নিজস্ব প্রতিনিধি: কয়লা-কাণ্ড-সহ বিভিন্ন দুর্নীতির ঘটনায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যুক্ত আছেন বলে বিরোধীদের অভিযোগ। সেক্ষেত্রে নাম না করে ‘ভাইপো’ বলে লাগাতার নিশানা করে চলেছে বিরোধীরা। সদ্য বিধাননগরের সিজিও কমপ্লেক্সে অভিষেককে জেরা করেছেন ইডি আধিকারিকরা। আর সেদিনই তাৎপর্যপূর্ণভাবে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে বলতে শোনা যায়, লক্ষ্য রাখুন, আজই একটা বড় কিছু হতে পারে! কিন্তু বাস্তবে ছোট বড় কোনও ঘটনাই ঘটেনি। উল্টে সুপ্রিম কোর্ট অভিষেককে রক্ষাকবচের সময়সীমা বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে বিজেপি তথা তৃণমূল বিরোধীরা। একই ভাবে অভিষেক ইস্যুতে কার্যত হোঁচট খেতে হল ইডি-সিবিআইকে।
সদ্য সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে অভিষেকের বিদেশ যাত্রা আটকানো যাবে না। চিকিৎসার প্রয়োজনে তিনি যে কোনও দেশে যাত্রা করতেই পারেন। সেই সঙ্গে শীর্ষ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে কয়লা-কাণ্ডের তদন্তে লাগাতার জেরা চললেও, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এখনই কোনও কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে না ইডি৷
উল্লেখ্য, এর আগে ইডির সঙ্গে আইনি লড়াইয়ের প্রথম ধাপে দিল্লি হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিষেক। দিল্লি হাইকোর্ট জানিয়েছিল কয়লা কাণ্ডে প্রয়োজন হলে অভিষেক এবং রুজিরা বন্দোপাধ্যায়কে দিল্লিতে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই পারে ইডি। কিন্তু অভিষেকের পক্ষে স্বস্তিজনক রায় সেই সময়ও দিয়েছিল দেশের শীর্ষ আদালত। বিচারপতি উদয় ললিতের বেঞ্চের তরফে জানানো হয়েছিল, বারবার দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়ে অভিষেক এবং তাঁর স্ত্রীকে জেরা করতে পারবে না ইডি৷ তার পরিবর্তে ইডির কলকাতা অফিসে জেরা করা যাবে কমপক্ষে ২৪ ঘন্টার নোটিস জারি করে৷ তারপরেও অভিষেককে চোখের চিকিত্সার জন্য দুবাই যাওয়ার অনুমতি দেয়নি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি৷ কিন্তু এবার সুপ্রিম কোর্ট সেই অনুমতি দিল অভিষেককে।
অভিষেককে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তলব করা নিয়ে যখন সরগরম রাজ্য রাজনীতি, তখন দেখা যাচ্ছে নিজের আক্রমণাত্মক মেজাজ থেকে সরে আসতে রাজি নন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। গত সপ্তাহে ইডি দফতর থেকে বেরোনোর পর বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণের তীব্রতা অভিষেক আরও বাড়িয়েছেন। সেইসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন তিনি। সেদিন অভিষেক বলেন, “পাচার কাণ্ডে অভিযুক্ত বিনয় মিশ্র দ্বীপ রাষ্ট্রে রয়েছেন। সে নাকি ফেরার! আট মাস আগে ফোনে ওর সঙ্গে কথা বলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। বলেছেন কেস আমি দেখে নেব। আদালত চাইলে অডিও ক্লিপ জমা দিতে রাজি। প্রয়োজন হলে অডিও ক্লিপের ফরেনসিক পরীক্ষা হোক। কাচের ঘরে বসে ঢিল মারবেন না। আমি মিথ্যে বললে আমার বিরুদ্ধে শুভেন্দু অধিকারী মানহানির মামলা করুন।”
এই বক্তব্যে গোটা বিষয়টি সম্পূর্ণ অন্য মাত্রা পেয়েছে। সেই সঙ্গে অভিষেক জোরের সঙ্গে বলছেন তিনি যদি সামান্যতম দুর্নীতি করে থাকেন তাহলে নিজেই ফাঁসি কাঠে ঝুলবেন। অর্থাৎ সরাসরি বিজেপি তথা ইডি-সিবিআইকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছেন তিনি। যা ভাবাচ্ছে বিরোধীদের। আর এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অভিষেকের পক্ষে যাওয়ায় আরও অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি। কিন্তু আদালতের নির্দেশ নিয়ে কারও কিছু বলার থাকতে পারে না। তাই অভিষেক ইস্যু আগামী দিনে কোন দিকে গড়ায় সেদিকেই চোখ থাকবে সবার।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>