চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন কাঁপিয়ে দিচ্ছে নবান্ন? নজিরবিহীন আন্দোলনে বাড়ছে ভয়?

চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন কাঁপিয়ে দিচ্ছে নবান্ন? নজিরবিহীন আন্দোলনে বাড়ছে ভয়?

নিজস্ব প্রতিনিধি: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যুতে রাজ্য সরকার যে কতটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি একাধিক মন্ত্রী তথা দলীয় নেতাদের বক্তব্য ও ব্যবহারেই স্পষ্ট। অনেকেই  বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না, আবার অনেকেই এ প্রসঙ্গ সামনে আনলে মেজাজ হারাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার নিজেদের সমর্থনে অসাড় যুক্তি খাড়া করার চেষ্টা করছেন। তাই এটা স্পষ্ট তৃণমূল তথা রাজ্য সরকার চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনকে যথেষ্ট ভয় পাচ্ছে। আর সাম্প্রতিককালে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে সেটাই পরিষ্কার হয়েছে।

সদ্য উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতায় ফিরে টেট আন্দোলন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছে যে, কেউ ন্যায্য আন্দোলন করলে তিনি আন্দোলনকারীদের পছন্দ করবেন। আর বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। কোর্টের অর্ডারকে তাঁরা সম্মান করেন। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন কারও চাকরি যাক সেটা তাঁরা চান না। সকলের চাকরি যাতে থাকে সেটাই তিনি চান। এরপর তিনি বলেছেন এই বিষয়গুলি নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না। যা বলার সরকারের তরফ থেকে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলবেন। তাঁকেই এ ব্যাপারে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, এটা যেহেতু তিনি দেখেন না, তাই শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে যা বলার বলবেন। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় হতবাক সবাই। যেখানে খুঁটিনাটি সমস্ত বিষয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজে মুখ খুলে থাকেন, সেখানে চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার জন্য কেন তিনি শিক্ষামন্ত্রীকে এগিয়ে দিচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে ওয়াকিবহাল মহল। এটা যে একেবারেই মমতা সুলভ ব্যাপার নয়, সেটা সকলেই বুঝতে পারছেন। আসলে এই বিতর্ক থেকে মমতা যে দূরে সরে থাকতে চাইছেন, সেটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।

সিপিএম তথা বামফ্রন্টের সাড়ে তিন দশকের শাসনকালে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলনের কথা শুধু রাজ্য বা দেশ নয়, বিদেশও পৌঁছে গিয়েছিল। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের আন্দোলনের কথা বিশ্বের বহু দেশে পৌঁছে যায়। দিনের পর দিন রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে দেখা যেত তাঁকে। পুলিশ ও সিপিএম ক্যাডারদের হাতে মার পর্যন্ত খেয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ সব ঘটনা সকলেরই জানা। ১৯৯০ সালের ১৬ আগস্ট কংগ্রেসের ডাকে কলকাতা বনধের দিন যেভাবে হাজরা মোড়ে মমতাকে মেরেছিল সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা, সেই স্মৃতি আজও টাটকা। তাই ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে যিনি আন্দোলনের মাধ্যমে উঠে এসেছেন সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন কেন আন্দোলনকারীদের প্রতি নরম অবস্থান নিচ্ছেন না? কেন আন্দোলনকারীদের বক্তব্যকে সহানুভূতির চোখে বিবেচনা করা হচ্ছে না? তবে কি শাসকের চেয়ারে বসলেই সবার মনটাই দ্রুত বদলে যায়? অর্থাৎ সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে! পুলিশ যেভাবে বলপূর্বক আন্দোলনকারীদের রাতের অন্ধকারে সরিয়ে দিয়েছে, আর তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে সিপিএমের যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়-সহ অন্যান্যদের যেভাবে পুলিশ চ্যাংদোলা করে নিয়ে গিয়েছে, তা অনেককেই বিস্মিত করেছে। বিরোধীদের দাবি মুখ্যমন্ত্রী আন্দোলনকে ভয় পাচ্ছেন। সব মিলিয়ে যত দিন যাচ্ছে ততই নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যুতে রাজ্য সরকারের মুখ পুড়ছে বলে সবার মত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − 14 =