কলকাতা: প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে রয়েছে দুর্নীতি। যা নিয়ে বহুবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে তা অন্য মাত্রা পেয়েছে পুরুলিয়ার প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে। আসলে অভিযোগ ছিল বহুদিন ধরেই। আর সেই অভিযোগের ভিত্তিতে এবার পুরুলিয়ার দুই ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিককে উত্তরবঙ্গে বদলি করল নবান্ন। হুড়ার বিএলআরও অনুপম ভট্টাচার্য ও বলরামপুরের বিএলআরও সজল মালাকারকে বদলি করা হয়েছে। অনুপমকে উত্তর দিনাজপুর এবং সজলকে কোচবিহারে বদলি করা হয়েছে। ভূমি ও ভূমি সংস্কার বিভাগের বিশেষ সচিব এই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। এছাড়া পুরুলিয়ার পারা ব্লক আধিকারিক সুদীপ্ত ঘোষকে জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে পাঠানো হয়েছে। আর সেখানে ওই পদে কর্মরত শুভাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে পারার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিক করা হয়েছে।
কিছুদিন আগে পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে এক অভিযোগকারীকে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে বসতে দেখা যায়। ভূমি দফতরের বিরুদ্ধে তিনি বেশ কিছু অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। সেগুলি ছিল হুড়া ও বলরামপুর ব্লককেন্দ্রিক। সেই অভিযোগ পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। এই বেনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হুড়া থেকে দু’জন এবং বলরামপুর থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর পুরুলিয়ার তৎকালীন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামেন। দেখা যায় রমরমিয়ে চলছে দালাল চক্র। মিউটেশনের জন্য দশ থেকে পনেরো হাজার টাকা দাবি করছে দালালরা। আর একটি ফটোকপির দোকানে এই সংক্রান্ত কাজের নানা প্রকার ফর্ম ভর্তি করে দেওয়া হচ্ছে। কোন কাজের জন্য কত টাকা দিতে হবে সেই রেট চার্ট পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে সেখানে। এরপরই কড়া পদক্ষেপ করে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ জেলার বিভিন্ন ব্লকে এই ধরনের দুর্নীতি চলছে। পুরুলিয়াবাসীর অভিযোগ মিউটেশন নিয়ে দুর্নীতি চরম পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, আর তার ফলে যেভাবে দুই আধিকারিককে দূরের জেলায় বদলি করা হয়েছে তাতে খুশি জেলা তথা রাজ্যের মানুষ। এর পাশাপাশি পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদারকেও অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।
কিন্তু প্রশ্নটা অন্য জায়গায়, এই দুর্নীতির অভিযোগ তো বহুদিন ধরেই রয়েছে রাজ্যে। তবে কি প্রতিটি ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হবে? রাজ্য প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের তাহলে কি কাজ? ঘুঘুর বাসা ভাঙার দায় কি তাঁদের উপর বর্তায় না? পুরুলিয়ার বিভিন্ন ব্লকে এতদিন ধরে বিভিন্ন কাজ নিয়ে দুর্নীতি চলছে। টাকা তোলা হচ্ছে, জড়িত থাকার অভিযোগ উঠছে সরকারি কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে। এ সম্পর্কে কী কিছুই জানতেন না প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকরা? নাকি সব জেনে শুনে চুপচাপ বসেছিলেন সবাই? এর উত্তর দেবেন কে? সেই উত্তর জানতে চায় আমজনতা। পুরুলিয়ার অসুখ সারানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা কি এবার রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যাবে? তবেই স্বস্তি পাবে গোটা বাংলা।