নিজস্ব প্রতিনিধি: বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে যেভাবে সরকারি চিকিৎসককে পাঠানো হয়েছিল, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। বিষয়টি নিয়ে শনিবার মুখ খুলেছেন বোলপুর হাসপাতালের সুপার বুদ্ধদেব মুর্মু। সেখানে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, মিস্টার অনুব্রত মণ্ডল জেড ক্যাটাগরির সুরক্ষা পান। সেদিক থেকে নিয়ম মোতাবেক তাঁর কোনও সমস্যা হলে বোলপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে তাঁকে মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট দিতে হবে। আর তাঁর জন্য ভিআইপি কেবিন, রক্ত মজুত রাখতে হয়। ওই চিকিৎসক অফিসিয়ালি ভিজিট করেননি। তাই তাঁকে সাদা কাগজে লেখার জন্য বলা হয়। তবে বিশ্রামের কথা লিখতে বলিনি। সেই সঙ্গে বলেছেন জেলার এক শীর্ষ নেতার অনুরোধেই তিনি চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারীকে সেদিন অনুব্রতর বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন।
প্রশ্নটা এখানেই, অনুব্রত মণ্ডলের মতো ওজনদার নেতার জন্য চিকিৎসার অত্যাধুনিক সুবিধা সব সময় হাতের কাছে রয়েছে, কিন্তু রাজ্যের লক্ষ লক্ষ রোগীর ভাগ্যে এই চিকিৎসার কণামাত্র জোটে কি? আর ঠিক তারপরেই দেখা গেল জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দেখতে এসএসকেএম হাসপাতালের আট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সেখানে গেলেন। মেডিক্যাল টিমের চিকিৎসকরা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন। উল্লেখ্য পা এবং পিঠের যন্ত্রণায় ভুগছেন পার্থ। সেক্ষেত্রে যন্ত্রণা কমাতে কীভাবে শুতে হবে পার্থকে, সে কথা তাঁকে বলেছেন চিকিৎসকরা। সেই সঙ্গে তাঁকে ব্যায়ামের পরামর্শও দিয়েছেন তাঁরা। আর পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে সমস্ত ওষুধ এতদিন ধরে খেয়ে আসছেন সেখানে কিছু বদল করা হয়েছে। উল্লেখ্য প্রেসিডেন্সি জেলের প্রধান চিকিৎসক প্রণব কুমার ঘোষ কিছুদিন আগেই বন্দিদের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে একটি রিপোর্ট তুলে দেন জেল সুপার দেবাশিস চক্রবর্তীর কাছে। সেই রিপোর্ট কারা দফতরের ডিআইজি অরিন্দম সরকারের কাছে যাওয়ার পর সেটি পাঠানো হয় স্বাস্থ্য দফতরের সিএমওএইচ-এর কাছে। এরপর সেখানকার নির্দেশ পেয়ে এসএসকেএম হাসপাতালের অর্থোপেডিক, মেডিসিন, কার্ডিওলজিস্ট-সহ অন্যান্য রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা শনিবার প্রেসিডেন্সি জেলে যান। তাঁরা পার্থকে পর্যবেক্ষণ করেন। প্রায় তিন ঘন্টা ধরে পার্থর নানা শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে বলে খবর।
পার্থর রক্তে সুগারের মাত্রা বেশি থাকায় তাঁকে ভাত কম খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। সেই সঙ্গে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রীর ওজন অত্যন্ত বেশি হওয়ায় তাঁর শরীরে এত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তাঁকে নিয়মিত ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক দল। কি কি ব্যায়াম এবং কীভাবে তা করতে হবে সেটি দেখিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। এর পাশাপাশি জেলে পার্থর চিকিৎসা কীভাবে হবে সেই সংক্রান্ত একটি গাইডলাইনও তৈরি করে দিয়েছেন মেডিক্যাল টিমের সদস্যরা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে ওই জেলে বছরের পর বছর ধরে বহু বন্দি রয়েছেন। তাঁদের অনেকেই অসুস্থ হন। বহু সময় দেখা গিয়েছে অসুস্থ বন্দিরা যথাযথ চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন না। আর একাধিক জেল হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়েও বহুবার প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে রাতারাতি গোটা বিষয়টি আমূল বদলে গিয়েছে। উন্নত মানের চিকিৎসা পরিষেবা দিতে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের আট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পৌঁছে গিয়েছেন জেলে। তবে কি রাজ্যে চিকিৎসা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নত পরিষেবা পেতে গেলে ন্যূনতম ক্ষমতাধর হতে হবে? এই প্রশ্ন রাজ্য রাজনীতিতে এখন অসম্ভব প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। যে ঘটনা বারবার দেখতে পাচ্ছে রাজ্যবাসী।