২০০ বছর ভারত শাসন করা ব্রিটেনের মাথায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত, এবার কি ভারতে ফিরবে কোহিনুর?

২০০ বছর ভারত শাসন করা ব্রিটেনের মাথায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত, এবার কি ভারতে ফিরবে কোহিনুর?

নিজস্ব প্রতিনিধি: সমস্ত জল্পনা সত্যি করে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর কুরসিতে বসতে চলেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনক। ব্রিটেনের কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন তিনি। ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির মেয়ে অক্ষতা মূর্তিকে বিয়ে করেছেন ঋষি। সেই সূত্রে তিনি  ব্রিটেনের জামাই। এই প্রথম একজন অ-শ্বেতাঙ্গ ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন।

সোমবার দীপাবলীর সন্ধ্যায় এল সেই সুখবর। ২৮ অক্টোবর তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন। তাঁর পক্ষে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ১৯১ জন এমপি’র সমর্থন রয়েছে। প্রায় ২০০ বছর ভারত শাসন করেছে ব্রিটেন। এবার সেই দেশের মাথায় বসতে চলেছেন এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত। বিষয়টি যে কতটা তাৎপর্যপূর্ণ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে চর্চায় উঠে এসেছে ব্রিটেন থেকে ভারতে কোহিনুর ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গটি। সূত্রের খবর, বহুদিন ধরেই দিল্লি এই দুর্মূল্য হিরেটি দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে নতুন করে তৎপরতা বাড়িয়েছে। বেশ কয়েকবার এ বিষয়ে ব্রিটেনের সঙ্গে কথা হয়েছে ভারতের। তবে কি সুনক ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় সেই বিষয়টি এবার অনেকটা গতি পাবে? সেদিকে চোখ থাকবে ভারতের  পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলের।

সুনকের কাজটা সহজ করে দিয়েছিলেন ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। কারণ শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত নেন বরিস। তার আগে দেশের অর্থনীতির উন্নতি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন ঋষি। তখনই ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী পদে ভারতীয় বংশোদ্ভূতের বসা একপ্রকার নিশ্চিত বলেই মনে করা হচ্ছিল। আজ পর্যন্ত ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কোনও অ-শ্বেতাঙ্গকে দেখা যায়নি। সেই জায়গা থেকে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন সুনক। রবিবার গভীর রাতে বরিস জনসন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন তাঁর কাছে ছিল। কিন্তু তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা চাননি। বরিসের কথায়, যিনিই প্রধানমন্ত্রী হোন না কেন তাঁকে তিনি সমর্থন করবেন। এছাড়া ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে ঋষির পাশাপাশি ছিলেন পেনি মরড্যান্ট। তবে তাঁর দিকে এমপি’দের সমর্থন খুবই থাকায় তিনি টুইট করে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেন। এরপর ‘হাউস অফ কমন্স’-এ টোরি অর্থাৎ কনজারভেটিভ পার্টির ৩৫৭ জন এমপি’র সিংহভাগ সুনকের পক্ষে ভোটদান করেন। ব্রিটেনের নিয়ম অনুযায়ী অন্তত পক্ষে একশো জন এমপি’র সমর্থন না পেলে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যায় না। অর্থাৎ পেনি সরে দাঁড়াতেই ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হয়ে যান ঋষি সুনক। ব্রিটেনের সাউদাম্পটন শহরে জন্ম হয়  তাঁর। উইনচেস্টারের পর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। এর আগে সে দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বও সামলেছেন সুনক।

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দেড় মাসের মধ্যেই পদত্যাগ করেছেন লিজ ট্রাস। যে নীতি নিয়ে তিনি এগোচ্ছিলেন তাতে জোর ধাক্কা খায় ব্রিটেনের অর্থনীতি। তিনি যেভাবে ব্যাপক কর ছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তার ব্যাপক প্রভাব পড়ে অর্থনীতিতে। এরপর সম্মিলিত চাপের মুখে পড়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন। তখন একটি সমীক্ষক সংস্থা জানায় ইতিহাস সৃষ্টি করে আগামী দিনে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনক। অন্তত ৫৫ শতাংশ ভোট তিনি পাবেন বলে সেই সমীক্ষক সংস্থা দাবি করেছিল। আর শেষ পর্যন্ত সেটাই সত্যি হল। ইতিহাস সৃষ্টি করলেন ঋষি সুনক। সুনককে ধরে গত সাত মাসের মধ্যে তিন জন প্রধানমন্ত্রী পাচ্ছে ব্রিটেন। সব মিলিয়ে ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যেভাবে ভারতের সম্পর্কে জড়িয়ে রয়েছে, তাতে আগামী দিনে দুই দেশের সম্পর্ক যে আরও নিবিড় হবে সে কথা বলাই যায়। আর সেই সূত্রেই উঠে আসছে কোহিনুর হিরে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গটি। আগামী দিনে বিষয়টি কোন দিকে মোড় নেয় সেদিকেই চোখ থাকবে ওয়াকিবহাল মহলের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 4 =