক্ষয় রোধ করতে পারবে? তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে গিয়েছে।
এখন প্রশ্ন, বিজেপি কি তাদের ৪০.৬৪ শতাংশ ভোট ধরে রাখতে পারবে? তৃণমূল কী তাদের ৪৩ শতাংশ ভোট ধরে রাখতে পারবে? বাম কংগ্রেস জোট কি (৬.৩৪ + ৫.৬৭ ) শতাংশ ভোটে আটকে থাকবে না। কারণ তাদের সঙ্গে রয়েছে আই এস এফ। বাম – কং- আই এস এফ কী তার থেকে বৃদ্ধি পাবে। নাকি ক্ষয় হবে। বাম কংগ্রেসের এই মিলিত ১২ শতাংশ কোন দিকে যাবে, প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।