নিজস্ব প্রতিনিধি: পঞ্চায়েত নির্বাচনের খুব বেশি দেরি নেই, এই ইঙ্গিত একাধিক বার দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই জেলা সফরে গিয়ে সবাইকে দ্রুত কাজ শেষের কথা বলেছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। শীঘ্রই আসন পুনর্বিন্যস এবং সংরক্ষণের তালিকা কমিশন প্রকাশ করতে পারে বলে খবর। একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগে কমিশন আসন পুনর্বিন্যাসের কাজ করে, সেটাই দস্তুর। এর পাশাপাশি সংরক্ষিত আসনের তালিকাও প্রকাশ করা হয়ে থাকে। সূত্রের খবর, রাজ্যের ২২টি জেলার আসন পুনর্বিন্যাসের পাশাপাশি সংরক্ষণের তালিকা প্রকাশ করা হবে আগামী ১৯ অক্টোবর। আর তারপরেই যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ডঙ্কা বেজে যাবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, তালিকা প্রকাশের পর তা নিয়ে কারও কোনও আপত্তি থাকলে সেগুলি অভিযোগ আকারে ১৫ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে কমিশনের কাছে জানাতে হবে। সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করবে কমিশন। উল্লেখ্য দুর্গাপুজোর আগে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন আগামী বছরের শুরুতেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে। আর সেই পথেই হাঁটতে চলেছে কমিশন। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে রাজ্য নির্বাচনের কমিশনের তৎপরতা বেড়েছে।
প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল আগেই জানিয়েছে উৎসবের মরশুম শেষ হলেই তারা পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে ময়দানে নামবে। তবে তার আগেই রণকৌশল তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে তারা। ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের মতো করে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। প্রত্যেকটি জেলায় বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে নতুন করে জনসংযোগ শুরু করেছে শাসক দল তৃণমূল। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের সুফলের কথা বলছেন জেলা তথা রাজ্যস্তরের নেতা-নেত্রীরা। বসে নেই বিরোধীরাও। বাম এবং বিজেপি নিজেদের মতো করে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে মাথায় রেখে জনসংযোগ শুরু করেছে। কালীপুজোর পর প্রত্যেকটি জেলায় গিয়ে বামেরা টানা রাজনৈতিক কর্মসূচি চালিয়ে যাবে বলে খবর। একই ভাবে বিজেপি এবং কংগ্রেসও জেলায় জেলায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে সামিল হবে। উল্লেখ্য শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডের পাশাপাশি কয়লা পাচার, গরু পাচার মামলার জেরে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচন শাসক দলের কাছে অগ্নিপরীক্ষা হতে চলেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এর আগে বিধানসভা, লোকসভার উপনির্বাচন ও পুরসভার ভোটগুলিতে বিরোধীদের ধুয়েমুছে সাফ করে দিয়েছে তৃণমূল। সেই জায়গা থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া বিরোধীরা। আর বিরোধীরা বারবার জোরের সঙ্গে জানাচ্ছে এবার তৃণমূলের সঙ্গে তারা সমানে পাল্লা দেবে। উল্লেখ্য গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের অধিকাংশ জায়গায় সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারেননি বলে অভিযোগ। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ব্যাপক হারে রিগিং, সন্ত্রাসের অভিযোগ ওঠে। সবচেয়ে বড় কথা হাজার হাজার আসনে নির্বাচন ছাড়াই শাসক দলের প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। তাই বিরোধীদের দাবি এবার তারা তৃণমূলের সঙ্গে সমানে টক্কর দেবে। কোনও অবস্থাতেই শাসক দলকে ফাঁকা মাঠ ছেড়ে দিতে রাজি নয় তারা। আসলে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির পাশাপাশি কয়লা পাচার, গরু পাচার কাণ্ড নিয়ে শাসক দলের নেতা-কর্মীরা এমনিতেই কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছেন। সেই জায়গা থেকে বিরোধীরা তার সুযোগ নিতে চাইছে। বিরোধীরা এখন থেকেই প্রতিজ্ঞা করেছে যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রত্যেকটি বুথে তারা এজেন্ট দেবে। অর্থাৎ এটা স্পষ্ট তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সলতে পাকানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে তারা। বিরোধীরা ভাল করেই জানে বুথস্তরে শক্তি বাড়াতে না পারলে সাংগঠনিক ভাবে তৃণমূলের মোকাবিলা করা যাবে না। সেই লক্ষ্যে কালীপুজোর পর থেকেই পঞ্চায়েত নির্বাচনকে পাখির চোখ করে মাঠে নামতে চলেছে বাম-বিজেপি-কংগ্রেস। রাজনৈতিক মহল মনে করছে এবারের পঞ্চায়েতে ‘কাঁটে কা টক্কর হবে’। তাই আগামী বছরের গোড়ার দিকে পঞ্চায়েত নির্বাচনই যে প্রধান আলোচিত বিষয়বস্তু হতে চলেছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই।