নিজস্ব প্রতিনিধি: ২৪ বছর পর গান্ধী পরিবারের বাইরে কেউ কংগ্রেসের সভাপতি হলেন। সেখানে সোনিয়া গান্ধীর আশীর্বাদ ধন্য মল্লিকার্জুন খাড়গেই যে জিতবেন সেটা সকলেরই জানা ছিল। আর প্রত্যাশামতোই বিপুল ভোটে জিতে কংগ্রেসের নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ৭৮৯৭। প্রতিদ্বন্দ্বী শশী থারুর পেয়েছেন ১০৭২টি ভোট। তবে সবচেয়ে চর্চিত বিষয় হল এদিন চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা হওয়ার আগেই রাহুল গান্ধী জানিয়ে দেন নতুন সভাপতি নির্বাচিত হতে চলেছেন খাড়গেই। যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। থারুর শিবিরের পক্ষ থেকে ভোটে কারচুপির অভিযোগ এবং উত্তরপ্রদেশের ভোট বাতিলের দাবি নিয়ে একাধিক বার কংগ্রেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন পরিচালকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কোনও সদর্থক জবাব মেলেনি বলে অভিযোগ।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে খাতায়-কলমে গান্ধী পরিবারের বাইরে কেউ কংগ্রেস সভাপতি হলেও, রিমোট কন্ট্রোল কার হাতে থাকবে? প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে গান্ধী পরিবার চালনা করতেন বলে সকলেই মনে করেন। তিনি সোনিয়া গান্ধীর হাতে ‘পাপেট প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে থেকে কাজ করতেন বলে বিরোধীরা এখনও অভিযোগ করে থাকেন। তাই খাড়গের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা দেখা যাবে বলে সবার মত। তিনি কার্যত ‘পাপেট’ সভাপতি হলেন বলেই ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে। এই পরিস্থিতিতে খাড়গের সামনে এখন সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ গুজরাট এবং হিমাচল প্রদেশের নির্বাচন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যে দলীয় কোন্দল সামাল দিয়ে দলকে এক সূত্রে বেঁধে রাখাও তাঁর প্রধান দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এর পাশাপাশি বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে আগামী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধী ঐক্য মঞ্চ তৈরি করাকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে তাঁকে। ১৩৬ বছরের দীর্ঘ ইতিহাসে কংগ্রেসে আজ পর্যন্ত ৪১ জন সভাপতি হয়েছেন। মল্লিকার্জুন খাড়গে তাঁদের মধ্যে দ্বিতীয় দলিত নেতা হিসেবে দলের সর্বোচ্চ পদে আসীন হলেন। এর আগে ২০০০ সালে শেষবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল কংগ্রেস সভাপতি পদের জন্য। সেবার জিতেন্দ্র প্রসাদকে হারিয়ে সভাপতি হয়েছিলেন সোনিয়া গান্ধী। কিন্তু সেবারের আর এবারের নির্বাচনে পার্থক্য হল গান্ধী পরিবারের অনুপস্থিতি। সোনিয়া গান্ধীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা জিতেন্দ্র পেয়েছিলেন মাত্র ৯৪টি ভোট। সেই জায়গা থেকে এবার শশী থারুরের ভোটপ্রাপ্তি কিছুটা বেশি হয়েছে।
বছর দেড়েক পরে লোকসভা নির্বাচন। দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতৃত্বে আঞ্চলিক দলগুলি জোট বেঁধে কতটা বিজেপিকে লড়াই দিতে পারবে, সে বিষয়টি নিয়ে চর্চা অব্যাহত। আর সেই সূত্রে প্রথমেই উঠে আসছে তৃণমূল কংগ্রেসের নাম। পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল বর্তমানে কংগ্রেসকে বড় শক্তি হিসেবেই মানতে চায় না। তাদের নেতৃত্বে লড়াই করা তো দূরের কথা, কংগ্রেস বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দেওয়ার সামান্যতম ক্ষমতা রাখে না বলেই তৃণমূলের মত। যদিও কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার বলেছেন তৃণমূল-সহ বিভিন্ন রাজ্যের অ-বিজেপি দলগুলিকে নিয়ে সমন্বয় সাধন করে আগামী লোকসভা নির্বাচনে আগে এগোতে হবে। সেই কাজ যে নয়া কংগ্রেস সভাপতি খাড়গেকেই করতে হবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ব্যাপারে তিনি কতটা সফল হবেন সেটা সময়ই বলবে। তাই এটা বলা যেতেই পারে রীতিমতো কাঁটার মুকুট মাথায় নিয়েছেন এই প্রবীণ কংগ্রেস নেতা। সফল হলে সেই কৃতিত্ব নেবে গান্ধী পরিবার। আর ব্যর্থ হলে দায় পুরোপুরি তাঁর কাঁধে এসে পড়বে। তাই সব জেনে বুঝেই খাড়গে ‘পাপেট সভাপতি’ হয়েছেন বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।