নিজস্ব প্রতিনিধি: সাদাসিধে অনাড়ম্বর জীবন আর পথে নেমে আন্দোলন, সাধ্যমত মানুষের পাশে দাঁড়ানো, চিরকাল তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এভাবেই দেখতে অভ্যস্ত রাজ্যবাসী। বস্তুত বাম আমলে মমতার এহেন আন্দোলনের প্রকৃতি সবার নজর কেড়েছে এবং প্রশংসা কুড়িয়েছে। এটাই মমতার প্রধান ‘ইউএসপি’ হয়ে উঠেছিল। মমতার সততা চিরকালই রাজ্যবাসীর মন ছুঁয়ে গিয়েছে। পরবর্তীকালে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। কিন্তু মমতার জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসেনি। আগের মতোই রয়েছেন তিনি। কিন্তু তৃণমূলের একের পর এক নেতা-নেত্রীর নাম যেভাবে আর্থিক দুর্নীতি কাণ্ডে জড়িয়েছে তাতে যথেষ্ট ‘ফেস লস’ হয়েছে মমতা তথা তৃণমূলের। তাঁদের জন্য মমতাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে বিরোধীরা। ঠিক এই জায়গা থেকে যথেষ্ট অস্বস্তিতে রয়েছেন তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
সারদা-নারদা বা অন্য চিটফান্ড কাণ্ডে নাম জড়িয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের। ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, সৌগত রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অনেকের নাম জড়িয়েছে আর্থিক দুর্নীতি কাণ্ডে। তবে সাম্প্রতিক কালে শিক্ষক দুর্নীতি কাণ্ডে যেভাবে তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম জড়িয়েছে তাতে বিরোধীরা নতুন করে সোচ্চার হয়েছে সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। স্পষ্ট বলে দিয়েছেন আদালতে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে দল তাঁর পাশে দাঁড়াবে না। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে যেভাবে মুখ্যমন্ত্রীর নাম জড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ কেউ প্রচার চালাচ্ছেন তা নিয়েও একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ঠিক এই জায়গা থেকে প্রশ্ন উঠছে যে, নতুন করে মমতা কি দলের শুদ্ধিকরণের পথে হাঁটবেন? ইতিমধ্যেই মমতা বা দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ স্পষ্ট করে দিয়েছেন কোনও নেতা দুর্নীতি করলে দল তাঁর পাশে দাঁড়াবে না। তা তিনি যত বড় নেতাই হোন না কেন।
এর আগে আমফান দুর্নীতি নিয়ে রাজ্যজুড়ে রীতিমতো ঝড় বয়ে যায়। তৃণমূলের নিচু তলার নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে প্রচুর টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ ওঠে। যে ঘটনায় প্রবল অস্বস্তিতে পড়ে নবান্ন। বস্তুত গত বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে সেই বিষয়টিকে তুলে ধরেছিল বিরোধীরা। তবে সেই দুর্নীতি কাণ্ডে নাম জড়ায়নি তৃণমূলের প্রথম সারির কোনও নেতার। তাই পরবর্তীকালে আমফান দুর্নীতি অনেকটাই অন্তরালে চলে গিয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ভাল করেই জানেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় চ্যাপ্টার চট করে বন্ধ হওয়ার নয়। যেভাবে পার্থ ঘনিষ্ঠ এক মডেলের বাড়ি থেকে নগদ ২২ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি, তাতে এর জল যে অনেক দূর গড়াবে তা বিলক্ষণ জানেন মমতা। সব থেকে বড় কথা শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে আরও রাঘববোয়ালের নাম জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবেই এই সমস্ত ঘটনায় ‘ফেস লস’ হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর। রাজনৈতিক মহল মনে করছে এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনে দল বা মন্ত্রিসভাকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। দলের মধ্যে অনুশাসন আরও বাড়বে। কারণ রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের এক বছরও পুরো বাকি নেই। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সমস্ত অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে বহুদিন ধরেই তা পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে প্রবলভাবে তুলে ধরবে বিরোধীরা। আর মুখ্যমন্ত্রী সেটা ভাল করেই জানেন। তাই পার্থ-কাণ্ড যেভাবে দল বা সরকারের মুখ পুড়িয়েছে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে মুখ্যমন্ত্রী এবার যে একগুচ্ছ কড়া পদক্ষেপ করবেন সেটা অনুমান করাই যায়। এই পরিস্থিতিতে একদিকে বিজেপি-সহ অন্যান্য বিরোধী দলের বিরোধিতা, অন্যদিকে দলকে সব দিক থেকে আরও সুসংহত করা, মমতা এভাবেই আগামী দিনে চলবেন বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারিদের একাংশ।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″ height=”315″ frameborder=”0″>