দেবময় ঘোষ: ঠিক ১০ বছর পিছিয়ে যাওয়া যাক। ২০১১ সাল। মে মাস। পশ্চিমবঙ্গ ৩৪ বছরের বাম শাসনের পতন দেখেছে। রাজ্যে পরিবর্তন এসেছে। তৈরি হয়নি অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার। নির্বাচনের ফলাফল বলছে, তৃণমূল কংগ্রেস এবং কংগ্রেস জোট ২২৭টি আসন পায়। বামফ্রন্ট পায় ৬৪টি। বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিরোধী দলনেতা হিসাবে অবতীর্ণ হন সূর্যকান্ত মিশ্র। সূর্যবাবু ওই পদে আসার কারণ হিসাবে একটি কথা আমার পরবর্তীকালে মনে হয়েছে। বামফ্রন্টের প্রায় সমস্ত প্রথম সারির মুখ, মন্ত্রীরা হেরে গিয়েছিলেন। নারায়নগর থেকে বাম আমলের শেষ স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত। সুতরাং বিরোধী দলনেতা হিসাবে, তিনি আসবেন তা স্বাভাবিক ছিল।
এখানে একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন, সেই নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। পরে ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে জিতে এসেছিলেন। সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্টও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ‘রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়া’ বিরোধীশক্তি হয়ে উঠতে চেষ্টা করেনি। কারণ, ততদিনে বামফ্রন্ট বৃদ্ধতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। স্বঘোষিত ‘যুবক’ বামনেতারা ক্ষমতায় থাকা দুর্দম মমতাকে চ্যালেঞ্জ করতে সাহস করেননি। বলা যায়, পুলিশি অত্যাচার, মামলা থেকে বাঁচতে বাম নেতাদের আর কিছু করার ছিল না। সেক্ষেত্রে ‘বিরোধী হয়েই সুখে থাকার’ একটি অলিখিত চুক্তি মমতার সঙ্গে তারা সেরে নেন। কালের নিয়মে, ২০২১ সালে বামফ্রন্টের সেই ৬৪টি আসন এখন শূন্য।
কিন্তু ২০২১ সাল মমতাকে কী স্বস্তি দেবে? উত্তর না। কারণ, বিধানসভায় মমতাকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য আসবেন শুভেন্দু অধিকারী। সমস্বরে বিজেপির বিধায়করা বলবেন ‘হেরো মুখ্যমন্ত্রী’ – অন্তত যতদিন না উনি নির্বাচিত হয়ে আসছেন। বিধানসভায় আরও এক অপছন্দের ব্যক্তিকে দেখতে পাবেন মমতা। নাম মুকুল রায়। বিজেপি কাকে বিরোধী দলনেতা হিসাবে পছন্দ করে তা সময় বলবে। কিন্তু, মুকুল-শুভেন্দু মমতাকে স্বস্তিতে থাকতে দেবেন না, তা আন্দাজ করা যায়। বিধানসভার বাইরে এবং ভিতরে, রাজ্যের প্রতিটি কোণে মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবে বিজেপি। ২০১১ সালের বামফ্রন্টের মত ‘ভদ্রলোক’ বিরোধীদল এবার পাবে না মমতা।