দেড় মাসের মধ্যেই পদত্যাগ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর, এবার কি গদি পাবেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত?

দেড় মাসের মধ্যেই পদত্যাগ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর, এবার কি গদি পাবেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত?

নিজস্ব প্রতিনিধি: বেশ কিছুদিন ধরেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করা নিয়ে জল্পনা চলছিল। অবশেষে সেটাই সত্যি হল। বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করলেন লিজ ট্রাস। ক্ষমতায় আসার দেড় মাসের মধ্যেই পদত্যাগ করতে হল তাঁকে। এদিন কনজারভেটিভ পার্টির নীতি নির্ধারণী কমিটির প্রধানের সঙ্গে নিজের সরকারি দফতরে বৈঠকে বসেছিলেন তিনি। সূত্রের খবর গদি বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। উল্লেখ্য বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়ার পর দলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন লিজ ট্রাস। সেই সময় তিনি ব্যাপক কর ছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যার প্রভাব পড়ে অর্থনীতিতে। পরে বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয় ব্রিটেনবাসী। তখন থেকেই মসনদ ছেড়ে দেওয়া নিয়ে তাঁর উপর প্রবল চাপ তৈরি হয়। এবার ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফের বরিস জনসন ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনকের নাম নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে।

ট্রাসের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও শেষমেশ হার স্বীকার করতে হয়েছিল ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনককে। বুধবারের একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে ইতিহাস সৃষ্টি করে আগামী দিনে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন ঋষি সুনক। এর পাশাপাশি লিজ ট্রাসকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য ব্রিটেনের মানুষ আফসোস করছেন বলেও সেই সমীক্ষায় উঠে এসেছে। ‘ইউগভ’ নামে সংস্থা এ বিষয়ে সমীক্ষা চালিয়েছিল। তাতে দেখা যাচ্ছে, এখনই কনজারভেটিভ পার্টির অন্দরে নির্বাচন হলে অনায়াসে জিতবেন ঋষি। অন্তত ৫৫ শতাংশ ভোট পাবেন তিনি। হঠাৎই কেন দেশবাসীর ক্ষোভের মুখে ধরে পড়েছেন ট্রাস? আসলে ব্রিটেনের আর্থিক দুরবস্থার জন্য ট্রাসের ভুল নীতিই দায়ী বলে সবাই মনে করছেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচনের সময় প্রচার করতে গিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন দেশবাসীর উপর থেকে করের বোঝা কমিয়ে নেওয়া তাঁর প্রধান লক্ষ্য। এরপর মসনদে আসীন হয়েই তিনি কর্পোরেট করের উপরে ৪৫ শতাংশ ছাড়ের কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু সেই নির্বাচনে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ঋষি সুনক প্রচারে নেমে একবারের জন্যও কর কমানোর কথা বলেননি। উল্টে তিনি বলেছিলেন কর ছাড়ের ঘোষণা অলীক স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দেড় মাসের মধ্যেই বাস্তব পরিস্থিতি টের পেয়েছেন ব্রিটেনবাসী। সেই কারণেই কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যরা চাইছেন এবার দক্ষ ব্যক্তির হাতে দেশের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হোক। আর পরিস্থিতি অনুধাবন করে গত মঙ্গলবার দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছেন ট্রাস। তবে তাতেও দেশের মনোভাব বদলায়নি। তাই শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন লিজ ট্রাস।

একাধিক সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, বরিস জনসনও ফের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। সেক্ষেত্রে তিনি পিছনে ফেলে দিতে পারেন ঋষিকে। উল্লেখ্য পার্টিগেট-সহ নানা অভিযোগের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন বরিস জনসন। তার আগেই পদত্যাগ করছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনক। ওয়াকিবহাল মহলের মতে ঋষি পদত্যাগ করেছিলেন বলেই বরিস জনসন বিপাকে পড়েছিলেন। তাই কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যদের সমর্থন রয়েছে জনসনের পক্ষে। এই পরিস্থিতিতে আগামী সপ্তাহে ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্বাচন হতে পারে। বিরোধী দলগুলি সাধারণ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রী ইস্তফা দেওয়ার পরেই শেয়ারবাজারে পাউন্ডের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এর আগে অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ারটেঙ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যান পদত্যাগ করেছিলেন। তাতে আরও চাপে পড়ে গিয়েছিলেন ট্রাস। এবার ব্রিটেনের হাল নতুন করে কে ধরেন তারই অপেক্ষা।

তবে লিজ ট্রাসের এই পদত্যাগ কিছু প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেল। বিভিন্ন সময় ভারতে বা দেশের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মন্ত্রী-আমলাদের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ ওঠে। তাঁদের পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হন বিরোধীরা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে পদত্যাগ করা তো দূরের কথা, নিজেদের করা ভুলগুলিকে মানতে পর্যন্ত চান না তাঁরা। নিজেদের পক্ষে হাজারো সাফাই দিতে দেখা যায় তাঁদের। সেই জায়গা থেকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নিঃসন্দেহে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − 2 =