নিজস্ব প্রতিনিধি: কয়েক দিন পরেই বিজেপির নবান্ন অভিযান। যা নিয়ে দলের তৎপরতা তুঙ্গে। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিনেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে পুজো উপলক্ষে বিরাট মিছিল হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় পুজোর আমেজ শুরু হয়ে গেল সেদিন থেকেই। আর কলকাতা তথা রাজ্য জুড়ে জামা-কাপড়ের দোকানে এখন উপচে পড়া ভিড়। রাজ্যবাসী ব্যস্ত কেনাকাটাতে। আর এই পুজোর আবহের মধ্যেই বিজেপির নবান্ন অভিযান কতটা সফল হবে তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে রাজ্য বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নবান্ন অভিযান কর্মসূচিতে কতটা প্রভাব ফেলবে তা নিয়েও চলছে চর্চা।
আরও পড়ুন- শিক্ষক-শিক্ষিকা পদে বিপুল সংখ্যক নিয়োগের ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর, কী বলছেন বিরোধীরা?
নবান্ন অভিযানের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব পেয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মূলত অভিযান সফল করতে তাঁর উপরেই নির্ভর করছে দল। আর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই শুভেন্দু রাজ্য জুড়ে অভিযান সফল করতে একের পর এক প্রস্তুতি বৈঠক করছেন। বহু সভায় বক্তব্য রাখছেন তিনি। উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় শুভেন্দু সভা করে চলেছেন। এটা সকলেই জানেন রাজ্য বিজেপিতে শুভেন্দুর মতো দক্ষ সংগঠক আর কেউ নেই। তাই অভিযান যদি সফল হয় সেই কৃতিত্বের প্রধান দাবিদার অবশ্যই হবেন নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক। কিন্তু সফল অভিযানের ক্ষেত্রে একাধিক বিষয় উঠে আসছে। তার অন্যতম প্রধান হল রাজ্য বিজেপির তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা শুভেন্দুকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন তাতে দলের অনেকেই ক্ষুব্ধ। দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে শুভেন্দুর দ্বন্দ্বের কথা সকলেরই জানা। আবার সুকান্ত ও দিলীপের মধ্যে বহুদিন ধরেই ঠান্ডা লড়াই চলছে। বিধানসভা নির্বাচনে শোচনীয় হারের পর বিজেপির বহু চেনা নেতা-কর্মী বসে গিয়েছেন। সম্প্রতি রাজারহাটের বৈদিক ভিলেজে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপস্থিতিতে বিজেপির যে তিন দিনের চিন্তন বৈঠক হয়েছে সেখানে হাতে হাত মিলিয়ে সবাইকে কাজ করার বার্তা দেওয়া হয়েছে। সংগঠন যাতে শক্তিশালী করা যায় সেই লক্ষ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভুলে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু তাতে কতটা সাড়া দিয়েছেন দলের সর্বস্তরের নেতারা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে শুভেন্দু নজর দিয়েছেন সেই সমস্ত অঞ্চলকে যেখানে এত কিছুর পরেও বিজেপির একটা বলার মতো সংগঠন রয়ে গিয়েছে। তাঁর নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন অঞ্চলের পাশাপাশি বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন বিধানসভা ক্ষেত্রকে বেছে নিয়েছেন শুভেন্দু। কারণ গত বিধানসভা নির্বাচনে এই জেলাগুলি থেকেই বিজেপি তাদের সিংহভাগ বিধায়ককে পেয়েছে। সূত্রের খবর, কলকাতা বা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মতো জেলা যেখানে বিজেপির কোনও বিধায়ক নেই বা জনসমর্থন বেশ কম, সেখান থেকে কত লোক নবান্ন অভিযানে জড়ো করা যেতে পারে তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছে বিজেপি। অথচ নবান্নের সবচেয়ে কাছে থাকা অন্যতম দুটি জেলা হল কলকাতা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা। তাই এই দুটি জেলার পাশাপাশি হাওড়া এবং উত্তর চব্বিশ পরগনা থেকে বেশি লোক না আনতে পারলে অভিযান কতটা সফল হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। স্বাভাবিকভাবেই এই সমস্ত বিষয় ভাবাচ্ছে শুভেন্দুকে। সেই মতো পরিকল্পনা করছেন তিনি। উল্লেখ্য শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি, গরু পাচার, কয়লা পাচার কাণ্ড নিয়ে পথে নেমে রাজ্য রাজনীতিতে যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে সিপিএম। সেই জায়গা থেকে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি তৃণমূল বিরোধী আন্দোলনের মূল রাশ নিজেদের হাতে ধরে রাখতে যে মরিয়া হয়ে উঠেছে তা স্পষ্ট। আর সেই সূত্রেই নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে তারা। এই অবস্থায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মিটিয়ে নবান্ন অভিযান কতটা সফল হয় এখন সেটাই দেখার।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>