নিজস্ব প্রতিনিধি: বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ শাসক দল। রাজ্যে দুর্নীতির ঘটনায় তদন্তে আরও গতি বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। যে ঘটনায় তৃণমূল কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে। এই অবস্থায় পঞ্চায়েত ভোটের আগে জনসংযোগ বাড়ানোর উপর জোর দিল তৃণমূল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বিভিন্ন জেলায় গিয়ে তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব জনসংযোগ করবেন। কোন নেতা কোন জেলায় যাবেন, কখন যাবেন সেই অনুযায়ী রুটিন তৈরি করা হচ্ছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, পুজোর পর থেকেই নিয়মিত জেলায় জেলায় গিয়ে ছোট বড় সভা করবেন রাজ্য নেতারা। এভাবেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ আরও বাড়াতে চায় শাসক দল। রাজ্য নেতাদের পাশাপাশি জেলা নেতৃত্ব একই ভাবে এই কর্মসূচিতে ধাপে ধাপে সামিল হবেন। জানা গিয়েছে নির্দিষ্ট বিধানসভা বা লোকসভা কেন্দ্র বিচার না করে সাংগঠনিক এলাকা ধরে রাজ্য নেতৃত্বকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী জেলায় জেলায় গিয়ে সভা করবেন তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব।
কিছুদিন আগেই রাজ্যের প্রত্যেকটি ব্লকে তৃণমূল সংগঠনের খোলনলচে বদলে দেওয়া হয়েছে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে। সেখানে বহু রদবদল করা হয়েছে। যা নিয়ে বহু জায়গায় তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে তৃণমূল নেতাদের মধ্যে। এমনকী নন্দীগ্রামেও বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে। কার্যক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে ব্লক স্তরে বহু নতুন মুখ তৃণমূলের বিভিন্ন পদে এসেছেন। স্বাভাবিকভাবেই শীর্ষ নেতৃত্ব আশঙ্কা করছেন এর ফলে বহু অঞ্চলে জনসংযোগে প্রভাব পড়তে পারে। সেই জায়গা থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কোনও ভাবেই যাতে জমি হাতছাড়া না হয় সেই লক্ষ্যে উঠেপড়ে লেগেছে তৃণমূল।
অভিষেক কিছুদিন আগেই বলেছেন সুষ্ঠুভাবে পঞ্চায়েত ভোট আয়োজন করতে হবে। কোথাও যাতে পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে হিংসা না ছাড়ায় সেই বার্তা দিয়েছেন তিনি। যদিও পঞ্চায়েত নির্বাচন কতটা শান্তিপূর্ণ হবে সেই বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে বিরোধীদের মধ্যে। কিন্তু তৃণমূলের দাবি নির্বাচন পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ হবে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে রাজ্যের প্রত্যেকটি জেলা পরিষদ তৃণমূল দখল করবে, এমনটাই দাবি করছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে সেই লক্ষ্যে সফল হতে গেলে চাই নিবিড় জনসংযোগ। আর সেটা মাথায় রেখেই এবার পুজোর পর জেলায় জেলায় জনসংযোগ কর্মসূচিতে বেরিয়ে পড়বেন তৃণমূলের রাজ্য নেতারা। যদিও তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, সারা বছরই দলের জনসংযোগ কর্মসূচি চলে। এটা তাঁদের কাছে নতুন কিছু নয়। সাধারণ মানুষের সঙ্গে তৃণমূলের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, এমনটাই দাবি করছে দল।
বিরোধীদের অভিযোগ তৃণমূলের মদতেই রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির পাশাপাশি কয়লা পাচার, গরু পাচার হয়েছে। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডলের মতো শীর্ষ স্তরের নেতা। যে ঘটনায় প্রবল অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে তৃণমূল। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ফের নবান্ন দখল করার পরেও এই সমস্ত ঘটনায় ‘ফেস লস’ হয়েছে তৃণমূলের। এরপরই বিরোধীরা নতুন করে জমি দখল করতে তেড়েফুঁড়ে ময়দানে নেমেছে। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনে কি ফলাফল হয় সেটা নিয়ে রাজনৈতিক মহলের কৌতূহল তুঙ্গে। এই অবস্থায় সমস্ত জেলা পরিষদ ধরে রাখতে জনসংযোগকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে চায় শাসক দল। সেই লক্ষ্যেই জেলায় জেলায় রাজ্য নেতৃত্বের সফর শুরু হবে পুজোর পরেই।